আপডেট-
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বদলে গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই জ্বরের জীবাণু আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস ৪ ধরনের। এতদিন ভাইরাস ওয়ান দিয়ে আক্রান্ত হতো মানুষ। এখন আক্রান্ত হচ্ছে ভাইরাস টু এবং থ্রি দিয়ে। এই ধরনের ভাইরাস মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়।
এবছর হেমরেজিক বা ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। এ জ্বর হলে এক দুদিনেই আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছেন। আগে রক্তে প্লাটিলেট কমে যাওয়াকে বিপজ্জনক ধরা হতো, এবার প্লাজমা লিকেজ বা রক্তনালী থেকে পানি সরে যাওয়াকে বিপজ্জনক অবস্থা বলছেন চিকিৎসকরা।
এজন্য, কারো জ্বর হলে তাকে প্রচুর পরিমাণ পানি, তরল খাবার খাওয়াতে হবে। এছাড়া, জ্বর হলেই পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, এটা ডেঙ্গু কিনা।
আর কোনভাবেই প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ব্যাথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না, এমনকি হৃদরোগীরা জ্বর হলে এসপিরিনও খেতে পারবেন না। চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধে রোগী মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বাসার চারিদিকে কোন জায়গায় পানি জমে আছে কিনা লক্ষ্য রাখুন..
অনেকই এখন বারান্দায় বা ছাদে পাত্রে পানি জমিয়ে ওয়াটার লিলি অথবা মানি প্ল্যান্ট এর গাছ লাগাচ্ছেন,বর্ষাকালে সেদিকে একটু সতর্ক দৃষ্টি দিন। সেই পানিতে ছোট ছোট মাছ ছেড়ে দিলে মশার লার্ভা আর বড় হওয়ার সুযোগ পাবে না..
যদি সিটি কর্পোরেশন থেকে ব্যাবস্থা না নেয়, এলাকার সবাই মিলে সম্ভব হলে বাড়ির আশে পাশে মশার ঔষধ ছিটানোর ব্যাবস্থা করুন..দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় মশারী ব্যাবহার করুন।
গত বছর আমার এক কলিগের বোনের ১৪ বছরের হাসিখুশি প্রানোচ্ছল একটি ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে সেন্ট্রাল হসপিটালে মারা গেলো! এই ঘটনা আমার মনে দারুন রেখাপাত করেছিলো। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলেটি তার কিছুদিন আগেই তাদের নতুন প্রাসাদোপম বাসাতে উঠেছিলো। যেই রবিবার সে মারা গেলো তার আগের রবিবারেই তার হাসিখুশি কে,এফ,সিতে তোলা ছবিটি আমি কত বার যে দেখেছি আর অবাক হয়েছি! এত সহজেই এই ভয়াবহ রোগটি একটি মানুষের অমূল্য জীবন এইভাবে অনায়াসে নিয়ে নিতে পারে! এতই অসহায় আমরা এই রোগটির কাছে? প্রশ্নটি হয়ত অনেকের মাথাতেই আসে কিন্তু বেশিক্ষন তা ধরে রাখে না তারা আর তাই এই ডেঙ্গু চুপিসারে তার ভয়াল থাবা লাগিয়ে বসে। ফলশ্রুতিতে ডেঙ্গুর মত একটি জ্বরে মৃত্যুর হার বেড়েই চলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষায় ডেঙ্গু একটি অবহেলিত বা নেগলেগটেড ডিজিজ। অধিকাংশ ডেঙ্গু জ্বরেই প্রথম দিকে মানুষ সাধারণ জ্বর ভেবে বসে তার কারণে ডেঙ্গু ভেতরে ভেতরে যা ক্ষতি করার করে ফেলে। ডেঙ্গুর মত আরেকটি রোগও আছে চিকুনগনিয়া। তবে চিকুনগুনিয়ার ধর্ম চিকেন পক্সের মতো এটি দ্বিতীয়বার একবার আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে ফিরে আসে না। কিন্তু ডেঙ্গু ফিরে ফিরে আসে বার বার এবং দ্বিতীয়বার সে আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে আসে। কাজেই ডেঙ্গু নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকবার কোনো কারণ নেই। মে থেকে সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু বা এডিস মশার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে তাই এই সময়ে জ্বর জারি বাঁধিয়ে বসলেই সেদিকে রাখুন সাবধানতার চোখ।
ডেঙ্গুর চিহ্নিত ভাইরাস চারটি-
ডেন-১
ডেন-২
ডেন-৩
ডেন-৪
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য থেকে জানা গেছে,
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এই ভাইরাসগুলির যে কোনো একটাতে একবার আক্রান্ত হলে তার শরীরে ওই বিশেষ ডেঙ্গুর প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে। এটি আশার কথা কিন্তু সে অন্য প্রকৃতির ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে আন্তঃপ্রতিরোধ বা ক্রস ইমিউনিটি (অর্থাৎ এক প্রকৃতির ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সব ধরনের ডেঙ্গু থেকে নিস্তার পাওয়া) প্রাপ্তির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। দু–একটি ক্ষেত্রে ঘটলেও তা নেহাত স্বল্পমেয়াদি। এবং সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হলো, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত ব্যক্তিরা আরও ভয়ানক পরিণতির শিকার হতে পারে।
গত বছর হতে বাংলাদেশে নাকি ডেন–৩ ডেঙ্গুর প্রভাব বেড়েছে যা আগের বছরগুলোয় দেখা যায়নি। এই জাতের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া হার্ট, কিডনিসহ শরীরের অভ্যন্তরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে গত ১৬ বছরের মধ্যে ২০১৮ তে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি ছিলো। ডেঙ্গুর সময়কাল মূলত মে থেকে সেপ্টেম্বর। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সরকারি হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছিলো মোট ৬ হাজার ৪৭৯ জন, মারা গিয়েছেন ১৬ জন। এ ছাড়াও অন্যান্য বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিলো। দুঃখের বিষয় গত বছরের সরকারী হাসপাতাল হিসাবে সেই ১৬ জন মৃতের মাঝে ৮ জনেরই বয়স ছিলো ১২ বছরের নিচে।
গত বছর নিউজপেপারগুলোতে দেখা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হবার খবর। এদের প্রায় সবাই অচেতন অবস্থায় বা শকে চলে যাওয়া রোগী ছিলো। তাদের রক্তের চাপও মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় রক্তের প্লাজমা ক্ষরণ শুরু হয়েছিলো। আমার এক নিকটাত্মীয়কে দেখেছি গত বছর। তার অবস্থা ভয়াবহ ছিলো। কিন্তু আমি তখনও এই রোগের ভয়াবহতা বুঝিনি। তবে তার ভয়াবহ অবস্থা দেখে ও পরবর্তীতে কলিগের বোনের ছেলের মৃত্যু দেখে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কাজেই শকে যাবার আগেই সাবধানতা প্রয়োজন।
সাবধানতার জন্য সবার আগে জানতে হবে ডেঙ্গু জ্বরের সিম্পটমগুলি -
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার চার-পাঁচ দিন পর থেকেই রোগীর শরীরে প্লাটিলেট কমতে থাকে। একটা পর্যায়ের পরে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে প্লাজমা ক্ষরণ হতে শুরু হয়। প্লাটিলেটের মাত্রা প্রতি মিলিগ্রাম রক্তে ২০,০০০-এ এসে ঠেকলে রোগীকে বাইরে থেকে প্লাটিলেট দিতে হয়। না হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যার বিষয় হলো প্লাটিলেট পাঁচ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। ফলে কোনো রোগীর প্লাটিলেটের প্রয়োজন হলে দাতারও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ঢাকার বাইরে এই সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে।
সিমপটম বা লক্ষণগুলো - ডেঙ্গু জ্বর দু, প্রকার, ক্লাসিকাল ডেঙ্গু জ্বর ও হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর।
ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর- এই জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। অনেক সময় ব্যথা এত তীব্র হয় যে মনে হয় হাঁড় ভেঙে যাচ্ছে। তাই এই জ্বরের আরেক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’।
জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচদিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়। যাকে বলা হয় স্কিন র্যাশ, অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এর দুই বা তিনদিন পর আবার জ্বর আসে। একে ‘বাই ফেজিক ফিভার’ বলে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর- এই অবস্থাটা সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো যে সমস্যাগুলো হয়, সেগুলো হলো :
• শরীরে বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন : চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সাথে, রক্ত বমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে রক্ত পড়তে পারে। মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি হতে পারে।
• এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম- ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াভহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হলো :
• রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।
• নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হওয়া।
• শরীরের হাত-পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়।
• প্রস্রাব কমে যায়।
• হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে।
• এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা-
ভাইরাসজনিত অন্য রোগের মতোই ডেঙ্গু জ্বরের সরাসরি কোনো প্রতিষেধক নেই, নেই কোনো টিকা। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয়দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে। ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের হয়। এক. ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার। দুই. হেমোরেজিক ফিভার।
ডেঙ্গু জ্বর কখন বেশি হয়-
মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, বিশেষ করে গরম এবং বর্ষার সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। শীতকালে সাধারণত এই জ্বর হয় না বললেই চলে। শীতে লার্ভা অবস্থায় এই মশা অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষার শুরুতে সেগুলো থেকে নতুন করে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত মশা বিস্তার লাভ করে।
সাধারণত শহর অঞ্চলে, অভিজাত এলাকায়, বড় বড় দালান কোঠায় এই প্রাদুর্ভাব বেশি, তাই ডেঙ্গু জ্বরও এই এলাকার বাসিন্দাদের বেশি হয়। বস্তিতে বা গ্রামে বসবাসরত লোকজনের ডেঙ্গু কম হয়। ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের হয়। তাই ডেঙ্গু জ্বরও চারবার হতে পারে। তবে যারা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে রোগটি হলে সেটি মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এই জ্বর সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসা যথেষ্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো। যেমন :
• শরীরের যেকোনো অংশে রক্তপাত হলে
• প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে
• শ্বাস কষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে
• প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে
• জন্ডিস দেখা দিলে
• অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে
• প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
কী কী পরীক্ষা করা উচিত?
আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর হলে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার নেই, এতে অযথা অর্থের অপচয় হয়।
• জ্বরের চার থেকে পাঁচদিন পরে সিবিসি এবং প্লাটিলেট করাই যথেষ্ট। এর আগে করলে রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকে এবং অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। প্লাটিলেট কাউন্ট এক লাখের কম হলে ডেঙ্গু ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
• ডেঙ্গু অ্যান্টিবডির পরীক্ষা পাঁচ থেকে ছয়দিনের পর করা যেতে পারে। এই পরীক্ষা রোগ শনাক্তকরণে সাহায্য করলেও রোগের চিকিৎসায় এর কোনো ভূমিকা নেই। এই পরীক্ষা না করলেও কোনো সমস্যা নেই। এতে শুধু শুধু অর্থের অপচয় হয়।
• প্রয়োজনে ব্লাড সুগার, লিভারের পরীক্ষাগুলো যেমন এসজিপিটি, এসজিওটি, এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি করা যাবে।
• চিকিৎসক যদি মনে করেন রোগী ডিআইসি জাতীয় জটিলতায় আক্রান্ত, সে ক্ষেত্রে প্রোথ্রোম্বিন টাইম, এপিটিটি, ডি-ডাইমার ইত্যাদি পরীক্ষা করতে পারেন।
আবারও আসি চিকিৎসায়
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে। যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়। ডেঙ্গু জ্বরটা আসলে গোলমেলে রোগ, সাধারণত লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।
• জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল-জাতীয় ব্যথার ওষুধই যথেষ্ট। সাপোজিটারীও দেওয়া যেতে পারে।
• এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ব্যথার ওষুধ কোনোক্রমেই খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে।
• জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে।
• মাথায় আইস ব্যাগ দেবার পাশাপাশি জ্বর বেশি হলে মাথায় পানি ঢালতে হবে। মোট কথা জ্বর কমিয়ে রাখতে হবে।
• সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে।
• যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
• খেতে না পারলে দরকার হলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা কি করতে পারি? হ্যাঁ আমরাই পারি ঘরে ঘরে এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে -
ডেঙ্গু জ্বরে যেন আর কোনো মৃত্যু না হয় বা ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের উপায়গুলো কি কি তা আমাদের শিক্ষিত সমাজের প্রায় সকলেই জানেন। তবুও কেন যেন আমাদের মাঝে সময়োপোযোগী উদ্যোগের অভাব। আর এ কারনেই এই ভয়াবহ রোগটি আমাদের যেমনই ভোগাচ্ছে তেমনই মৃত্যুর আশঙ্কাও বাড়ছে।
ডেঙ্গুর কারণ- এই রোগটি প্রতিরোধের আগে এই রোগের কারণ বা মাধ্যমটি জানতে হবে। যদিও প্রায় সবাই জানি এটি এডিস মশাবাহিত একটি রোগ। এডিস মশা না থাকলে এই রোগটি আমাদের শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ পেত না। কাজেই মশার বংশ নির্বংশ করাটাই আসল প্রতিরোধ! এখন এই নির্বংশ করার পিছে আমাদের সকলেরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন দরকার। আমরাই পারি এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে একটু সচেতন হলে। হয়তো নিমূর্ল করা সম্ভব হবে না এত তাড়াতাড়ি তবে প্রকোপ কমানো সম্ভব হবে। অবশ্যই হবে। আর আমরাই পারি ঘরে ঘরে এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে -
সবাই এই শয়তানটাকে চিনে রাখুন..... দেখামাত্র শেষ করুন....
১. দু'ধরনের ডেঙ্গু ক্লাসিক্যাল ও হেমোরেজিকের মাঝে হেমোরেজিক জ্বর বেশি ভয়াবহ। এ জ্বরের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে এডিস মশা যাতে কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এটাই প্রথম পদক্ষেপ আমার মতে। তাই-
ক) প্রত্যেকের নিজ নিজ বাড়ির চারপাশে ও বাড়ির ভেতরে মশা নিধন ও পরিচ্ছন্নতা জোরদার করতে হবে। এডিস মশা স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পরিষ্কার রাখতে হবে। ফুলগাছ, টব, টবের নীচের প্লেট এইগুলিতে মশা ডিম পাড়ে। কাজেই এইসব দিকে নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে
প্রতিনিয়ত পানি পরিষ্কার করতে হবে।
এছাড়াও
খ) ঘরে ধূপ, ধুনা কিংবা যে কোনো মশানাশক স্প্রে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর বলে খালি রুমে স্প্রে করে মশা দূর করতে হবে।
গ) অন্তত এই বর্ষাকালীন ডেঙ্গু রোগের সময়টাতে বাচ্চাদের ফুল স্লিভ জামা কিংবা ফুল প্যান্ট পরানো উচিৎ তা যত গরমই পড়ুক না কেনো বলে আমি মনে করি। এছাড়াও মশার কিছু লোশন বা ক্রিম আছে সেসব লাগিয়ে রাখা যেতে পারে।
ঘ) মশা নিধনের জোরালো কিছু ওষুধ রয়েছে কাউরান বাজারের দিকে পাওয়া যায়। সেসব নিয়ে স্প্রেতে করে বাড়ির আশে পাশে ছিটিয়ে দেওয়া দরকার । আমার আশে পাশে প্রতিবেশীদেরকে আমি এমনটা দেখার পরে নিজেই সেটা সংগ্রহ করেছি। এতে মশার প্রোকোপ একদমই কমে যায়। এই গেলো বাড়িতে মশা না কামড়ানোর জন্য ও জন্মবৃদ্ধি হ্রাসের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।
কাজেই-
• বাড়ির আশপাশের ঝোঁপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
• যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে, যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।
• ঘরের বাথরুমে বা কোথাও জমানো পানি পাঁচদিনের বেশি যেন না থাকে। অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের নিচেও যেন পানি জমে না থাকে।
• এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য কোনো সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীরে ভালোভাবে কাপড় ঢেকে বের হতে হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে।
• দিনের বেলায় মশারি টাঙ্গিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।
• বাচ্চাদের যারা স্কুলে যায়, তাদের হাফ প্যান্ট না পরিয়ে ফুল প্যান্ট পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে।
• মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
• ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে করে কোনো মশা কামড়াতে না পারে।
এবার সরকারীভাবে যা প্রয়োজন-
সিটি কর্পোরেশনকে এডিস মশা নিধন এবং এডিসের বংশ বিস্তার রোধের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে।
ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে।
ডেঙ্গু হলে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে রাজধানী ও জেলা-উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আক্রান্তদের সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে ডেঙ্গু আতঙ্ক থেকে জনগণকে রক্ষা করা হবে।
দেশব্যাপী একটা দাতা তথ্য ব্যাংক গড়ে তুলতে হবে। ডেঙ্গু রোগীরা যাতে খুব সহজে প্লাটিলেট পেতে পারেন, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
জ্বরাক্রান্ত ব্যক্তিকে বিনামূল্যে আইজি–৬ পরীক্ষা করে প্রকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ঘোষণা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷
আমি কোনো ডাক্তার নই। আমি নিজে সদা ও সর্বদা নানা রকম আনন্দময় কর্মকান্ড নিয়ে থাকতে পছন্দ করি। তবুও এডিস মশা নামক এই ক্ষুদে প্রানীটি তার ভয়ংকর বাজে অস্তিত্ব নিয়ে আমাদের যে চরম ক্ষতি করে চলেছে তা মেনে নেওয়া অসম্ভব। এই মশা নিধন বা ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমাদেরকে অবশ্য অবশ্য হতে হবে সচেতন। তাই গত বছরের ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে আমি যুগান্তর, বনিকবার্তা এনটিভি অনলাইনের গত বছরের কিছু আর্টিকেল ও নিউজ থেকে তথ্য নিয়ে এই সচেতনটা সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করেছি। মে থেকে সেপ্টেম্বর এই পোস্টের মেয়াদ। এবং আমি যেহেতু ডাক্তার না সেহেতু আমি চাই এই ব্লগে আহমেদ জি এস ভাইয়ার মত অন্যান্য যারা ডক্টর আছে বা ডেঙ্গু সম্পর্কে আরও কিছু জানেন যা আমাদেরকে সহায়তা করতে পারে তারা তাদের মূল্যবান উপদেশ দিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করবেন।
শেষ কথা-
১। যে কোনো উপায়ে মশা থেকে দূরে থাকতে হবে এই মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই-
২। যত দূর সম্ভব ফুল হাতা শার্ট, ফুল প্যান্ট পরতে হবে।
৩। রোজ নিয়ম করে সকাল ও সন্ধ্যায় ঘরের আনাচে কানাচে মশা নিধন অভিযান চালাতে হবে।
৪। ঘরের ভেতরের সাথে সাথে ঘরের বাইরের টব ফুল পাতা, ড্রেইন খান খন্দ সব সময় কড়া নজরে রাখতে হবে সেখানে পানি জমে আছে কিনা দেখবার জন্য। পানিওয়ালা মানিপ্লান্ট বা যে কোনো পানি জমে থাকা প্ল্যন্টসগুলি এই সময়ে সরিয়ে ফেলতে হবে।
৫। বাড়ির আশেপাশের ঝোঁপঝাঁড় গলি ঘুচি পরিষ্কার রাখতে হবে যেন মশা না ডিম পাড়তে পারে।
এইটুকু আমরা নিজেরাই করতে পারি, বাকী পদক্ষেপগুলি যা সরকারী ভাবে বেওয়া উচিৎ সেসবের কথা আমি উপরে বলেছি। যাইহোক যে কোনো মূল্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আমাদেরকেই সামিল হতে হবে।
সকলে সুস্থ্য থাকুক, ভালো থাকুক আর আমার মত আনন্দে থাকুক.....
ছবি- Click This Link
গ্রামীনফোন সাস্থ্য সেবা - কল ৭৮৯
গ্রামীণফোন এবং টেলিনর হেলথ, রবিবার ৫ জুন, ২০১৬ এ বাংলাদেশের গ্রাহকদের জন্য নতুন ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ‘টনিক’ চালু করেছে।
টনিক সদস্যরা চার ধরনের সুবিধা পাবেন: ‘টনিক জীবন’-এর মাধ্যমে টনিক সদস্যরা এসএমএস, ওয়েব ও ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিদিনকার সুস্থজীবন যাপনে ভালো খাওয়া, সক্রিয় থাকা এবং মানসিকভাবে সজীব থাকা নিয়ে বিভিন্ন টিপস ও তথ্য পাবেন।
‘টনিক ডাক্তার’ সদস্যদের সুযোগ করে দিবে সপ্তাহের সাত দিন ২৪ঘণ্টা ফোনের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ডাক্তারের তথ্যবহ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শ পাওয়ার।
‘টনিক ডিসকাউন্ট’ দেশজুড়ে স্বনামধন্য ৫০টিরও বেশি হাসপাতালে, হাসপাতাল ফি-এর ওপর সর্বোচ্চ ৪০শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্টের সুযোগ করে দিবে।
‘টনিক ক্যাশ’-এর মাধ্যমে এর সদস্যরা তিন রাত কিংবা তারও বেশি হাসপাতালে প্রদত্ব বিল থেকে ৫শ’ টাকা পরিশোধ করা হবে।
গ্রামীণফোনের যেকোনো গ্রাহক ইউএসএসডি *৭৮৯# নাম্বারে ডায়াল করে অথবা http://www.mytonic.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে কিংবা ৭৮৯ নাম্বারে কল করার মাধ্যমে বিনাখরচে টনিকের সাথে যুক্ত হতে পারবেন। একজন গ্রাহক শুধু একবার টনিকের সাথে যুক্ত হলেই হবে। পরবর্তী মাসে সদস্যপদ অব্যাহত রাখতে গ্রাহককে অবশ্যই তার গ্রামীণফোন সিম এর মাধ্যমে ফোন কল, এসএমএস অথবা ডাটা প্যাকেজ ব্যবহার করতে হবে। গ্রাহকরা বিনামূল্যে ‘টনিক জীবন’, ‘টনিক ডিসকাউন্ট’ ও ‘টনিক ক্যাশ’ সুবিধা পাবেন। শুধুমাত্র ‘টনিক ডাক্তার’ সেবা নেয়ার জন্য কল দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটের খরচ পড়বে ভ্যাট ও অন্যান্য কর ছাড়া ৫ টাকা।
আমি এইখানে খুব ভালো সেবা পেয়েছি। কারণ সশরীরে ডক্টরের কাছে গিয়ে চিকিৎসা আমার পছন্দের কাজ নয় এ ছাড়াও দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা পেতে এই কল সেন্টার ফাস্ট এইডের মত কাজ করে।
ডেঙ্গু জ্বরে পেয়ারাপাতার গুনাবলী করুণাধারা আপুনির দেওয়া লিঙ্ক থেকে।
কয়েকটি সিটি করপোরেশনের নাম্বার ( নেট থেকে পাওয়া)
Dhaka South City Corporation
02-9563510
Councilor Office, Banasree, Dscc
01713-865666
Ward 12 DSCC Councilor office
01683-551434
Closes soon ⋅ 5PM
Councilor Office, Ward -03, DSCC
01713-865666
ফোন দিলেই বাসায় গিয়ে মশার ওষুধ ছিটাবে ডিএসসিসি
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১:৫৩