খোকাভাই,
আর কখনও লিখবোনা তোমাকে,
জানতে চাইবো না আর কোনোদিন,
কেমন আছো?
শুধু
তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম।
এই ছিলো খোকাভাই ও নিরুপমার শেষ চিঠি। আমি যখন শায়মা নিকে ব্লগে লেখা শুরু করি প্রথম দিককার লেখাগুলিই ছিলো এই খোকাভাইকে নিয়ে। সে সময় অনেকে অনেকদিন আমার কাছে জানতে চেয়েছেন কে এই খোকাভাই ? আমার লেখা যারা পড়েছেন তাদের মজা করে হোক বা সত্যি কৌতুহল থেকেই হোক খোকাভাইকে নিয়ে জানার কিছু ইচ্ছে ছিলো বলেই মনে হয়েছে আমার। অনেকে অনেক কিছু সন্দেহ করেছেন। সে খোকা নামক বিশিষ্ঠ জন থেকে শুরু করে গলির ধারের পাগলা বুড়ো খোকা পর্যন্ত বাদ যায়নি সে সন্দেহ তালিকা থেকে।
যে কোনো ধরনের লেখায় লেখক বা লেখিকার আত্মতৃপ্তি বলে একটা কথা আছে বলে আমি মনে করি। আমি সেই পরম আত্মতৃপ্তিটুকুই অনুভব করেছি খোকাভাই ও নিরুপমাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে। আমি জানি কতখানি বক্ষে ধারন করেছি আমি এ দুটি চরিত্রকে। নিরুপমা আর খোকাভাই এর কথা লিখতে গিয়ে আমি নিজেই রুপান্তরিত হয়েছি খোকাভায়ের সেই নিরুপমায়। নিরুপমার সাথে সাথে আমি চলে গেছি সেই জীর্ণ, পুরোনো, একটু সেকেলে বনেদী বাড়িটাতেই। সেখানেই কাটিয়ে এসেছি আমার শৈশব ও কিশোরীকাল।
কখন যে হয়ে গেছি আমি নিজেরই অজান্তে বেনীদুলানো স্কুল পালানো মেয়েটি ! আর খোকাভাই, বাড়ির অবহেলিত সে ছেলেটিকে পরম মমতায় বুকে টেনে নিয়েছি। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চেয়েছি। দূর করে দিতে চেয়েছি তার সকল কষ্ট ও বেদনা। তবুও আর দশটা বাঙ্গালী কিশোরীর মত পারিনি সমাজ ও পরিবারে রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করতে । অসহায় কিন্তু লক্ষী মেয়েটির মত বাবা মায়ের পছন্দের প্রতিষ্ঠিত পাত্রকেই বরন করে নিয়েছি জীবন সঙ্গী হিসাবে। ঠিক যেমনটা হয় আমাদের এ স্বার্থপর সমাজে। ওদের কষ্টটা সত্যিই যেন মনে প্রাণে অনুভব করেছি। লেখাগুলো যদিও ছিলো আমার কল্পনার মিশেলে আমাদের সমাজেরই আমাদের দেখা কোনো নিরুপমার কথা তবুও আমি জানি এই নিরুপমা এক জীবন্ত চরিত্র যে বেঁচে থাকে শত কোটী বাংলাদেশের মেয়েদের হৃদয়েই।
আমি অসংখ্য অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানাই যারা সেসব লেখা পড়েছেন ও আমাকে সঙ্গ দিয়েছেন আমার কল্পনার সাথী হয়ে। খোকাভাই আর নিরুপমা আমার কবিতার মানুষগুলো আর এসব কবিতারা অনেক অনেকদিন হয়তোবা সারাটাজীবনই জেগে রইবে আমার হৃদয়ে। সেই সাথে আরও অনেক অনেক আবেগ, আধেক কল্পনা এবং আধেক সত্যির মিশেলে আমি লিখে গেছি একের পর এক আমার হৃদয়ের আরও সব কথাবলী নিয়ে এই বইটিতে......
বইয়ের নাম- ইচ্ছেগুলো উড়িয়ে দিলাম প্রজাপতির পাখায়
প্রকাশনী- সব্যসাচী প্রকাশন
স্টল নং- ৫২ লিটলম্যাগ চত্তর, বাংলা একাডেমি, ঢাকা
অমর একুশে গ্রন্থমেলা
বইটিতে আমার লেখা মোট ৮০ টি কবিতা আছে। কবিতাগুলি আমি ভাগ করেছি কয়েকটি পর্বে -
১) নস্টালজিয়া
২) প্রেম
৩)অভিমান
৪)খোকাভাই ও আমি
যাইহোক যদিও মেলার ১০ তারিখে বইটি মেলায় আনার কথা দিয়েছিলো প্রকাশক শতাব্দী ভবভাইয়া। তবুও সেই ১০ যখন ১৩ তে গড়ালো একটু একটু মন খারাপ হতে হতে ফাল্গুনের সকালে আমি যখন সেজেগুজে সাত সকালে বের হচ্ছিলাম ভাইয়ার মেসেজ সেদিনও রেডি হয়নি বইটা। এটা আমার সাজুগুজু করে কাজল দেওয়া চোখের কাজল নষ্ট করে দিলো কারণ এই মেসেজে আমার সাথে সাথে কান্না এসে গেলো। আমার ফাল্গুনী সকালটাই বিবর্ণ হয়ে যেত আর একটু হলেই তবে আমি তো দমার পাত্র নই কাজেই চোখ মুছে আবার ঝাঁপিয়ে পড়লাম ফাল্গুনের আনন্দ যজ্ঞে। যাক অবশেষে আজ বিকালে বইটা মেলার মুখ দেখলো সেই রক্ষা।
আমার সকল ব্লগার আপুনি আর ভাইয়া সবার প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। ফরহাদ মেঘনাদ ভাইয়ার প্রতি রইলো বিশেষ কৃতজ্ঞতা। আর জেন রসিভাইয়া না বললে আমার কবিতাগুলি মলাটবন্দী করার কথাই মাথায় আসতো না হয়তো তাই ভাইয়ার প্রতিও রইলো অশেষ কৃতজ্ঞতা।
আমার প্রিয় একটি নস্টালজিক কবিতা-
ছেলেবেলা আমার মধুর ছেলেবেলা
মিষ্টিসূরের সেই পিছুটান,দূর-কলতান,
কেমন আছিস, কোথায় আছিস তুই?
গভীর রাতে চমকানো দুঃস্বপ্ন দেখে
হুড়মুড়িয়ে মায়ের ঘরে, জায়গা নিতে,
আজও কি তুই দৌড়ে পালাস?
পড়িস কি তুই আজও তেমন,
ভূত তাড়ানো মন্ত্রগুলো
চক্ষুমুদে, বিড়বিড়িয়ে ?
খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গানি পাখির ডাকে,
শিউলিতলা শিশিরভেজা ঘাসের পরে
নগ্নপায়ে খামখেয়ালী হাটিস কি তুই ?
বিনিসুতোয় গাঁথিস কি তুই আজও মালা
কিশোরবেলা,জাফরাণী রং শিউলিফুলে!!!
ছুটির দিনে সবাই যখন ভাতঘুমে ঘোর,
দুপুরবেলা চিলেকোঠার আলসে ঘেসে বসিস কি তুই?
গুনগুনিয়ে ভাজিস কি সূর আপনমনে?
একা একা খেলিস কি তুই,
আজও একা পুতুলখেলা, নিসঙ্গবেলা ?
দুই বেনীতে চুলের ফিতা সাদা কালো,
চোখের ভিতর লাল নীল রঙ কমলা হলুদ
ঘোর লাগা সব স্বপ্নগুলো দেখিস কি তুই ?
ছুটিস কি তুই ধরতে আজও
ঝিলমিল রং, প্রজাপতির রঙ্গিনপাখা, স্বপ্নমাখা ....
মেঝের পরে উপুড় হয়ে,
বই এর পিছের শেষ পাতাটায়,
ক্যালেন্ডারের উল্টোপিঠে,
অথবা সেই চকখড়িতে
তুই কি আজও আঁকিস ছবি?
সেই যে ছিলো ক্ষ্যান্তবুড়ি,
ভুতুমপেঁচা রাজকুমারী কাঁকনমালা ?
জুতোর বাক্সে বানাস কি ঘর পুতুলগুলোর
বিছান বালিশ, কৌট দিয়ে যতন করে ?
মুড়িয়ে দিস টুকরো কাপড়, লেসের ফিতায়?
আতশ কাঁচে থাকিস চেয়ে মুগ্ধ চোখে
ঝুম অপলক আগের মত?
বৌ পুতুলের গায়ে জড়াস লালশাড়িটা,
পুঁতির মালা, নাকের নোলক, মায়ের ফেলে দেওয়া
কোনো পুরোন দুলে, গয়নাগাঁটি পরাস কি তুই?
রান্নাবাটি পাতার ঝোল আর
টুকরো ইটে চচ্চড়িমাছ হাপুস হুপুস?
কাঁচের বাক্সে হাওয়াই মিঠা, শনপাপড়ি,
আমের সবুজ কাঁচামিঠায় বোশেখ দুপুর,
মায়ের নিষেধ তেঁতুল আচার, চুম্বকটান..
এখন কি তা তেমন টানে আগের মত?
আচ্ছা এবার বলতো রে তুই......
এখনও কি কষ্টে ভুগিস?
কাঁদিস কি তুই চুপিচুপি ?
ঠিক তেমনি, একা একা যেমনি পেতিস
দুঃখগুলো, নিঝুম দুপুর মেঘেরা তোর
ব্যথার সাথী, ডাহুকপাখি গাছের ডালে।
আবার ভুলে দৌড়ে যেতিস বারান্দাতে
অবাক চাওয়া ঝুলরেলিং এ ফেরিওয়ালা কিংবা
পথের বস্তি শিশু, সঙ্গহীনা, তোরই দোসর,
ঠিক যেন তোর দুঃখ ভোলা, দমকা হাওয়া একটা ঝলক!
ছেলেবেলা, কেমন আছিস?
অনেক ভালো তাইনারে বল?
এখন তো তুই অনেক বড়,
অনেক কঠিন পাথরবাটি?
আগুন পোড়া সোনার কাঁঠি,
জ্বলজ্বলে কোন টুকরো হীরা,
ঝকঝকে চাকচিক্যে ভরা, রাংতামোড়া,
অভিমানী ছেলেবেলা।
কেমন আছিস? কোথায় আছিস বল?
একছুট্টে দেখে আসি একটু তোকে
বায়োস্কোপের রঙিন কাঁচের ঘুলঘুলিতে.....
চোখটা পেতে একটুখানি!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:২৪