
রবিঠাকুরের গীতি-নৃত্য-নাট্য "শ্যামা" মন্চস্থ হবে আর দুদিন পরেই। রিহার্সেল চলছিলো...
হুট করে মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো। শ্যামার ভালোবাসার মূল্য দিতে বজ্রসেনের পরিবর্তে উত্তীয়ের জীবন দান। হঠাৎ উত্তীয়ের করুণ মুখটার স্থানে অন্য মুখের প্রতিচ্ছবি। রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত। অস্ফুটে চিৎকার করে উঠলাম। ভীষন অস্থির লাগতে শুরু করলো। শরীর ভালো লাগছেনা বলে রিহার্সেল থেকে বিদায় নিলাম।
কিছু পরেই জানলাম মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টের খবরটা!!! ভীষন ভীষন অবাক হলাম!! একেই কি বলে টেলিপ্যাথি!!!
এ জীবনে শুধু একবার না আরও বেশ কয়েকবার এমনি আশ্চর্য্যরকম উপলব্ধির স্বীকার হয়েছি আমি। আমার পরিচিতজনেদের অনেকের কাছেও এমনি শুনেছি, কোনো ঘটনা ঘটছে তার থেকে শত সহস্র মাইল দূরে অথচ তারা সে মুহুর্তে ঠিক ঠিক জেনে যাচ্ছে সেটা। এই টেলিপ্যাথি বা অতীন্দ্রিয় অনুভুতি নিয়ে অনেক অনেক ম্যুভি, গল্প ও নানারকম ঘটনাও আছে! শোনা যায় সাধু, দরবেশ অলৌকিক ক্ষমতাবান নানারকম মানুষের কথা যারা মুখ দেখেই বা না দেখেই অনেক ঘটনা, চারিত্রিক বৈশি্ষ্ঠ বলে তাক লাগিয়ে দেয় আমাদেরকে। গড় গড় করে বলে যায় সবার থেকে সযতনে লুকিয়ে রাখা অজানা কথাগুলো।
টেলিপ্যাথি কি?
টেলিপ্যাথি, অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি বা Extrasensory perception বলতে মনের বিশেষ ক্ষমতার মধ্যে দিয়ে তথ্য সংগ্রহকে বুঝানো হয়। এখানে শারীরিক কার্য্যকলাপের তেমন কোনো ভুমিকা নেই। অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির আরেক নাম ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বা sixth sense ।

টেলিপ্যাথি শব্দটা এসেছে গ্রীক শব্দ টেলি এবং প্যাথিয়া থেকে । টেলি শব্দের অর্থ দূরবর্তী এবং প্যাথিয়া শব্দের অর্থ অনুভূতি । তারমানে টেলিপ্যাথি হলো দূরবর্তী অনুভূতি । এই দূরবর্তী অনুভূতি বা টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ প্যারা সাইকোলজীর একটা অংশবিশেষ। এটা সাইকোলজির একটা শাখা যা মানুষের অদ্ভুতুড়ে কান্ড কারখানা বা ক্ষমতা নিয়ে রচিত।
প্যারা সাইকোলজিতে যদিও অলৌকিক ঘটনা বা ক্ষমতা নিয়ে কাজ করা হয় তবে সেটা হয় পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মতভাবেই। টেলিপ্যাথি বা প্রি-রিকোগনিশান অর্থাৎ আগে থেকেই কোন কিছু ধারণা করে নেওয়া বা ভবিষ্যত দেখতে পাওয়া। টেলিকিনসিস বা সাইকোকিনসিস বা কোন ধরণের শারীরিক সংশ্লিষ্ঠতা ছাড়াই কোন জিনিস নাড়াতে পারা, সাইকোমেট্রি বা কোন বস্তুকে স্পর্শ করে সেটা সম্পর্কে সব বলতে পারা, মৃত্যু স্পর্শ বা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা, বাইলোকেশান অর্থাৎ একই সময় দুই জায়গাই অবস্থান করা। ও মাই গড!! এসব শুনলে মাথা ঘুরে যায় আমার!!!

সত্যি কি টেলিপ্যাথি বলে কিছু আছে এ দুনিয়ায়?
আমাদের সবার জীবনের কোন না কোন ক্ষেত্রে টেলিপ্যাথি নেই এমনটা ভাবা যায়না। যেমন হয়তো কখনও অনেক অনেক মিস করছে অপু তানভীরভাইয়া তার টিয়াপাখিকে আর ঠিক সাথে সাথে তখুনি টিয়াপাখিটা কল করে বসলো বা চেয়ারম্যানভাইয়ার খুব খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো গমের আটার রুটি খেতে অমনি সেদিনই রাতে দেখলো মা গরম গরম রুটি আর গরুর মাংস ভুনা করেছেন। এসব আমরা খুব সহজেই কাকতালীয় ঘটনা বলে ফেলতে পারি কিন্তু আমরা জানিই না যে এটা আমাদের মস্তিষ্কের এক অতীন্দ্রিয় সংবেদনশীলতা যেখানে আমাদের অবাধ প্রবেশাধিকার নেই।
টেলিপ্যাথি ৩ রকমের হয় । যেমন -
১। ফিজিক্যাল টেলিপ্যাথি,
২। ইমোশনাল টেলিপ্যাথি এবং
৩। মেন্টাল টেলিপ্যাথি ।
মেন্টাল টেলিপ্যাথিঃ কোন কথা-বার্তা, ইশারা ইঙ্গিত বা দেখা সাক্ষাৎ ছাড়াই দূরবর্তী দু'জন মানুষের যোগাযোগ করার ক্ষমতা । দূরত্ব এক রুম থেকে অন্য রুমের হতে পারে আবার পৃথিবীর একপ্রান্ত হতে অপর প্রান্তেও হতে পারে । অনেকেই মেন্টাল টেলিপ্যাথির অস্তিত্বে বিশ্বাস করবে না কিন্তু এরকম উদাহরণ দিতে পারবে যা মেন্টাল টেলিপ্যাথির সংগার সাথে মিলে যায়।

মেন্টাল টেলিপ্যাথিতে ইমোশন বা আবেগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে । একজন মা তার বাচ্চা ব্যথা পেলে টের পান , মা-বাবা মারা গেলে সন্তান টের পেয়ে যায় । বেশির ভাগ কেইসগুলা তে দেখা গেছে - মেন্টাল টেলিপ্যাথি শুধু মাত্র ঘনিস্ঠ বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের মধ্যে কাজ করছে । ইশ আমি যদি টেলিপ্যাথি দিয়ে কোনো শত্রুর গলাটা চেপে ধরতে পারতাম।

যাইহোক গবেষকরা অপরিচিত মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করে যে ফলাফল পেয়েছেন তার থেকে অধিক বেশি শক্তিশালী ফলাফল ছিল আত্মীয় কিংবা রক্ত সম্পর্কীয় ২জন মানুষের মধ্যেকার টেলিপ্যাথিতে ।

কিভাবে করে এই মেন্টাল টেলিপ্যাথি??
মেন্টাল টেলিপ্যাথি দু'রকমের । একটাতে দু'জন মানুষের দূরত্ব থাকে পৃথিবী ব্যাপি । কেউ কাউকে না দেখেই এবং কথা না বলেই তথ্য পাঠাবে । আরেকটাতে দু'জন মানুষ দু'জন কে দেখবে কিন্তু কোন কথা না বলে শুধু মাত্র যুক্তি সংগত চিন্তা করে তথ্য পাঠাবে । এভাবে যোগাযোগের যত বেশী চেষ্টা মানে প্র্যাকটিস করা হবে তত বেশি এই যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে । প্রথমেই এমন কাউকে নিতে হবে যাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা হয় এবং যে এই ব্যাপারে আগ্রহী । দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে মন খুলে অন্যজনের কাছে তথ্য পাঠানোর জন্য বসতে হবে । একজন কে সেন্ডার হতে হবে অন্যজন কে রিসিভার হতে হবে । প্রথমে ছোট ছোট ব্যাপার শেয়ার করতে হবে - যেমন কোন নাম কিংবা রং । পরে যত বেশী পারফেক্ট টেলিপ্যাথার হতে থাকবে তত তথ্য গুলো ও বড় হতে থাকবে ।
টেলিপ্যাথি পরীক্ষার একটা খুবই সহজ প্যাটার্ন-
এখানে সাবজেক্ট এবং পরীক্ষক মুখোমুখি বসতে হবে আর পরীক্ষকের সামনে থাকবে একটা মনিটর যেখানে ক্রমাগত ছবি বা সিম্বল জেনারেট হতে থাকবে। পরীক্ষকের সামনে যে ছবি দেখানো হবে, টেলিপ্যাথকে সেটা বলতে হবে বা এঁকে দেখাতে হয়। টেলিপ্যাথিক সাবজেক্ট আসলে পরীক্ষকের মস্তিষ্কে যে ইমেজটা পড়ছে সেটা পড়তে পারে এবং তার উপর ভিত্তি করেই ছবি আঁকে। বছরের পর বছর এই পদ্ধতিতে খুবই আশ্চর্যজনক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
স্যার রিচার্ড বার্টন, ডিউক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী জে. বি. রাইন বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করার জন্য অতীন্দ্রিয় উপলব্ধিকে ব্যবহার করেন। বিজ্ঞানীরা সাধারণত অতীন্দ্রিয় উপলব্ধিকে অগ্রাহ্য করেন, কারণ এক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য নেই। এছাড়া পরীক্ষামূলক পদ্ধতি না থাকায় এ পদ্ধতির কোন সুস্পষ্ট নির্ভরযোগ্যতা পাওয়া যায়না।
অধ্যাপক জে. বি. ও তাঁর স্ত্রী লুসিয়া রাইন-
১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার ডিউক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জে. বি. ও তাঁর স্ত্রী লুসিয়া রাইন এই টেলিপ্যাথি বা অতীন্দ্রিয় অনুভুতি নিয়ে কাজ শুরু করেন। লুসিয়া রাইন স্বতঃস্ফূর্ত বিষয়গুলো নিয়ে এবং জে. বি. রাইন পরীক্ষাগারে কাজ করতে থাকেন। তিনি কিছু জেনার কার্ড নিয়ে বাস্তব নিরীক্ষা চালান। বর্তমানে কার্ডগুলি ইএসপি কার্ড নামে পরিচিত। এসব কার্ডে সার্কেল, স্কয়ার, ক্রস, স্টার এসব চিহ্ন রয়েছে। পাঁচধরণের ২৫ টি কার্ড একটি প্যাকেটে থাকে।
পরীক্ষায় প্রেরক কার্ডগুলির সিরিজের দিকে লক্ষ্য রাখন, অন্যদিকে গ্রাহক চিহ্নগুলো অনুমান করেন। আলোকদৃষ্টি পরীক্ষার ক্ষেত্রে, কার্ডের সেটটি গোপন করা হয় এবং গ্রাহক অনুমান করতে থাকেন। পূর্ব লব্ধ জ্ঞান বা প্রিকগনিশন পরীক্ষার ক্ষেত্রে, গ্রাহকের অনুমানের পর কার্ডগুলোর ধারা নির্ধারণ করা হয়। প্রথমে কার্ডগুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করা হয়, তারপর মেশিন দিয়ে। রাইন সাধারণ লোককে পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করেন এবং দাবি করেন, তারা প্রত্যাশার চেয়ে ভাল করেছে।
১৯৪০ সালে রাইন ও জে. জি. প্র্যাট ১৮৮২ থেকে অদ্যাবধি কার্ডভিত্তিক অনুমান সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগুলোর একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা রচনা করেন। এর নাম এক্সট্রা-সেন্সরি পার্সেপশন আফটার সিক্সটি ইয়ার্স বা Extra-Sensory Perception After Sixty Years। এটি বিজ্ঞানের প্রথম মেটা-অ্যানালাইসিস হিসেবে স্বীকৃত। এতে রাইনের পরীক্ষার সকল প্রশ্নোত্তর রয়েছে। এখানে ৫০টি পরীক্ষার কথা উল্লেখ আছে, এর মধ্যে ৩৩টিতে রাইন ছাড়াও অন্যান্য তদন্তকারীর ও ডীউক ইউনিভার্সিটি গ্রুপের অবদান রয়েছে।
ইতিহাস বলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও আগে অন্যদের মনোজগতে ভ্রমন করতে পারে এমন লোকদের নিয়ে কিছু পরীক্ষা চালিয়েছিল দ্যা গ্রেট সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং ব্রিটেন আর তার ফলাফলও ছিল মজার। সে সময় টেলিপ্যাথি মিলেটারি ইন্টিলিজেন্সে একটি বিশেষ আসন করে নিয়েছিল এবং এর ধারকদের বলা হত 'সাই এজেন্ট। এখন অবশ্য টেলিপ্যাথিকে বিজ্ঞানীরা রিমোট সেন্সিং বলে থাকেন। এজেন্টরা তাদের মনটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এবং বস্তু সম্পর্কে তথ্য দিতেন।
অতীন্দ্রিয় অনুভুতিতে তুমি ও একাকী আমি
এমন একটা সময় ছিলো
তুমি ঠিক কোথায় কখন, কোন মুহুর্তে
কি করছো, কোথায় আছো
ঠিক ঠিক জেনে যেতাম আমি মৌমিতা!
এমন অনেক দিন গেছে
আমি অনেক অভিমানে ক্ষত বিক্ষত
দ্গ্ধ করেছি তোমাকেও
নিজে জ্বলেছি শিখা বহ্নিমান!
সেসব দিন গুলোয়
যোগাযোগের কোনো মাধ্যম ছিলোনা আমাদের
শুধু ছিলো মন দিয়ে মন ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা
মনে মনে কথা বলা, রাগারাগি
বা দূরে ছুড়ে ফেলা!
কত কত দিন
আমার অভিমানের অসহ্যবেলার শেষপ্রান্তে এসে
দাঁড়িয়েছিলে তুমি
হেসে বাড়িয়েছিলে তোমার দুহাত!
আজ অনেকগুলো দিনের অচর্চায় বা
বিচ্ছেদের অনভ্যাসে
দেখিনা তোমার মুখ
পাইনা আর কোনো টেলিপ্যাথিক সাড়া!
তোমাকে ভুলে যেতে যেতে
ভুলেই গেছি প্রায় আমি আজ-
তবুও খুব মাঝে মাঝে পাই ক্ষীন সবুজ সিগন্যাল
আমার অতীন্দ্রিয় অনুভুতির মলিন তারে...
আমার অনেক অনেক প্রিয় একটা সাবজেক্ট "টেলিপ্যাথি" নিয়ে লেখাটা অনেক অনেক আদরের চেয়ারম্যান পিচকা ভাইয়াকে উপহার দেওয়া হলো।


আর কবিতাটা মৌমিতার জন্য......

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৫৫