বনজ বাতাসে তখন গোধুলীর স্বপ্নীল আভা
আসন্ন সন্ধ্যের বুকে নামছিলো তরল অন্ধকার,
ঘর হারা টিটিপাখির বুকফাটা আর্তনাদ আর
ঘরে ফেরা টিয়াদলের তীক্ষ্ণ ছুরিফলা চিৎকারে,
প্রকৃতির আধখোলা দৃষ্টির মাঝে ছড়িয়ে ছিলো
এক অপার্থীব ও আলৌকিক আবেশ!!
সে মায়ালোকে আমাদের বোধ-বুদ্ধি,কৃষ্টির
তখন ভাঙচুর বেলা, মহা প্রলয়ের কাল!!
খরস্রোতা পাহাড়ী নদীর ক্রমক্ষয়িষ্ণু নুড়ির মত
ভাঙছিলাম আমরা, পাশাপাশি,যুগল মৌনব্রতী,
নিষিদ্ধ অথচ নির্মল আবিষ্ঠতায়, আত্ম-বিলুপ্তিতে
ভাসছিলাম আমরা, ডুবন্ত চাতক-চাতকী !!
গাঢ়হরিৎ উপত্যকায়,পায়ের কাছে বইছিলো নদী
তারই অন্ধকার খোলে ডাকছিলো নিশাচর পেঁচা,
সে ডাক বয়ে গিয়েছিলো অনাবিল অজানায়,
উপেক্ষা আর অনুপেক্ষার অগ্রাহ্য ফাল্গুনী হাওয়ায়,
সান্নিধ্যের মহুল-কোমল গভীর, স্বপ্নালু নেশায়
বুঁদ হয়েছিলাম আমরা অনন্ত মহাকাল!!
ক্রম গাঢ় দৃশ্যমান তখন কোজাগরী চাঁদ
উতাল হুহু সমীরণ আর বুনোফুল সুবাসে
স্বর্গ তখন সায়াহ্নের সবুজ সজীব বনভূমি।
আমরা ছিলাম নীরব-নিরুচ্চার, অস্ফুষ্ঠিত
উন্মুখ মন নাবলা কথায় ছিলো উচাটন
চেতন-অবচেতনের দোলে দোদুল্যমান ক্ষণ!
চিরল সিঁথি-প্রান্তে ছুঁইয়ে রাখলে তুমি
তপ্ত তোমার সুগঠিত চিবুক, বহুযুগ-বহুক্ষণ
তারপর দীর্ঘ নীরবতা আর পুন্জিভুত নিশ্চুপতা
স্বচ্ছ ঝকঝকে চাঁদটা তখন বেশ উপরে উঠেছে,
মহুয়া,করৌন্জ আর শালফুলের গন্ধে গন্ধবিধুর
মৌ-মৌ মৌনীমাতাল পুস্পিত নির্জন চারিধার!!
হিম জংলা হাওয়ায় থেমেথেমে ডাকছিলো কোকিল
সে কুহুতানে ভেসে আসছিলো সঙ্গীনির সাড়া,
শিহর তোলা,হাওয়া লাগা আমলকীশাখের মত
আমরা তখন গ্রহ নক্ষত্রের নির্ভুল নির্বন্ধে-
স্বর্গ নরকের দুর্গম পথের দুঃসাহসী যাত্রী,
সুখ আর দুঃখ ব্যাবচ্ছেদের অজানায় আগুয়ান!!
পাথুরে খাড়াপথ আর ঘুরল পাকদন্ডী বেয়ে
পা বাড়ালাম ঝিরিঝিরি সজল ঝর্ণার পথে
অনভ্যস্থ পিছল পথে,কম্পমান দেহবল্লরী লতা
নদী-অববাহিকায় ডেকেই চলেছিলো তখনও
একটা পিউকাহা, অবিরাম, অন্যদিকে ঢাব পাখি,
গম্ভীর ভুতুড়ে গলায় ডাকছিলো ঢাব!!!
পিউকাহার সুরে ছিলো,আমাদের আসন্ন অজানা
আনন্দের সুর, আর ঢাবপাখির স্বরে ছিলো
গোপন গোপনীয়তা, নির্জন রাত্রীর মুখরিত গানে
আর সরব ব্যান্জনায়,আমোদিত নৃত্যরতা বনদেবী।
চাঁদ আর আকাশের পটভুমিতে আমরা তখন
পৃথিবীর প্রথম নারী ও পুরুষ-!!
উচিৎ-অনুচিৎ,ভূত ভবিষ্যৎ কিছুই মানিনা,
মৃদু-মন্থর বাতাস সাক্ষী রেখে ভেসে যাই,
চাঁদের আলোয়, ফুলের গন্ধে হেসে যাই,
চতুর্দিকে ঝরছিলো রাত, ঝরছিলো চাঁদ আর
চাঁদ ভেজা আসমান জমিনের পথে আমরা
দুজন পৃথিবীর প্রথম নারী ও পুরুষ!!!
চন্দ্রালোকিত সেই রাতে শব্দে, বর্ণে-গন্ধে
ও স্পর্শে ডেকেছিলো একটি ছোট্ট কোমল
ভারী মিষ্টি টুইপাখি.......
এত মন দিয়ে মনে হয় জীবনে কোনোদিন কিছুই লিখিনি। আজ লিখলাম। কারণ আমার অতি প্রিয় দুজন মানুষ ওরফে কবিদ্বয়কে উৎসর্গ করেই কিছু লিখতে বসেছিলাম। লিখতে লিখতে ভাবলাম কার জন্য এটা বেশী প্রযোজ্য? মাহীমনি নাকি রাশেদীন ভাইয়া? রাশেদিন ভাইয়া নাকি মাহীমনি? ভাবতে ভাবতে দুজনকেই দিলাম আমার এই প্রাণপণ প্রচেষ্টাটা।
উফফ গুণবতী আর গুণবানদের কিছু দেওয়াও দেখছি ঝামেলা।
যাইহোক আমার প্রিয় প্রিয় অতি প্রিয় কবিদ্বয় মাহীফ্লোরা ও হানিফ রাশেদীনভাইয়া আমার এই উপহারখানি নিয়ে আমাকে ধন্য করো।
অনেক অনেক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা তোমাদের দুজনকেই। আরও আরও অনেক অনেক ভালো ভালো লেখা দিয়ে আমাদেরকে উৎসাহিত করো আজীবন।