ছবি দেখতে আমার খুবই ভাল লাগে। জীবনে কত ছবির দিকে যে হা করে তাকিয়ে থেকেছি তার ইয়ত্বা নেই। মাঝে মাঝে গুলশান ২ এর ছবির দোকানগুলোয় এমনি এমনিই ঘুরে বেড়াই। নানারকম ছবি দেখি ঘুরে ঘুরে অথবা আমার বিশেষ প্রিয় কাজের একটি হলো নেট ঘুরে ঘুরে ছবি দেখা। কার্টুন, জলরং, তেলরং সব ধরণের ছবিই আমার পছন্দ।তবে একটি বিশেষ ছবির প্রতি সেই কবে থেকে যে অনুরক্ত হয়ে পড়লাম আমি, সে আর এখন আমার মনেই পড়ে না।
Female head বা La Scapigliata
আমি মনে প্রানে কখন যে এ ছবির মাঝে হারিয়েছিলাম তা আজ নিজেরও মনে নেই। ছবিটির শিল্পী বিশ্ববরেণ্য,বিশ্বখ্যাত সকলের চেনা ও জানা লিওনার্দো দ্যা ভিন্চি।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি বা আমার এ জীবনের সবচাইতে প্রিয় একজন শিল্পী তার পুরো নাম Leonardo di ser Piero da Vinci । জন্ম ফ্লোরেন্সের ভিঞ্চি নগরের এক গ্রামে, ১৪৫২ সালের ১৫ই এপ্রিল।
রেনেসাঁসের বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্কর আন্দ্রেয়া ভেরোচ্চিয়োর ছিলেন তার গুরু। ১৪৬৯ সালে শিল্পী ভাস্কর আন্দ্রেয়া ভেরোচ্চিয়োর কাছে ছবি আঁকায় ভিঞ্চির শিল্পী জীবনের সূচনা। এরপর ১৪৭২ সালে তিনি চিত্রশিল্পীদের গীল্ডে ভর্তি হন এবং এই সময় থেকেই তাঁর চিত্রকলা জীবনের শুরু।
১৪৭৮ সাল থেকে ১৫১৯ সাল বা তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গীর্জা ও রাজপ্রাসাদের দেয়ালে চিত্রাঙ্কন এবং রাজকীয় ব্যাক্তিবর্গের ভাস্কর্য নির্মাণ ছাড়াও বেসামরিক ও সামরিক প্রকৌশলী হিসাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার জ্ঞানের প্রয়োগ, অঙ্গব্যাবচ্ছেদ বিদ্যা, জীববিদ্যা, গণিত ও পদার্থবিদ্যার মত বিচিত্র সব বিষয়ে তার বিভিন্নমুখী উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভারা যেন নানা ছন্দে, বর্ণে মুর্ত হয়ে উঠেছে তারই বিভিন্নধর্মী চিত্রকলার মাধমে।
১৪৮২ সালের দিকে ভিঞ্চি এঁকেছিলেন মিলনে তাঁর বিখ্যাত দেয়াল চিত্র দ্য লাস্ট সাপার।
বিখ্যাত সেই "দ্যা লাস্ট সাপার" ছবিটি । ১৪৯৮ সালে ৪৬০x ৮৮০ সে.মি. দৈর্ঘ্যের এই ছবিটি আঁকা হয় মিলানের "Convent of Santa Maria delle Grazie" এর দেয়ালে।
সেই বিখ্যাত মোনালিসা। ছবিটি ১৫০৩-১৫০৫ সালের মধ্যে আঁকা। ছবিটি বর্তমানে রক্ষিত আছে ফ্রান্সের লুভর মিউজিয়ামে।
তেইশে এপ্রিল ১৫১৯ সালে বিখ্যাত শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি মারা যাবার পর তার ছাত্র শিল্পী ফ্রান্সেস্কো মেলজি তার সহায় সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন।
লিওনার্দোর সব অস্থাবর সম্পত্তি, কাগজপত্র, কাঠের এবং ধাতুর তৈরি মডেল, পেইন্টিং সহ আরো অসংখ্য জিনিষপত্র এর মধ্যে সবচেয়ে অমূল্য যা ছিল তা হচ্ছে প্রায় ১৩,০০০ পৃষ্ঠার নোট। মেলজির ইচ্ছা ছিল লিওনার্দোর সারা জীবনের কাজ, সিজ টাওয়ার গঠন থেকে পাখির উড়া, কিডনীর আভ্যন্তরিন কাজ থেকে চাঁদের খাদ পর্যন্ত বিষয় নিয়ে তার বিচিত্র বিষয়ের চিন্তা-ভাবনাকে ক্যাটালগ করা।
১৫৭০ সালে মেলজি মারা যাবার পর তার একমাত্র সন্তান ওরাজিও সম্পুর্ণ সংগ্রহের উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হন। কিন্তু ওরাজিওর লিওনার্দো বা তার কাজের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। এ সময় ওরাজিও'র বুদ্ধিমান শিক্ষক লিলিও গাভার্ডি তেরো খণ্ড নোটবুক বিক্রি করে দেন টাসকানির গ্র্যান্ড ডিউকের কাছে।
ফ্রান্সেস্কো মেলজির এতো সতর্কতা সত্ত্বেও তার গুণধর পুত্রের কল্যানে ভিঞ্চির অমূল্য নোট ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো অজানা অচেনা অসংখ্য লোকের হাতে। কিছু সংগ্রহ যেয়ে হাজির হল উইন্ডজরের ব্রিটিশ রাজকীয় পরিবারে। সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হলো সেটা হচ্ছে, এই হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় নোটবুকের অনেকখানিই গেলো হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে। ১৫১৯ সালে মেলজি যে মূল ১৩০০০ পৃষ্টা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল, তার মাত্র অর্ধেকের সামান্য বেশি, মোটামুটি ৭০০০ পৃষ্ঠার খোঁজ জানতে পারা যায়। বেশিরভাগই বর্তমানে সরকারী সংগ্রহ হিসাবে আছে, সামান্য কিছুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রহেও আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে কোডেক্স হ্যামার।
লিওনার্দো এর নোটবুক লেখালিখির সবচেয়ে মজার বিষয় ছিলো তিনি খুব কম সময়ই তার লেখালেখিতে তারিখ দিয়েছেন এবং তার আইডিয়া যাতে কেউ চুরি করতে না পারে সেজন্য লিওনার্দো মিরর ইমেজের মত অদ্ভুত উপায়ে তার নোটগুলোকে লিখতেন। ডান থেকে বামে লিখতেন তিনি এবং অক্ষরগুলো উল্টোদিকে ঘোরানো থাকতো। আয়নার সামনে নিলেই শুধুমাত্র প্রতিবিম্ব দেখে বোঝা যেতো আসলে কি লেখা আছে। এছাড়া সেগুলোর মধ্যেও তিনি তার নিজস্ব কোড ঢুকিয়ে দুর্বোধ্য করে দিতেন যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে তিনি কি লিখেছেন।
এ ছাড়াও বিস্ময়কর হচ্ছে জীবনের পুরো সময়টাই তার হাতের লেখা মোটামুটি একই রকমের ছিল। তিনি এসব কারণই আমার কাছে ও আমার মত অনেকের কাছেই আজীবন বিস্ময় মানব।
লিওনার্দো যে ধারণাগুলোকে আবিষ্কার করেছিলেন, কিন্তু প্রকাশ করেননি সেই সমস্ত ধারণাসমূহ আবার নতুন করে আবিষ্কার করেছেন অন্য বিজ্ঞানীরা।
লিওনার্দো প্রিয় বিষয়গুলোর একটি ছিলো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার।খুব চ ঞ্চল বা খেয়ালীও মনে হয় তাকে। এলোমেলো ভাবে নোটবুকের পৃষ্ঠায় তার চিন্তাভাবনা লিখে গেছেন। গুরুত্বপূর্ণ কোন বৈজ্ঞানিক লেখার পাশেই হয়তো এঁকেছেন কোন মুখের স্কেচ, বা কোন নির্দিষ্ট রঙ কিভাবে তৈরি করা যাবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বা কোন নির্দিষ্ট রোগ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে তার উপায়।
লিওনার্দো এর ছিল এক বৈচিত্র্যবিলাসী মন। কেমন যেন উড়ু উড়ু।তিনি একমুখী চিন্তার অধিকারী ছিলেন না। এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে লাফিয়ে ডিঙিয়ে যেতেন যেন। সবকিছুই তিনি অসমাপ্ত রেখে গেছেন। লিওনার্দোর এর কাজের স্টাইল দেখে মনে হয় যে, তার ধারণা ছিল সময় অফুরন্ত। জীবন কখনও ফুরোয় না।
লিওনার্দো আলোকবিজ্ঞান (Optics), বলবিজ্ঞান (Mechanics), অঙ্গ-ব্যবচ্ছেদ বিজ্ঞান (Anatomy), ভূতত্ত্বে (Geology) বিস্ময়কর সব আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একধরনের প্লাস্টিক সৃষ্টি করেছিলেন, একধরনের ক্যামেরা তৈরি করেছিলেন, কন্টাক্ট লেন্স এবং স্টীম ইঞ্জিন নিয়ে লিখে গেছেন, আকাশ কেন নীল তা ব্যাখ্যা করেছেন। সেই আমলে এমন সব আবিষ্কার ভাবাই যায়না যেন। তাই তো আমার মত অনেক অনেক মানুষের চোখেই তিনি এক বিস্ময় মানব!!!
তার আঁকা কিছু বিশেষ প্রিয় ছবি
Madonna with the Yarnwind
The Virgin ...
তার আরেক আশ্চর্য্য ছবির নাম vitruvian
৩৪৩২৪৫মি.মি এর এই ছবিটি তিনি আঁকেন কলম, কালি, watercolour এবং metalpoint দিয়ে ১৪৯২ সালে। । বর্তমানে এটি সংরক্ষিত আছে ভেনিসের Gallerie dell'Accademia গ্যালারীতে।
এই সেই বিখ্যাত পাখির ওড়া পর্যবেক্ষন নিয়ে তার নিজের আঁকা গবেষনার একটি পৃষ্টা।লিওনার্দো পাখির ওড়ার নানা কৌশল পর্যবেক্ষন করে হেলিকপ্টারের মত উড়োজাহাজের ডিজাইন করেছিলেন।
কলম আর কালিতে আঁকা ২১০x ১৫০মি.মি. এর এই পৃষ্ঠাটি রক্ষিত আছে তুরিনের Biblioteca Reale তে।
অবাক হবার্ মতই এ ছবি। এতটাই অদ্ভুত নিখুঁত! সংরক্ষিত আছে মিলানের Biblioteca Ambrosiana এ।
Female head বা La Scapigliata ছবিটি সম্পর্কে আরও কিছু কথা
Italian Renaissance master Leonardo da Vinci (1452 – 1519) was a genius whose ideas were centuries ahead of their time. Although he made great advancements in the fields of mathematics and science, he is most renowned for his achievements as a painter and artist. His revolutionary concepts included depicting women, such as “La Scapigliata,” as men’s biological and mental equals. This work is not only a masterpiece of art, but of thought.
History
The work is an unfinished painting, mentioned for the first time in the House of Gonzaga collection in 1627. It is perhaps the same work that Ippolito Calandra, in 1531, suggested to hang in the bedroom of Margaret Paleologa, wife of Federico II Gonzaga. In 1501, the marquesses wrote to Pietro Novellara asking if Leonardo could paint a Madonna for her private studiolo
আমার জীবনের এক বিস্ময় মানব লিওনার্দো দ্যা ভিন্চি। চিরজীবন শ্রদ্ধা র সাথে স্মরণ করি তাকে এমন সব ছবি আর সাথে আমার জীবনের সবচাইতে প্রিয় ছবিটি উপহার দেবার জন্য।