আমার সবচাইতে শ্রদ্ধেয় প্রিয় ব্যাক্তিত্ব...
ব্যক্তিত্ব বা personality শব্দটার মাঝে কি রকম একটু ভয় ভয় ব্যাপার জড়িয়ে আছে।ছোটবেলায় আমি তো ব্যক্তিত্ববান মানুষ বলতে আমাদের স্কুলের গুরুগম্ভীর বড়আপা আর আমার নিজের রাশভারী মাকে ছাড়া আর কাউকেই ভাবতেই পারতাম না।
বেশ বড় হবার পর জানলাম ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা।
A brief definition would be that personality is made up of the characteristic patterns of thoughts, feelings and behaviors that make a person unique. In addition to this, personality arises from within the individual and remains fairly consistent throughout life.
সোজা কথায় ব্যক্তিত্ব হলো মানুষের কতগুলো বৈশিষ্ঠের একক সংগঠন, যা একটি মানুষের আচরণে বার বার প্রকাশ পায়। এটি একজন মানুষের একক অভিব্যাক্তি। তাই কখনই একজন মানুষের ব্যাক্তিত্ব আরেকজনের মত হয়না। এটা এক একজন মানুষের স্বকীয়তা।
আর তাই ব্যক্তিবের কোনো ধ্রুবসত্য বা নিশ্চিৎ সংজ্ঞাও দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তো যতই ব্যাক্তিত্ববান মানুষ বলতে গুরুগম্ভীর পন্ডিৎ টাইপ মানুষের চেহারাটাই চোখের সামনে ভেসে উঠুক না কেনো, ব্যাক্তিত্ব টাইপড কিছু ব্যাপারই নয়। ব্যাক্তিত্বের চেহারা গুরু গম্ভীর, হাস্যজ্বল, কুটিল, দয়াবান, সদা চন্চল সবরকমই হতে পারে আর ব্যাক্তিত্ব কিন্তু মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একই রকম থাকেনা। এটা বিভিন্ন বয়সে পরিবর্তিত হতে হতে এক পর্যায়ে এসে একটা স্থিতিশীলতা পায়।
ব্যক্তিত্ব আর মানবিক সর্ম্পক আঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মানবিক সর্ম্পকের উন্নয়ন ছাড়া ব্যাক্তিত্বের উন্নয়ন অসম্ভব। শুধু তাই নয় ব্যক্তিত্বের সাথে জৈবিকভাবে নির্ধারিত গুণাবলী বা দৈহিক গঠন, সামাজিকভাবে নির্ধারিত গুণাবলী (কর্তব্যপরায়নতা, সহনশীলতা), অভিজ্ঞতা ( শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা) আর স্বকীয় মানষিক কিছু ব্যাপার স্যাপার( প্রতিজ্ঞা, মনোযোগ, সংবেদনশীলতা) এসবও অতঃপ্রতভাবে জড়িয়ে থাকে।
যাইহোক ব্যাক্তিত্বের সকল তত্বব্যাখা দেওয়া অসম্ভব। তবে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ব্যক্তিত্ব তার স্বকীয় বংশগতি ও পরিবেশের যৌথ ফলাফল।
বিজ্ঞানীরা শরীরের গড়ন অনুসারে মানুষকে কয়েকটি শ্রেনীতে ভাগ করেছেন। তাদের মতে মানুষের প্রত্যেক ধরণের শারীরিক গড়নের সাথে কতগুলো মানসিক ও আচরন গত সম্পর্ক রয়েছে.....
তারা মনে করেন মানুষের ব্যাক্তিত্বের কতগুলো গুণাবলী বিশেষ করে মেজাজের সাথে শারীরিক গড়নের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তাদের মতে দুই ধরনের মেজাজের একটি ,Cycloid অপরটি Schizoid.
Cycloid মানুষেরা খাটো, গোলগাল, মেদ বহুল হয়। এরা আবেগী, চন্চল ও অস্থিরটাইপ হয়।
Schizoid মানুষেরা লম্বা হালকা পাতলা গড়নের হয়। এরা অন্তরমূখী ও সামাজিক সম্পর্ক বিমুখ হয়। এদের জীবনে চাপ আসলে Schizophrenic হবার সম্ভাবনা আছে।
জানিনা বিজ্ঞানীরা ঠিক না বেঠিক তবে তারা শারীরিক গঠন দেখে যেমন মানুষের মুখের আদল বা চেহারা, হাতের গড়ন দেখে এমনকি পায়ের সেইপ দেখেও যে মানুষ চিনে ফেলেন সেটাই বেশী মজার আর তাই নিয়েই আমার এই লেখাটা লেখার ইচ্ছে হলো।
মানুষের মুখের আদল বা চেহারার মাঝে যে ব্যাক্তিত্ব লুকিয়ে আছে তা শুধু বিজ্ঞানীরা কেনো আমাদের মা খালা গুরুজনেরা এমনকি ছোট ছোট বাচ্চারাও বেশ নির্ভুলভাবেই বলতে পারবে বলেই আমার ধারনা। যেমন একদিন টিভিতে একজন কুক্ষ্যাত ডাকাতের চেহারা দেখে আমার মা বললেন, এর চেহারাটাই তো ডাকাতের মত। আমি অবশ্য তখন মনে মনে ভীষন মর্মাহত হয়ে ভাবছিলাম কই এর চেহারার সাথে তো আমাদের গোবেচারা ফুল বাগানের মালী রঘু এর চেহারারই বেশী মিল। তারমানে রঘুও কি ডাকাত?
যাইহোক বেবিকেয়ার এ্যয়ার হোস্টেজরা হন যেন এক একজন মায়াবতী এ্যান্জেল। আমার ধারণা তাদের মায়াবতী চেহারাটাই তাদের এমন জব পাবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী সহায়তা করে। তবে কিছু কিছু মিচকা টাইপ মানুষ আছে ঠিক আমার গল্পের রুমির মত যাদের চেহারা দেখে কিছুতেই বোঝা সহজ নহে যে তিনি কতখানিই শয়তানের লাঠি মানে অমানবিক।হয়তো বিজ্ঞানীরা পারবে।
যাইহোক,
মুখের আদল বা চেহারায় ব্যাক্তিত্ব
The face is a canvas on which all human thought, decisions,endeavors,experience, fears.hopes and all sensation,pleasant, or otherwise, is manifest.
যাদের চোয়াল শক্ত মজবুত ও দৃঢ়। ব্যাক্তিত্বেও তারা তেমনি দৃঢ়চেতা ও সংকল্পে বদ্ধপরিকর টাইপ হন। কথা বলার সময় যারা মাথা উচু করে আই কনট্যাক্ট রাখে তারা প্রখর আত্নবিশ্বাসসম্পন্ন হন।
আমার জীবনের প্রতি মুহূর্তে জড়িয়ে থাকা একজন মানুষ
গোলগাল ও চৌকোনা মুখের মানুষেরা শেষজীবনে শান্তিপূর্ণ জীবন কাটানোতে বিশ্বাসী। লম্বাটে চিবুক জেদী চরিত্রের লক্ষন ও নিজের স্বপ্ন পূরণে হন বদ্ধ পরিকর। চওড়া চেটালো মুখের মানুষরা খুব বেশী সংবেদনশীল হয়ে থাকেন।
আজকালকার মর্ডার্ণ মেয়েরা তো আইব্রো ছেঁচে তুলে চিকন চাকন বানাতেই পছন্দ করে বেশী। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে,পাতলা চিকন আইব্রো এর চাইতে ঘন ও মোটা ভ্রু সৌভাগ্যের প্রতীক।
উঁচু খাড়া নাক যেমনই উদারতার প্রতীক তেমনি বাকানো টিয়াপাখির ঠোটের মত নাক ধূর্ত ও কুটিল চরিত্রের লক্ষন।
চোখ।ছোট ছোট বা হরিণী চন্চলা চক্ষু মানব মানবীরাও নাকি হয় খুবই অস্থির চিত্তের , কাজ ও মনোযোগেও তারা তেমনি অস্থির, মাঝে মাঝে এমন চোখের মানুষগুলো অসাধুও হয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে স্থির শান্ত গভীর আয়তচোখের অধিকারী মানুষেরা হন আত্মসংযমী ও ঠোঁটকাটা। সত্য কথা বলতে দ্বিধা বোধ করেননা। লক্ষ্যে অবিচল ও জিদ্দি টাইপ।
চোয়াল, চোখ, নাক, আইব্রোয়ের পর আসে অধর। লিপলাইনার দিয়ে বদলে দেওয়া অন্কিত অধর হলে চলবেনা। সত্যিকারেই যাদের লিপসের প্রান্তদ্বয় উপরের দিকে উঠানো থাকে হ্যাপী ফেস ইমোগুলোর মত, তারা হয় সদা হাস্যজ্বল আর ঠিক স্যাড ফেসের মত লিপস যাদের তারা অকারনেই জীবন ভরে তোলে নিরানন্দে।
যাদের লিপস পাতলা তারা সহনশীল ও আবেগ নিয়ন্ত্রনে পারঙ্গম।আর যাদের লিপস একটু মোটা। বেবি বেবি তারা একটু দুঃখেই কেঁদে কেটে বুক ভাসায়। আবার হেসে ওঠে একটু ভালোবাসায়।
উচু কপাল সৌভাগ্যের প্রতীক আর নীচু কপালীদের জীবনে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়।
সিল্কী চুলের মেয়েরা বস্তুত সহজ সরল নাজুক প্রকৃতির ও সহনশীলা হন আর একটু কোকড়া, রাফ চুলের মানুষেরা হয় কঠোর ও বুদ্ধিতে প্রখর।অনেক বড় কপাল বা হেয়ারলাইন বেশ পেছনদিকে এমন মানুষের দুঃখ করার কিছুই নেই । তারা হয় হাই লেভেল ইনটেলিজেন্ট।
http://ezinearticles.com/?Face-Shape-Personality---How-to-Know-Anyones-Personality-Through-Their-Face&id=1862339
পায়ের গড়ন বা প্রালোজি টিনটিন ভাইয়ার জন্য বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য। কারণ টিনটিনভাইয়াই আমাকে বেশ কিছুদিন আগে এই আইডিয়াটা দিয়েছিলো সাথে নতুন নামাকরণ !প্রালোজি - পা দেইখ্যা মানুষ চেনার বিস্ময়!!
http://www.somewhereinblog.net/blog/tintinrocks/29397263
শুনেছি আগেকার দিনে নানী দাদীরা বিয়ের কন্যা নির্বাচনের সময় কন্যার পায়ের গঠন আকার আকৃতির নানা রকম গুনা গুন বিচার বিশ্লেষন করতেন।
যাইহোক, মনোবিজ্ঞানীদের মতেও পায়ের গঠন, রঙ, মসৃনতা আর পায়ের প্রতিটা আঙ্গুল ডিফারেন্ট মিনিং বয়ে চলে।বুড়ো আঙ্গুল মানুষের চিন্তাভাবনার প্রতিফলক। সেকেন্ড আঙ্গুল আবেগ আর পায়ের উপরের পার্ট আর নিচের পার্ট খুব সুক্ষভাবে প্রকাশ করে সেই মানুষটি ঠিক কেমন।
মসৃন, লম্বা, ঝকঝকে পায়ের অধিকারী মানুষগুলোর লাইফও নাকি হয় মসৃণ, ঝকঝকে। তারা এ্যাকটিভ, হার্ড ওয়ার্কিং আর মনেপ্রাণে খুব হেল্পফুল মানুষই হয়ে থাকেন।
যখন পা হয় তুলনামুলক ভাবে শরীর থেকে ছোট, তারা হয় স্মার্ট,মনোযোগী আর শান্তপ্রকৃতির। ভাগ্যবানও হন তারা। যত প্রতিকুলতা আসুক সামনে বেশ কাটিয়ে নিতে পারেন। যারা সামনে ঝুকে হাটে রিস্ক নিতে পছন্দ করেননা তারা।কিছুটা হীনমন্য হয়।
যারা পায়ের পাতার উপর পুরোটা ভর দিয়ে থপথপ করে হাটে তারা ব্যাস্ত সমস্ত মানুষ হয়। নিজের থেকে অন্যের ব্যাপারে মাথা ঘামায় বেশী।পুরাই গায়ে মানেনা আপনি মোড়ল টাইপ। বাঁচাল প্রকৃতির আর শো অফ করার টেন্ডেন্সি থাকে বেশী।
মাংসল পায়ের গড়ন ওয়ালা মানুষেরা সাধারণত ধনী হয়। আর হাড্ডিসার
পায়েরা হয় জীবনযুদ্ধে পরাজিত সৈনিক। ছোট ছোট পায়ের আঙ্গুলের মানুষেরা হয় কর্তব্যপরায়ন ও সৎ।
যাদের পায়ের পাতা বেশ বড়সড় ৮" ছেলেদের ও ৭" মেয়েদের বা আরও বেশী তারা যেকোনো কাজে নেতৃত্ব নিতে পারার ক্ষমতা রাখে। যে কোনো পরিস্থিতি, বাঁধা বিপত্তি সামলে নিতে পারে।
যখন দ্বিতীয় আঙ্গুল বুড়ো আঙ্গুলের চাইতে বড় হয় তাদের জীবনে খাদ্য ও বন্ধুত্বের কোনো অভাব হয়না। সোজা কথায় প্রচন্ডরকম সৌভাগ্যবান তারা।
যখন পায়ের পাতা হয় ছোটখাটো। ৬" বা ৫" এর কম। তাদেরকে এই জগতে হাউ টু অবদমন হিংসা এটা শিখতেই হবে। নইলে জীবনে বিপদ ঘনিয়ে আসবে বার বার।
সাদা ধপধপে পায়ের নখ একটি স্থিতিশীল জীবনের প্রতীক। ধুসর নখ একটি টাফ লাইফের পরিচায়ক। সবচাইতে সুলক্ষনা নখের রঙ লালচে যা জীবনে ঐশ্বর্য্য ও সাফল্যের নিদর্শন।
যাদের পায়ের আঙ্গুল হয় বড় বড় তারা নেতা ও সংকল্পপরায়ন হন তবে তাদের বদরাগী হবারও সম্ভাবনা আছে একই সাথে অন্যের ব্যাপারে তারা হন পরম ধৈয্যশীল।
আপাতত এতটুকুই থাকুক। শারীরিক গঠনগত দিক নিয়েই ব্যাক্তি্ত্ব পরিমাপ। ব্যাক্তিত্বের মনস্তাত্বিক দিক সম্পর্কে আর একটু পড়ালেখাটা ঝালাই করে তারপর সেটা লেখার চেষ্টা করবো না হয় আরেকদিন।
অবশ্য যে কেউ নিজেই নিজের পারসোনালিটি টেস্ট করে নিতে পারে নীচের লিন্কগুলোতে ক্লিক করে নিজের একটা ফোটোগ্রাফ আপলোড করে।
http://www.uniphiz.com/personology.htm
এটা খুবই মজার পারসোনালিটি টেস্ট-
http://similarminds.com/face/start.php
এমন আরও আছে হাজার হাজার । কেউ খুঁজে না পেলে আমাকে বললেই আমি বের করে দেবো। আর সবশেষে বলে রাখি এসব কিন্তু আমার কথা না। সবই মনোবিজ্ঞানীদের কথা। কাজেই কোনো কিছু পছন্দ না হলে আমার কোনোই দোষ নেই।