সেই রাতে রাত ছিলো পূর্ণিমা , রঙ ছিলো ফাল্গুনী হাওয়াতে
সব ভালো লাগছিলো চন্দ্রিমা, খুব কাছে তোমাকে পাওয়াতে।
Click This Link
অপূর্বের অনেক দিনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটিয়াছে আজ। প্রথমবার যখন সে অপরূপ নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্যের এ দেশ নেপাল আসিয়াছিলো। সে রাতেও ছিলো এমনি ফাল্গুনের মাতাল করা উদাস হাওয়া। সেদিনের রাত্রীটিও ছিলো এমনি মধুময়।
নগরকোটের হেভেন হোটেলের এই বারান্দাটিতে বসিয়াই সেদিন তাহার মন হু হু করিয়া উঠিয়াছিলো কোনোএক অদেখা অজানা প্রিয় সঙ্গীনির অভাবে । সেইদিনই প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলো, যদি কখনও তাহার মনের মত কোনো স্বপ্নকুমারী প্রিয়তমার সন্ধান পায় তো মধুচন্দ্রিমারাতি সে এখানেই পালন করিবে।
আজ আকাশে সোনার থালার মত কোজাগরী চাঁদ। ফাগুনের মাতাল বাতাস আর পাশে কন্ঠলগনা অপরুপা প্রিয়তমা। এ ক্ষুদ্র জীবনে আর কি চাহিবার আছে? প্রিয়তমা আজিকে কেন যেন একটু চুপচাপ রহিয়াছে। সকলকে ছাড়িয়া আসিয়া একাকী অপুর্বের সহিত হঠাৎ এমন লাজুক-লতায় পরিবর্তনের কারণ কি, অপূর্বের এমন ভাবনা-চক্করের মাঝেই কন্যা মৃদু স্বরে গুন গুন শুরু করিলো।
চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো
ও রজনীগন্ধা তোমার গন্ধ সুধা ঢালো।
Click This Link
গাঢ় নিলাম্বরী শাড়িতে, এমনি নিশীথ রাতিতে কন্যাকে দেখাইতেছিলো যেন স্বর্গের অপ্সরী । রম্ভা মেনকাও বুঝি তাহার রুপে লাজে মরিবে আজ। অপূর্বের হৃদয় মুগ্ধতায় ভরিয়া উঠিলো। সরিয়া আসিয়া বধুর স্ক্রন্ধের ঘোমটা সরাইয়া আলগোছে খুব সন্তর্পনে সেথায় ওষ্ঠ স্পর্শ করাইলো। আর সহসা চন্চল সেই দুষ্টুমতী বালিকা সকল প্রাজ্জলতা ভুলিয়া লজ্জায় শিহরিয়া উঠিয়া স্বহস্তের দুই তালুতে মুখ লুকাইলো। বঁধুর এহেন লাজুকতাটুকুও যেন অপূর্বের মন কাড়িয়া লইলো। আজ রাত্রীর রুপোলী চন্দ্রাকাশের ক্যানভাসে তাহা অসংখ্য নক্ষত্রের কারুকার্য্যময়তায়
অংকিত হইয়া রহিলো ।
পরদিন প্রাতে সূর্য্যদয়ের প্রাক্কালে অপূর্ব তড়িঘড়ি উঠিয়া বঁধুকে শয্যা হইতে তুলিতে ব্যাস্ত হইয়া পড়িলো। তাহার মনের আরেকখানি সুপ্ত আকাঙ্খা সুপ্তিত ছিলো, বধু সাথে লইয়া দর্শন করিবে হিমালয়ের বরফ তুষার শিখরে ঠিকরাইয়া পড়া প্রথম সূর্য্যকিরণ। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য যাহা তাহাকে মুগ্ধ করিয়ছিলো একদিন ও এমনি এক বাসনা জাগ্রত করিয়াছিলো তাহার মনকুঠুরীতে ।
কিন্তু হায়! অধিক রাত্রী জাগরনের ফলে বঁধু তখন মড়ার মত নিদ্রা যাইতেছে। সে কিছুতেই নিদ্রা হইতে উঠিতে রাজী না হওয়ায় অপূর্ব তাহাকে লেপ কম্বল শুদ্ধ পাঁজা কোলা করিয়া লইয়া গিয়া বারান্দায় দাঁড়া করাইয়া দিলো। যেন এইখানে আসিয়া সূর্য্যদয় না দেখিলে তাহাদের দুইজনার বাকী জীবন বৃথা বহিয়া যাইবে।
বঁধু অসম্ভব বিরক্ত হইয়া চক্ষু রগড়াইয়া যখন সামনে দৃষ্টি প্রসারিত করিলেন । তখন তাহার আঁখিপল্লবে যে অপার মুগ্ধতা খেলিয়া গেলো অপূর্ব তাহাতে পুনরায় নিজেকে হারাইয়া ফেলিলো।
হৃদয়পুরের ব্যাকগ্রাউন্ডে আবারও বাজিতে লাগিলো চিরচেনা সেই প্রিয় সঙ্গীত।
বঁধু কোন আলো লাগলো চোখে?
Click This Link
অবশেষে-পরিশিষ্ঠ
অবশেষে উপস্থিত হইলো সেই নির্মম নিষ্ঠুর দিবস। কি করিয়া হাসিয়া খেলিয়া দীর্ঘ্ তিনটি মাস ইতিমধ্যে অতিবাহিত হইয়াছে তাহা অপুর্ব অনেক হিসাব নিকাষ করিয়াও মিলাইতে পারে নাই।
সে আজ সকাল হইতে প্রিয়তমা বঁধুর মুখপানে চাহিতে পারিতেছে না। বঁধু গত কয়েকদিন হইতে কাঁদিয়া কাঁদিয়া চক্ষু দুইটি ঢোল বানাইয়াছে । মুখখানি যেন আষাড় মেঘের সন্ধ্যার মলিনাকাশ।
অপূর্বের নিজেরও হৃদয় ফাটিয়া যাইতেছে। অনেক কষ্টে মনের দুঃখ বুকে চাপিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। মনকে প্রবোধ দিতেছে আর তো মাত্র একটি বছর, দেখিতে দেখিতে কাটিয়া যাইবে। কিন্তু মন শোনে আর কাহার কথা?
যাহা হৌক
ইত্যবৎসরে বঁধুর দিবস কাটিতেছে অপূর্বের পথ চাহিয়া। সে গান গাহিতেছে, না না ভুল বলিলাম তাহার মনোমাঝে সর্বদা ব্যাকগ্রাউন্ড সঙ্গীত বাজিয়া চলিতেছে।
দিবস রজনী আমি যেনো কার আশায় আশায় থাকি।
Click This Link
আর অপূর্ব যখন পত্র পাইলো , তাহার মাতা পিতা বঁধুমাতার মুখপানে চাহিয়া আর স হ্য না করিতে পারিয়া লিখিলো," ফিরিয়া আসো বাবুল। তোমার আর এই চাকুরীর প্রয়োজন নাই। তুমি বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া আমাদের সকল দুঃখ দূরীভূত করো ও বঁধুমার মুখে হাসি ফুটাইয়া তোলো।"
অপূর্ব আহ্লাদে চমকিয়া ধড়ফড় করিয়া ঘুম ভাঙ্গিয়া মধ্যরাত্রীতে বিছানার উপরে উঠিয়া বসিয়া দেখিলো । সে এতক্ষন যাহা দেখিয়াছে তাহা স্বপন ব্যাতীত কিছুই নহে। কোথায় বঁধু, কোথায়ই বা বিবাহশয্যা আর কোথায়ই বা তাহার মধুচন্দ্রিমা রাতি!
সে বিষম বিরস বদনে তক্তপোষের উপর বসিয়া রহিলো। জানালার ফাক গলিয়া এক খানি উদাসী চাঁদ তাহার দুঃখে সমব্যাথী হইয়া তাহার পানে মলিন হইয়া চাহিয়া রহিলো।
অপূর্ব বুঝি বিধাতার উদ্দেশ্যেই মনোমাঝে ব্যাকগ্রাউন্ড সঙ্গীত বাজাইয়া দিলো।
স্বপন যদি মধুর এমন হোক সে মিছে কলপনা
জাগিওনা আমায় জাগিওনা।
Click This Link
আমিও অপূর্বের দুঃখে বিষম দুঃখিত । কেহ আবার আমার এ কাহিনী বানোয়াট ভাবিয়া আমার উপর ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিবেন না প্লিজ। এ কাহিনী রচনায় আমার কোনো দোষ নাই। ইহা স্বয়ং অপুর্বের কাছে শোনা তাহার স্বপন কাহিনী। বিশ্বাস না হয় অপূর্বের ঠিকানা দিতেছি। নিজেরাই শুনিয়া লইয়া চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভণ্জন করিয়া লউন।
আহা সত্যই কি এ যুগে আর এমন মিষ্টিময় বালিকা বঁধুর সন্ধান পাওয়া সম্ভব ? কখনই নয়। আপনারা সকলে ঠিকই বলিয়াছিলেন।
সমাপ্ত