সবাই জানতে চায়, তুমি কে?
আমি নিরুত্তর থাকি,
শুধু মনেমনে চুপিচুপি বলি,
খোকাভাই সে আমার কিশোরীকাল
আমার চপলতা চন্চল,
পাগলা হাওয়ার বাদলা দিনের-
হঠাৎ ভেসে আসা ধন!
জানো?
সেদিনটার কথা, আমার খুব মনে পড়ে
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে,
দাদুর বিছানার পাশে দেখলাম তোমাকে।
দাদু আর চাচীমা
নিচুস্বরে কথা বলছিলেন।
আর তুমি?
এক উদাসী বালক
ভাবুক আনমনা
স্থির-অচন্চল দৃঢ়কঠিন দৃষ্টিবদ্ধ
পারাবত আমি।
জেনেছিলাম তুমি আমার সেই চাচার ছেলে,
যিনি একদিন
অনেক অভিমানে এবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।
পাল্টা জেদ আর পিতৃত্বের ভালোবাসার দাবীতে
ফিরিয়ে আনেননি তাকে আর কখনও দাদু।
আজ অনেক বছর পরও
ফেরননি তিনি।
ফিরেছিলো তার রক্তের অংকুরিত বীজ,
আর তার প্রিয়তমা,
আমার বিধবা চাচীমা।
জানো, বহুবার আমার মনে হয়েছে,
তুমিও অনেক অভিমানী ছিলে খোকাভাই।
আজন্ম অভিমানী।
তোমার শান্ত, গভীর, বড়বড় চোখজোড়া
আর একটু এলোমেলো চুলের মুখটা
আমি চোখ বুজলেই দেখতে পাই আজও।
আর দেখতে পাই সেই প্রথম দিন দেখা,
দাদুর খাটের পাশে বসে থাকা,
আত্মপ্রত্যয়ী অজানা অচেনা ছেলেটাকে।
ভীষন চুপচাপ আর
একটু যেন একগুয়ে ছিলে তুমি।
সবসময় নিজেকে গুটিয়ে রাখতে
এক শক্ত কঠিন কাছিম খোলসে।
সবার থেকে আলাদা,
অন্য কোনো এক গ্রহের প্রাণী।
এ বাড়ির আর কারো সাথে
কখনও সখ্যতা হয়নি তোমার।
শুধু আমার কাছে
তুমি হয়ে উঠলে,
আমার খেলার সবচেয়ে প্রিয় পুতুলটা।
পরম মমতায়, যতনে আর ভালোবাসায়
আমি সাজিয়ে রাখলাম তোমাকে
আমার প্রিয় পুতুলের বাক্সে।