লালটুকটুক শাড়ী, একগাঁদা গয়না
জবুথুবু শরীর, কম্পমান ভীরু হৃদয়,
কানভরা মা ভাবী আর মামী-খালাদের উপদেশবাণী,
সংকোচ বিহ্বলতায় জড়িয়ে ছিলো দুপা
তবে সবচাইতে সে জিনিসটি অনেকখানি জুড়ে ছিলো
সে আমার এক বুকভরা স্বপ্ন,
সামনের আগামী অনাগত দিনগুলো
ভরে উঠবে নিশ্চয় রঙ্গীন কোনো নাম না জানা আলোরঙে।
যে স্বপ্নটা, ম্লান করে দিয়েছিলো,
শেষ মুহুর্তে তোমার বদলে যাবার শপথের দুঃখটাকেও, খোকাভাই।
সবকিছু পায়ে দলে, দুপায়ে মাড়িয়ে,
আমি মা বাবার বাধ্যগত সন্তানের মত,
চলে এলাম আমার স্বপ্নরাজ্যে।
এছাড়া আমার আর কি করার ছিলো বলো?
তোমার সর্বনাশা নেশা,
আমার নেশার চাইতেও যে অনেক বেশী শক্তিশালী ছিলো ,
সেকথা বুঝতে আমার অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো।
সেই তুমিও বুঝলে ,
তখন অনেক দেরী হয়ে গ্যাছে,
তুমি ফিরলেও,
কিন্তু তখন,
ফেরার আর কোনো পথ ছিলোনা আমার।
খোকাভাই, মনে পড়ে?
কত রাত, লুকিয়ে, ছাদে, সেই জ্যোস্না দেখার স্মৃতি?
আমাদের সেই গোপন স্বপ্নের কথা?
একদিন আমরা সাগরপাড়ে জ্যোৎস্না দেখতে যাবো,
শুনবো চাঁদের রুপোলী আলোয় ঠিকরে পড়া জলের কলতান!
সেই তুমি বদলে গেলে।
রাক্ষুসী নেশা তোমাকে নিয়ে গেলো অনেক দূরে
আমার থেকে অনেক দূরে।
বিয়ের কদিনের মাথায়,
মধুচন্দ্রিমায় গেলাম আমরা,
সেদিন বোধ হয় পূর্ণিমা ছিলো,
আকাশে গোল থালার মত বিশাল চাঁদ,
জলে ঝিকিমিকি রুপোলী আলো,
ঢেউগুলো বার বার এসে আছড়ে পড়ছিলো পায়ের কাছে,
পা ভিজিয়ে দিচ্ছিলো।
আমার ভালোমানুষ স্বামী
আর তার কবিতায় ভাসছিলো জ্যোৎস্নারাত,
এমন এক মায়াময় স্বর্গীয় মূহুর্তে,
মনে হয়েছিলো জীবনে পাবার আর কিছু নেই
আমার বুকভরা স্বপ্নটুকু কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে আজ।
হঠাৎ ঝলমলে জলের ছায়ায় আমি দেখতে পেলাম,
এক আবছায়া ছায়ামূর্তী ,
ঝাকড়াচুল, এলোমেলো শার্ট, গুটানো হাতা,
ঐ ঝাপসা আলোতেও আমি দেখলাম,
গভীরকালো, দুখী একজোড়া চোখ,
ব্যাথাতুর এক যুবক।
যার দুখী চোখ জোড়া,
প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে আমারি দিকে।
আমি শিউরে উঠলাম।
আকড়ে ধরলাম আমার স্বামীর বলিষ্ঠ বাহূ।
আর তারপর,
ঐ সাগরের সব লোনাজল হুড়মুড়িয়ে নামলো আমার দুচোখের ধারায়।
আমার স্বামী, পরম মমতায় জড়িয়ে রইলেন আমাকে।
জ্ঞানী বৃক্ষের মত নিশ্চুপ রইলেন,
একটাও প্রশ্ন করলেন না তিনি।
আর ব্যথাতুর ঝাকড়া চুলের এলোমেলো সেই যুবক,
উদ্দেশ্যবিহীন পদচারণায় দূর থেকে দূরে -
একসময় ক্ষুদ্র বিন্দুতে পরিনত হয়ে,
বিলীন হলো,
ঐ সাগরের নীলিমায়।