মাথার সেই প্রচন্ড যন্ত্রনা আর নেই। চোখের প্রচন্ড ব্যথাও কোথাও যেন হারিয়ে গেছে। কেবল আবছা মনে পরছে আশেপাশের লোকগূলোর উক্তি। একজন বলেছিল “বুকে গুলি কর” অন্যজন বলল, “না, এর মাথা ঝাঝরা কর” তারপর সেই বেটে লোকটার হাতে থাকা পিস্তল থেকে বেড়িয়ে আসল তীক্ষ্ণ বুলেট। ভেদ করল ছেলেটির কপালে। তারপর আরো একটি। প্রচন্ড যন্ত্রনায় যেন ছিড়ে যেতে চাইল মাথার ব্রেইনের প্রতিটি নিউরন। ছেলেটি চিতকার করে উঠল, “পানি, পানি” কিন্তু না। তার ভাগ্যে পানি জুটে নাই। বরং তাদের মধ্যে একজন থু থু নিক্ষেপ করেছিল তার মুখে। এরই মাঝে একজন এগিয়ে এল ভয়ঙ্কর এক ছুরি নিয়ে। খুচিয়ে খুচিয়ে উপড়ে ফেলতে লাগল চোখ দুটি। সেই চোখ যে চোখ দিয়ে দেখে সে অর্জন করেছিল গোল্ডেন এ প্লাস। তারপর আর কিছুই মনে নেই।
কিন্তু এখন সেই বুকফাটা পিপাসা কোথায় গেল?? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ছেলেটা। কোথায় গেল সেই প্রচন্ড যন্ত্রনা? মাথা আর চোখের কোটর থেকে এখনও ফিনকি দিয়ে বেরুচ্ছে তাজা রক্ত। কিন্তু আশ্চর্য!! একটুও ব্যথা করছে না এখন। বরং কেমন যেন এক সুখের অনুভুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীরে। রহস্য ক্রমেই ঘনীভূত হতে লাগল। ছেলেটির মনে হতে লাগল সে যেন ধীরে ধীরে শূন্যের দিকে উঠে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছি আমি? গলা ফাটিয়ে চিতকার করতে চাইল সে। কিন্তু কোন শব্দ বের হল না। ফিনকি দিয়ে বের হতে থাকা রক্তের ধারা আরো তীব্র হল।
আর পাশ থেকে কারা যেন বলে উঠল,”ভয় পেয় না। আমরা সাথে আছি।” সাথে থাকা দুই ব্যক্তিকে এবার ছেলেটি লক্ষ করল। ধবধবে সাদা পোষাক পরা সুঠম দেহী দুই যুবক। চেহারায় মায়াময় মিষ্টতা। তাদের চেহারা দেখেই যেন নিমিষে ভুলে যাওয়া যায় সকল কষ্ট। ‘তোমরা কারা?” সাগ্রহে প্রশ্ন করল ছেলেটি। “আমরা মৃত্যুর ফেরেশতা।” তাদের নির্বিকার উত্তর। “কিন্তু আমার মৃত্যু যন্ত্রনা তাহলে কোথায়?” ছেলেটির আগ্রহী কন্ঠের প্রশ্ন। “নেই। কারন তুমি শহীদ।” এরই মধ্যে অনেকদূর এসে পরেছে তারা। এখানে তাদের সামনে পরল প্রকান্ড এক দরজা। দরজায় দন্ডায়মান আছে সাদা পোশাকের দুজন প্রহরী। তারা দরজা দিয়ে ঢুকতে থাকা প্রত্যেক যাত্রীর পূর্ণ পরিচয় নিচ্ছিল। এক প্রহরী ভরাট কন্ঠে জানতে চাইল, “এ ব্যক্তি কে?” ফিনকি দিয়ে বেরুতে থেকে রক্তের দিকে ইশারা করল ছেলেটির সাথে থাকা এক ফেরেশতা। সাথে সাথে সালাম জানিয়ে রাস্তা ছেড়ে দাড়াল প্রহরী দুজন। তারপর চলতে লাগল আবার নতুন যাত্রা। আর প্রত্যেক প্রবেশপথেই ঘটল একই ঘটনা। রক্তের দিকে ইশারা করতেই পথ ছেড়ে দিল প্রহরীরা।
এক সময় শেষ হল যাত্রা। রবের আরশের সামনে সিজদায় নুয়ে পরল রুহ বহনকারী দুই ফেরেশতা। "এর অপরাধ কি?" জানতে চাইলেন রব। "হে আমাদের রব, এ ব্যক্তি সেই লোকদের দলভুক্ত ছিল যারা তোমার যমীনে তোমার দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত" অবনত মস্তকে জবাব দেয় রুহ বহনকারী ফেরেশতা। “এর নাম সেই সম্মানিত লোকদের তালিকার সাথে যোগ করে দাও যারা সফলকাম হয়েছে।” রবের নির্দেশ শোনা মাত্রই কাজ শুরু করল দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা। আর একজন নানা রকম সুস্বাদু ফলে পরিপূর্ণ এক ট্রে হাতে হাজির হল ছেলেটির সামনে। তার কন্ঠে থেকে বেরিয়ে এল সূরা আল ইমরানের সেই আয়াতটি “তারা (শহীদঅরা ) তাদের রবের কাছ থেকে জীবিকা লাভ করে।”
ছেলেটির মাথা আর চোথের ক্ষতস্থান থেকে এখনও ফিনকি দিয়ে বেরুচ্ছে লাল টকটকে রক্ত। আর সেই রক্ত থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পরছে মেস্কের সুগন্ধি।
“তুমি আমার কাছে কি চাও?” জানতে চাইলেন মালিক। রবের সামনে জিজদাবনত হয়ে বলল ছেলেটি, “হে আমার রব, তুমি আমাকে আবার পৃথিবীতে পাঠাও। আমি আরো হাজারবার শাহাদাতের মৃত্যু চাই।”
উতসর্গঃ ঝিনাইদাহ জেলায় শাহাদাত বরনকারী শহীদ মহিউদ্দিন সোহান ভাই। আল্লাহ তাকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমীন।
লেখকঃ সাইফুল্লাহ আবিদ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৪৮