কেয়ামাত অতি নিকটে! কবে? তা কেউ জানেনা। একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই জানেন কেয়ামাত কবে সংঘটিত হবে। তবে হাদীসের মাধ্যমে আমরা কেয়ামাতের কিছু আলামাত জানতে পারি। এই আলামাতগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়- কেয়ামাত অতি নিকটে। আসুন দেখি আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু কেয়ামতের আলামত-
* সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বিলুপ্তি ও মূর্খদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, অশ্লীলতা বৃদ্ধি পাওয়াঃ
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ঐ সত্তার শপথ- যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না অশ্লীলতা ও কার্পণ্যতা বৃদ্ধি পাবে, বিশ্বস্তকে ঘাতক এবং ঘাতককে বিশ্বস্ত মনে করা হবে, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বিলুপ্তি ঘটবে, মূর্খদের জনপ্রিয়তা ও মাতব্বরি বেড়ে যাবে। (মুস্তাদরাকে হাকিম)
বর্তমানে নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা বা খেলোয়াররা যে সম্মান পান একজন শিক্ষিত স্কুলের মাস্টার বা কলেজের প্রফেসর কী সেই সম্মান পান?
* পিতাকে পর ও বন্ধুকে আপন মনে করাঃ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিরমীযি শরীফের একটি দীর্ঘ হাদিসে কেয়ামতের অনেকগুলো আলামত বর্ণনা করা হয়েছে। তারমধ্যে একটি হল- পিতাকে দূরে ঠেলে বন্ধুকে আপন মনে করা।
আমরা দেখি অনেক ছেলে-মেয়ে তাদের জীবনের ছোটোখাটো বিষয় তো বটেই অনেক বড় বড় ক্ষেত্রেও বন্ধু-বান্ধবের পরামর্শকে প্রাধান্য দেয় পিতা-মাতার পরামর্শের চাইতে। অনেক মানুষের পিতা-মাতার সাথে ব্যবহার জঘন্য অথচ তারাই বন্ধু-বান্ধবের সাথে ব্যবহারে অমায়িক। পিতাকে সহযোগিতার চাইতে বন্ধুর উপকারে আজকাল মানুষ বেশি ব্যস্ত।
* পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতির পদাঙ্ক অনুসরণঃ
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অবশ্যই তোমরা পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতিসমূহের হুবহু অনুসরণ শুরু করবে। তারা যদি এক হাত সামনে গিয়ে থাকে,
তোমরাও যাবে। এক গজ পেছনে গিয়ে থাকলে, তোমরাও তাই করবে। এমনকি তারা যদি কোন সাপের গর্তে প্রবেশ করে, তোমরাও সাপের গর্তে প্রবেশ করবে। জিজ্ঞেস করা হল- ইহুদী-খৃষ্টানদের মত? নবীজী বললেন- তা না হলে আর কাদের মত?
কাযী ইয়ায রহ. হাদীসের ব্যাখ্যায় লেখেন, এখানে গজ, বিঘা ও সাপের গর্তে প্রবেশ বলে পরিপূর্ণ অনুকরণের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। (ফাতহুল বারী)
ইহুদী- খৃষ্টানদের পরিপূর্ণ অনুকরণ বলতে তাদের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কিংবা তাদের আবিষ্কৃত পণ্যদ্রব্য ব্যবহার উদ্দেশ্য নয় বরং তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, সমাজ -সংস্কৃতি, অশ্লীলতা, নোংরামি, সুদযুক্ত অর্থনীতিতে অবাধ লেনদেন ইত্যাদির অনুকরণ উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
জন্মদিন, মৃত্যবার্ষিকী, বিবাহ বর্ষিকী, থার্টিফাস্ট নাইট এগুলোও ইহুদী-খৃষ্টানদের কৃষ্টি-কালচার; যা আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত।
* স্বল্প কাপড় পরিহিতা মেয়েদের আত্মপ্রকাশঃ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- দুই প্রকার জাহান্নামী সম্প্রদায় এখনো আমি দেখিনি, ১) ষাঁড়ের লেজ সদৃশ চাবুক দিয়ে মানুষকে প্রহারকারী অত্যাচারী সমপ্রদায়। ২) আবেদনময়ী বস্ত্র-বাহী নগ্ন নারী সম্প্রদায়। আবেদন সৃষ্টি করতে তাদের মাথাগুলো একপাশে ঝুঁকিয়ে দেবে। তাদের মাথাগুলো উটের কুঁজের মত উঁচু দেখাবে। এসব নগ্নপ্রায় মহিলা কখনো জান্নাতে প্রবেশ তো দূরের কথা; জান্নাতের সুঘ্রাণও তাদের কপালে জুটবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ তো এত এত দূর থেকেই অনুভব করা যায়। (মুসলিম)
* সুশিক্ষার অভাব ও ব্যাপক মূর্খতার প্রসারঃ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- নিশ্চয় কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে (ইসলামী) জ্ঞান উঠে যাবে এবং সর্বত্র মূর্খতা ছেয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ)
অন্যত্র বলেন- এমন এক কাল আসবে, যখন মানুষ জানবে না -নামায কি! রোজা কি! সাদাকা কি! (তাবারানী)
বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও টেকনোলোজিকাল বিষয়ে খুব এগিয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোও। কিন্তু দু:খজনক হল, এ সমস্ত বিষয় যেমন দিন-দিন উন্নত হচ্ছে তার বিপরীতে দ্বিনী শিক্ষার হার ততই কমছে। আজকে পাঁচ বছরের শিশুও স্কুলে কম্পিউটার চালাতে শেখে। কিন্তু কয়জন ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট জানে, কি কি ভুলের কারণে নামাযে সাহু সেজদা দিতে হয়।
এরকম আরো অনেক কেয়ামতের আলামত রয়েছে যা আমাদের সমাজে ব্যাপক হারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন, স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করে মাকে অসন্তুষ্ট করা।মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ইত্যাদি।
কেয়ামত হবে। কেয়ামতের আলামত প্রকাশ পাবে। এটা স্বাভাবিক | তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন আমদের থেকে এই ধরণের কিছু প্রকাশ না পায়। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।