কাকের সমাবেশ
সাইফুল ইসলাম সাকিব
কাকগুলো আজ সকাল থেকে চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে। থামছেই না। ওদের ডাকাডাকিতে কান ফাঁটার জোগার হয়েছে আশেপাশের লোকদের। রাজ্যের কাক এসে জমা হয়েছে যেন আলেয়া বেগমের বাড়ির সামনে ছোট উঠানে। ওদের যেন আজ সমাবেশ আছে । তাই কাউকেই এর আশপাশ দিয়ে যেতে দিচ্ছেনা। যে কেউ রাস্তা দিয়ে যাওয়া শুরু করেছে তো কাক এসে তার মাথায় বা ঘাড়ে আঁচড় বসিয়ে দিচ্ছে নখ দিয়ে। এই অবস্থা দেখে কেউ বাহিরে বের হবার সাহস পাচ্ছেনা। উঠানের অদূরে এক পুকুরে একটি মেয়ে হাড়িপাতিল ধুতে এসেছিল, ওমনি এক কাক এসে দিল তার মাথায় আঁচড় বসিয়ে। বেচারি ভয়ে পুকুরে লাফিয়ে পড়ল। মেয়েটি বুঝতে পারেনি যে কাক তাকে এভাবে হামলা করবে।
এদিকে বাড়ির পুরুষেরা বাহিরে বের হতে না পেরে অধৈর্য্য হয়ে উঠছে। এভাবে যদি ঘরে বসে থাকতে হয় তাহলে চলবে কিভাবে! শেষে অনেকে ছাতি মাথায় আবার কেউ লাঠি ঘুরাতে ঘুরাতে কোনমতে ঐ উঠোনটি পেরোল। আর আশেপাশের মহিলারা লেগে পড়ল কাকের এই সমাবেশের কারণ উদ্ঘাটন করতে। তারা দেখল একটি কাকের বাচ্চা উঠানে আধমরা পড়ে আছে, আর ওটাকে ঘিরেই কাকের এই শোরগোল।
এই অর্ধমৃত কাকের বাচ্চা আর অন্যসব কাকের চেঁচামেচি দেখে আলেয়া বেগমের মনে পড়ে গেল দু’বছর আগের ঈদের কথা। সেবার ঈদের ছুটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেতে ফিরছিল তার ছোট ছেলে ইমরান। ইমরান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্র এবং খুব ধর্মিক। যে কোন রাজনৈতিক কোন্দল থেকে দূরে থাকত। অনেক দলই তাকে নিতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। বরং তার সংস্পর্শে অনেক খরাপ ছাত্রই ওসব দল-টল ছেড়ে দিয়ে ভালোর পথে আসছিল। আর একারণেই অনেক দলীয় নেতা কর্মীদের চোখের বিষে পরিণত হয়েছিল ইমরান। তারই পরিণামে ঈদের দু’দিন আগে মায়ের জন্য কাপড় আর টিউশনি করে পাওয়া কিছু টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসিদের হাতে জনসম্মুখে খুন হয় ইমরান। সেখানে উপস্থিত কেউ তার প্রতিবাদ করেনি। বাড়িতে ফিরেছে ইমরানের লাশ।
আজ আলেয়া ভাবে, হায়রে পৃথিবীর মানুষ! একটা কাকের প্রতি অন্য কাকের যে সহমর্মিতা একজন মানুষের প্রতি অপর মানুষের ততটুকু সহমর্মিতা, সমবেদনা নেই। এখন শতশত মানুষের সামনে একজন মানুষকে খুন করে ফেলা হয় কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনা।
বেলতলা, আমানতগঞ্জ, বরিশাল