আউল-বাউল-লালনের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। নয়ন জুড়ানো অপরম্নপ দৃশ্য মনকে কখনো কখনো সুরের ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। চারিদিকে থই থই পানি আর পাখিদের কলকাকলি প্রকৃতির মাঝে বিলীন করে দেয় যেকোন সৌন্দর্যপিপাসু মানুষকে। দর্শক বলছিলাম হাওড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্যের কথা। বাংলাদেশের একটি বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে হাওড়-বাওড়। যে হাওড়-বাওড়গুলোতে বিচরণ করে দেশী-বিদেশী নানান প্রজাতির জলজ ও উভচর প্রাণী। এইসব হাওড়-বাওড় ও প্রাণীকুল যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রৰা করতে ভূমিকা রাখে, তেমনিভাবে দেশীয় মাছের চাহিদা পূরণে সবচেয়ে বেশি গুরম্নত্ব বহন করে। একসময় আমাদের দেশের মানুষ প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো থেকে আহরিত মাছ ধরে পারিবারিক চাহিদা পূরণ করে দেশীয় প্রজাতির মাছ বাজারে বিক্রি করে দিতো। কিন' বর্তমানে হাওড়-বাওড় গুলো পরিকল্পনা আর তদারকির অভাবে বিলীন হতে চলেছে। সুনামগঞ্জের বড়দৈ কাষ্টগঙ্গা জলমহালের অবস'াও হয়ে উঠেছিল বিলীন প্রায় হাওড়গুলোর মত। আর তাই পরিবেশবাদী সুচিনৱার ৬জন বন্ধু মিলে উদ্যোগ গ্রহণ করে এই জলমহালের পূর্বের রম্নপ ফিরিয়ে এনে প্রাকৃতিকভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ করার। প্রায় চারশত একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা এই হাওড় সরকারী প্রক্রিয়ায় লীজ নিয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে শুরম্ন করে তাদের যাত্রা। মোটা অংকের টাকা ব্যয় করে হাওড়ের প্রাকৃতিক রম্নপ ফিরিয়ে আনতে ডগ খনন করে বনজবৃৰ রোপনসহ প্রাকৃতিকভাবে দেশীয় মাছ উৎপাদনের পরিবেশ গড়ে তুলতে শুরম্ন করেন তারা। হাওড়ের মধ্যে নিজেদের থাকার বাংলো নির্মাণ করে সেখান থেকেই তদারকি করা হয় হাওড়ে কর্মরত লোকজনদের। মনোরম পরিবেশ তৈরি করে প্রাথমিক ভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা ছাড়া হলেও দেওয়া হয় না কোন রকম কৃত্রিম খাবার। হাওড়ের প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই বড় হয় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন রকমের মাছ। বছরের নিদৃষ্ট সময় মাছ ধরা হলেও তিন বছর পর একবার মাছ ধরা হয় যাকে বলা হয় ফাইল ফিশিং। কয়েক যুগ আগে এই হাওড়ের ইতিহাস ছিল অন্যরকম। () বর্তমানে এই হাওড়ে কাজ করে কয়েক শত লোক। যারা একেবারে বেকারত্বের অভিশাপে তলিয়ে যেতে বসেছিল। বড়দৈ কাষ্টগঙ্গা জলমহালকে পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষের আওতায় আনার ফলে শতশত গ্রামের মানুষের পারিবারিক মাছের চাহিদা পূরণ হচ্ছে একেবারে বিনা খরচে। শুধু তাই নয় বছরের নিদৃষ্ট সময়ে যখন পানি কমতে শুরম্ন করে তখন গ্রামের কৃষকরা হাওড়ের জমিতে ধান চাষ করে।() পারিবারিক মাছের চাহিদা ও ধান চাষের জন্য গ্রামবাসীদের কোন রকম অর্থ দিতে হয় না লীজ গ্রহীতাদের। সে কারণেই হাওড়ের পাড়ে বসবাসকারী হাজারো মানুষের জীবনে ফিরে এসেছে সুখের দিন।() সুনামগঞ্জের এই জলমহালের মত যদি দেশের অন্যান্য পতিত হাওড়-বাওড়গুলোকে সরকারী বা বে-সরকারীভাবে প্রকল্পের আওতায় এনে মাছ চাষ করা যায় তাহলে প্রকৃতি যেমন ভারসাম্য বজায় রাখতে সৰম হবে তেমনিভাবে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন রকমের মাছ প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব হবে বলে সংশিস্নষ্টদের ধারণা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২০