হবিগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেটবাসীর প্রিয় খাবারের তালিকায় প্রথমেই স'ান করে নিয়েছে শুটকি মাছ। প্রায় প্রতিদিনের তরকারীর সাথে একটি শুটকির আইটেম না থাকলে সিলেটবাসীর খাবারই অসম্পূর্ন থেকে যায়। শুধু সিলেটে নয় এই শুটকি এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে সারাদেশে। আর তাই মৎস্য আহরোনকারী জেলে সম্প্রদায় বর্তমানে শুটকি শিল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলস ভাবে। সেই ধারাবাহিকতায় সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার হাওড় অঞ্চলের বানিয়াচং উপজেলার বাঘহাতা, গাজীপুর, শানিৱপুর, সুনারম্ন, নাগুরা এবং ভাটিপাড়ায় গড়ে উঠেছে অনেকগুলো শুটকির ডাঙ্গা। এইসব শুটকির ডাঙ্গায় দেশীয় প্রজাতির পুঁটি, চিংড়ী, কাকিয়া, শইল, গজার, টাকি, বাইম, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রকার মাছের শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। তবে বেশি উৎপাদন করা হয় পুঁটি মাছের শুটকি। ভাটিপাড়া গ্রামটি চারিদিকে হাওড় দ্বারা বেষ্টিত আর সেই কারণেই ভাটিপাড়ার মানুষেরা অধিকাংশই মৎস্যজীবি। গ্রামের পুরম্নষেরা মৎস্য আহরোন করে নিয়ে আসে আর গ্রামের বেকার মহিলারা এই আহরিত মাছ শুটকি করার প্রক্রিয়ায় ব্যসৱ থাকেন বছরের নির্ধারিত সময় অর্থাৎ আশ্বিন থেকে মাঘ মাস পর্যনৱ।
শুটকি শিল্পের প্রক্রিয়াকরণঃ স'ানীয় হাওড় ও নদী থেকে সংগৃহিত মাছ শুটকির ডাঙ্গায় এনে শুটকি করার প্রথম ধাপে মাছের আসটে ছাড়ানো হয়। আসটে ছাড়ানো আর পাখনা ও পেটের নাড়িভুড়ি বের করার পর দ্বিতীয় ধাপে নিয়ে যাওয়া হয়। শুটকি প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে আসটে, পাখনা ও নাড়িভুড়ি পরিস্কার করা মাছে স্বাস'্যসম্মত লবন মাখানো হয় এবং কিছুৰন পর পরিস্কার পানিতে মাছ ভাল ভাবে ধুয়ে নেওয়া হয়। পরিস্কার পানিতে ধুয়ে নেওয়ার পর ঐ মাছকে পরবর্তী ধাপে শুটকির ডাঙ্গায় রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। নিরাপদ নেটের বেস্টনীর মধ্যে বা মাচার উপর এই সব মাছ ৬-৭ দিন শুকাতে হয়। এই সময়ের মধ্যে মাঝে মাঝে মাছগুলোকে ওলট-পালট করে দিতে হয়। অনেক সময় আকাশ মেঘলা হলে বা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে সারাদিন রোদে মাছ শুকানোর পর অনেকে বসৱায় ভরে বাড়ীতে নিয়ে রেখে দেয় এবং পরের দিন সকালে আবার রোদে মেলে দেয়। মাছ পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে তারপর বাজারজাত করণ করা হয়।
হবিগঞ্জের স'ানীয় বাজারগুলোতে এই সব দেশীয় প্রজাতির শুটকির পাশাপাশি সামদ্রিক মাছের শুটকি পাওয়া যায় ব্যাপক হারে। এই বাজার থেকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে শুটকি ব্যবসায়ীরা শুটকি নিয়ে যায়। শুটকির ব্যবসায় অনেকেই এখন সফল। শুধু তাই নয় হবিগঞ্জ জেলার এই শুটকি শিল্পের সুনাম ও চাহিদা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বৃটেন, আমেরিকা, সৌদিআরবসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি শুরম্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। কোন রকম রাসায়নিক ছাড়াই উৎপাদিত এই শুটকি মানব স্বাসে'্যর জন্য পুরোপুরি নিরাপদ ও স্বাস'্যসম্মত। দেশের এই সম্ভাবনাময় শুটকি শিল্পের উন্নয়নকল্পে শুটকির সংরৰণাগার নির্মান করে বেশি বেশি শুটকি উৎপাদন করতে পারলে দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানীখাতকে প্রসারিত করতে পারলে এই শুটকি শিল্প থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার সম্ভাবনা অনেকটাই আশাব্যঞ্জক।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৫