রাস্তার মোড়ে মোড়ে, মহল্লার আনাচে-কানাচে রীতিমতো টাকা হলে সবই মেলে। যেমন টাকা দিয়ে প্রশাসনের মুখ বন্ধ করে রাখে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার আশায় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে। ঠোঁট টিপে হাসে। তার মানে তোরাও চালিয়ে যা আমাদেরও চালা।
মাদকের এই সহজলভ্যতা প্রত্যেক বিবেকবান মানুষকেই ভাবিয়ে তোলে। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরাসহ সব বয়সের মানুষই মাদকের নেশায় বুদ হয়ে যাচ্ছে। বুদ হলে তো কথাই ছিল না। এরাই রাস্তায় ছিনতাই করছে, পকেট মারছে, সেই সাথে পেটে মারছে চাকু। সমাজের অসামাজিক অধিকাংশ কাজই এরা করছে। এরাই ঘরে এসে বউ পেটাচ্ছে। তাও আবার রাতভর গাছের সাথে বেঁধে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামে। আর ঘটনার নায়ক হলেন সামছুর হক সেলিম। তিনি শক্ত সমর্থ এক যুবক। রাতে নেশা করে বাড়িতে এসে বউ পারুলকে পেয়ারা গাছে সাথে বেঁধে নির্যাতন করেছেন। পারুলের চিৎকার গ্রামবাসীর ঘুম ভাঙলেও তারা সাহস পাইনি নেশাগ্রস্ত সেলিমের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করতে। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে তারা। আর মেয়েটি রাতভর নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সকালে গ্রামবাসী পারুলকে উদ্ধার করে সেলিমের বিচার চেয়েছে। কিন্তু গ্রামবাসী বিচার চাইলেইতো আর বিচার হবে না। এখানেও আছে আইনী জটিলতা। অভিযোগকারী যদি অভিযোগ না করে তাহলে সেলিম থেকে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমার বিশ্বাস পারুল সেলিমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করবে না। কারণ সে সেলিমের ঘর করতে চায়। এমন সেলিম-পারুলের মত অনেক সংসারে অশান্তির কালো ছায়া গ্রাস করেছে শুধু মাদকতার কারণে।
কোনো পরিবারের সন্তান যদি নেশাগ্রস্ত হয় তাহলে সে পরিবারের যে কত অশান্তি বিরাজ করে তা শুধু ওই পরিবারই জানে। স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যায় কাচের মত যা আর কখনো জোড়া লাগার মত সম্ভাবনা থাকে না। মাদকের কাছে এই যে পরিবারের অসহায়ত্ব এটা কারোরই কাম্য হতে পারে না।
নেশার ফলে স্নায়ুতন্ত্রগুলো বোথা হয়ে যায়। ফলে যেকোনো অসামাজি কাজকর্ম মানুষ অবলীলায় করতে পারে। গবেষণার এক জরিপ থেকে জানা যায় দেশের প্রায় ১৫ কোটি জনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে কম করে হলেও ১৫ লাখ মানুষ বর্তমানে মাদকাসক্ত, যার অর্ধেকের বেশি একাধিক মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে, এদের মধ্যে ৬১ শতাংশ গাঁজা, ২৮ শতাংশ ফেনসিডিল, হেরোইন, পেথিডিন ব্যবহার করে। আর শহরের মানুষের মধ্যে ফেনসিডিল, হেরোইন, পেথিডিনের এবং গ্রামের মানুষের মধ্যে গাঁজা, ভাং, চরশ, বাংলা মদ ইত্যাদির প্রকোপ বেশি।
ঠেকাতে হবে মাদকের আগ্রাসন। আর এ উদ্যোগ আমি আপনি নিলেই হবে না। নিতে হবে সবাইকে। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাশাসনকে হতে হবে তৎপর। আগামী দিনের কর্ণধার যদি অসুস্থতা নিয়ে বেড়ে ওঠে তাহলে দেশ ও জাতি তার কাছ থেকে কিছুই আশা করা যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৩৮