সরকারের নেয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ৭ হাজার ৪১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সরকার ২০১৩ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুদ্র সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, হাওর এলাকার পানি অপসারণ, উন্নত মান ও ফলনশীল বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিতরণ এবং এলাকাভেদে দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাাবিত বাজেটে।
চলতি অর্থবছরে প্রায় ১২ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এপ্রিল ২০১১ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৮১.৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে কৃষি ঋণের জন্য ১৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কৃষি খাতের ভর্তুকির জন্য ৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে ২শ’ কোটি টাকা কম। সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরে কৃষি ভর্তুকি বাবদ সার্বিক বরাদ্দ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭’শ কোটি টাকা। কৃষকরা আশা করছেন, আগামী অর্থবছরে ভর্তূকি ব্যয় হয়তো আরো বাড়ানো হবে। ঘোষিত বাজেট অনুযায়ী ভর্তুকির অর্থ মূলত সার, বীজ, ডিজেলসহ কৃষির বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হবে। আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ৫৪ হাজার ২১৩ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর এক লাখ ৩০ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন করা হয়েছে, যা চাহিদার ৫৮ শতাংশ। বলা হয়েছে, লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিনা-৮, ব্রি-৪৭ এর আবাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া লবণাক্ততা সহিষ্ণু ব্রি ধান ৫৩, ৫৪ এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় ব্রি-৫১, ৫২ ধান চাষ করা হবে। এরই মধ্যে উল্লেখিত জাতের ধানের বীজ উদ্ভাবন করা হয়েছে।
কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছর নতুন করে আরো ৬শ’টি কৃষি বিপণন দল ও ২শ’টি কৃষি ক্লাব স্থাপন করবে সরকার। এর আগে দেশে ৪৯০টি কৃষি বিপণন দল এবং ১৬ হাজার ৬৭৭টি কৃষি ক্লাব স্থাপন করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের উৎপাদিত শস্যের উপর শস্যমূল্য সহায়তা প্রদানের জন্য কৃষি বীমা চালু করার উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি করলেও প্রস্তাবিত বাজেটে পাইলটভিত্তিতে একটি উপজেলায় শস্য বীমা চালু করার লক্ষ্যে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত বীমা প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা কর্পোরেশন একটি পাইলট স্কিম প্রণয়ন করছে। আশা করা হচ্ছে পাইলট কর্মসূচিটি আগামী অর্থবছরে চালু করা সম্ভব হবে।
কৃষি গবেষণা ক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করে আসছে। ইতোমধ্যে গঠিত ৩৫০ কোটি টাকার কৃষি গবেষণা ফান্ডের আকার মুনাফাসহ বর্তমানে ৪৫০ কোটি টাকা হয়েছে যা থেকে অর্জিত মুনাফা দিয়ে সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষি গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে। পাট থেকে শুরু করে চা পর্যন্ত সব ধরনের কৃষি গবেষণা এ ফান্ডের আওতায় নিয়ে আসা হবে। পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে কৃষি গবেষণায় যুগান্তকারী সফল্য এসেছে। কৃষি গবেষণা কার্যক্রমকে জোরদার করার জন্য খুব তাড়াতাড়ি ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল আইন, ২০১১’ অনুমোদন হবে।
১৯৯৯ সালে প্রণীত জাতীয় কৃষিনীতি সংশোধন করে জাতীয় কৃষিনীতি-২০১১ চূড়ান্ত করা হবে আগামী অর্থবছরে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় অতীতের সব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করে চাহিদা মেটানো হবে। এতে কৃষক উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাবেন এবং উৎপাদনে আরো আগ্রহ পাবে। আসছে অর্থবছর ভিজিএফ খাতে ৪ লাখ ৭০ হাজার, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি খাতে ৪ লাখ, ভিজিডি খাতে ২ লাখ ৬৫ হাজার, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৪ লাখ ১০ হাজার এবং খয়রাতি সাহায্য খাতে ৮০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ওএমএস ও রেশনিং কার্যক্রম যৌক্তিকভাবে চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রেশম শিল্প, চা বাগান, পোশাক ও বস্ত্র শ্রমিকদের কম দামে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হবে। ভোজ্য তেলের ব্যবহার কমিয়ে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বর্তমান অর্থবছর শেষে দেশে মোট ১১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের মজুদ গড়ে উঠবে, যা আগামী বছর শেষে ১৩ লাখ টনে উন্নীত হবে।
জাটকা নিধন প্রতিরোধ কার্যক্রমে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, স্থানীয় মাছ চাষিদের সম্পৃক্ত করায় ইলিশের উৎপাদন অনেক বেড়েছে এবং চিংড়ি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় মাছের জাত সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয় হয়েছে।
প্রাণিসম্পদের উপর ৫% কারারোপ করা হয়েছে। মাংস ও দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে ২০০টি কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট নির্মাণ, সিমেন উৎপাদনের জন্য ১টি ল্যাব, বুল স্টেশন স্থাপন এবং স্বেচ্ছসেবী ও খামারিদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
গবাদি পশু এবং হাঁস ও মুরগির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য চলতি অর্থবছরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ কোটি ৮৮ লক্ষ ডোজ টিকা বিতরণ করা হয়েছে এবং ১ কোটি ৯১ লক্ষ ডোজ মজুদ রয়েছে। এছাড়া সরকারি হাঁস-মুরগির খামারসমূহে আগামী অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৩ লক্ষ ১৮ হাজার হাঁস-মুরগির বাচ্চা উৎপাদন ও বিতরণ সম্ভব হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এ উৎপাদন কম হওয়ায় হাঁস-মুরগির খামারগুলোকে আধুনিকায়নের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। আর এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে মৎস্য ও প্রানিসম্পদ খাতে ৯৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৩:৫০