তারিখ:৬ আষাঢ় ১৪২৬ বাংলা
মেঘলার সাথে আমার খুব ভাব। বলতে গেলে প্রেম জমে একেবারে ক্ষীর ক্ষীর। দুপুর ৩ টায় মেঘলার কল আমার মোবাইলে।
এই তুমি কই?
আমি আচমকা হয়ে বললাম আমি তো বাসায়,কেন কি হয়েছে?
কয়েকটা ছেলে আমার পিছু নিয়েছে,জলদি ১১ নং সেক্টরের লেক পার্কে আসো। এটুকু বলেই কেটে দিলো মেঘলা। দুপুর খাবার ফেলে রেখেই তড়িৎগতিতে ছুটলাম ঐ ১১ নং সেক্টর লেক পার্কের পথে,যেই হোক,যারাই হোক আজ তাদের রক্ষা নেই। কতবড় সাহস আমার মেঘলার পিছু নেয় ওরা। সব শালাদের আজ ইচ্ছেমত কেলাবো। আজ ওদের জানে রক্ষা নেই। আমার মেঘলা সামনে থেকে সব দেখবো,আর বলবে মার শয়তানগুলোকে মার। ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে যথাস্হানে হাজির হয়ে দেখি,মহারাণী বসে আছেন পায়ের উপর পা তুলে। আশে পাশে মানুষ থাকবে তো দূরের কথা,কাক পাখিদেরও দেখা নেই। আমি হাফাতে হাফাতে বললাম,কি হয়েছে?
সে খুব রাগ হয়েই বলতেছে,কি হয়েছে মানে? এতক্ষণ লাগে আসতে? ১০ মিনিটের পথ ২৫ মিনিট লাগলো কেন তোমার? দিন দিন খুব স্লো হয়ে পড়ছো আমার প্রতি। সময় থাকতে লাইনে এসে পড়ো। এতখন ওর অগ্নিবিষাদ বক্তৃতা আমি শালা গিলেই গেলাম। কিছু বলার আগেই আবার মোবাইল বেজে উঠলো চৌধুরী সাহেবের কলে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে চৌধুরী সাহেব বলতে লাগলেন,এই অসভ্য,ইতর,ছোটলোক আমার মেয়ে মেঘলা কোথায়? কোথায় নিয়ে ঘুরছিস হতচ্ছাড়া কোথাকার। সন্ধ্যার আগে বাসায় ফেরত দিয়ে যাবি আমার মেয়েকে। এই বলে ওনিও ফোন কেটে দিলেন। বাপ-মেয়ে দুজন একি স্বভাবের ,পূরিপূর্ণ কথা না বলেই অর্ধেকে কেটে দেয় ফোন। দুইপক্ষের রাগ-ঝাড়ি শুনে আমার বুঝতে বাকী রইলোনা সমস্যা কি হয়েছে। মেঘলা হয়তো আমাকে নিয়ে কোন বেজাল পাকিয়েছে বাসায়।
মেঘলার সাথে আমার বিয়েটা হচ্ছে না আমি বেকার বলে। আমার আর মেঘলার প্রেম সম্পর্কে জানার পর মেঘলার বাবা আমাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে আমি যতদিন না পর্যন্ত সোনার হরিণের চাকরী পাচ্ছি না,ততদিন তার মেয়ে থেকে দূরে থাকতে। আর আমাদের মত ছোট লোকদের প্রেম ভালবাসার কথা ভুলে যেতে বললেন। আমিও ঐদিন চৌধুরী সাহেবকে বলেছিলাম আমরা ছোটলোক নই,আমার পূর্বপুরুষরা ছিলেন নবাব বংশের। তাদের বিষয় সম্পতি হিসাব কষলে রাত পেরিয়ে ভোর,ভোর শেষে দিনের আলো,দিনের আলো শেষে সন্ধ্যা হবে,সন্ধ্যা শেষে আবার রাত। তবুও আমাদের সম্পতির হিসাব কষা শেষ হবেনা। ২ মাসের মধ্যে চাকরীতে জয়েন দিয়ে আপনার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবো এমন চ্যালেঞ্জ দিয়ে চলে আসলাম। চৌধুরী সাহেব বখিলের হাড়,ঐদিন ওনি এমন কথা বলেননি এই নাও ব্লাইন্ড চেক,তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী টাকার পরিমান লিখে নিও,আর আমার মেয়েকে ভুলে যাও। আমি হয়তো পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমার নায়কদের মত করে বলতাম,চৌধুরী সাহেব টাকা দিয়ে ভালবাসা কিনা যায় না। আমি বেকার হতে পারি,তবে আমি প্রতিষ্ঠিত বেকার।
যাই হোক,রাগি মেয়েটার পাশে গিয়ে বসতেই সে বলে উঠলো তার ক্ষুধা পেয়েছে।
ভাবলাম খাওয়া দাওয়া করিয়ে মেয়েটাকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বাসায় দিয়ে আসবো।
প্রিয়তমার ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য গেলাম একুশে রেস্তোরায়। মেঘলা তার ইচ্ছে মত খাবার অর্ডার করে নিলো,এখানে আমার পছন্দের কথা বলতে পারবোনা।মেডাম যা অর্ডার করবে,তায়ি খেতে হবে আমার। খাওয়া দাওয়া শেষে বিল জমা দিতে গিয়ে চোখ আমার কপালে। দুজন মিলে ৪৮০ টাকা বিল বানিয়েছি। আম্মুর বাজারের আলু-পটল থেকে কাটসাট করা টাকা বিয়ের আগেই এইভাবে হজম হয়ে গেলো? তারপরেও আমার আক্ষেপ কিসে, সে তো আমারয়ি। ঢুক গিলতে গিলতে বিল দিয়ে ভের হলাম। পরিচিত মোল্লা কফি হাউজে গিয়ে বসলাম মেঘলাকে নিয়ে। ঠান্ডা মাথায় জিগ্যেস করলাম,এই যে চৌধুরী সাহেবের মেয়ে? কি হয়েছে এবার খুলে বলবেন কি? সেই দুপুর ৩ ঘটিকা হতে ধমক আর ঝাড়িই শুনে যাচ্ছি। সে আমার দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে বলে উঠলো। আমাদের বিয়ে হচ্ছে কবে?
মেঘলার এমন প্রশ্নে এর আগেও বহুবার দ্বিধাদন্দে পড়েছি। আমি দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস ছাড়িয়া বলিলাম শোন মেঘলা, বিয়ে কোন ছেলে খেলা নয়। তোমার বাবাকে আমার দেওয়া চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী আমরা অচিরেই বিয়ে করবো। তবে এটা এখন শুধু কিছুদিনের সময়ের ব্যাপার। তুমি আর কয়েকটা দিন ধৈর্যের সহিত আল্লাহর কাছে দোয়া করো আমার জন্য। সেদিনের মত মেঘলাকে বুঝিয়ে চৌধুরী সাহেবের বাড়ীতে পৌছে দিলাম।
এদিকে চাকরীর জন্য ছোটাছোটি করে শেষ-বেশ সোনার হরিণের সন্ধ্যান পেলাম।
আমার আর মেঘলার সম্পর্কের পাকাপাকি কথা বলার জন্য চৌধুরী সাহেবের বাড়ীতে
১৫ সদস্যর একটি টিম পাঠালাম। চৌধুরী সাহেব সব মেনে নিলেন।
বধূ হয়ে মেঘলা যেদিন আমার ঘরে প্রবেশ করলো,সেদিন মনে হয়েছিলো পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষদের কাতারে আমি। আমার ভালবাসা পৃথিবীর চরম বাস্তবতাকে হার মানিয়ে জয়ী। এখন মেঘলাকে নিয়ে নতুন সমস্যায় পড়লাম। আধুনিক যুগের মেয়েরা রন্ধনশিল্পে কাঁচা থাকে এটা স্বাভাবিক। ছোটকাল থেকেই আদরে কোলে পিঠে বড় হয়েছে মেঘলা। কষ্ট কি জিনিস তা বুঝতেই দেয়নি মেঘলাকে। একদিন আম্মু তাহাকে রান্নাবাড়ার গুরু দায়িত্ব অর্পন করলেন। আমি সকালে অফিসে যাওয়ার পর মেঘলা ফোন দিয়ে বলতেছে,আজ বাসায় একটু আগে আসিও,রান্নাবাড়ার গুরুদায়িত্ব শাশুড়ি মা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। আমি তো খুশিতে বাকবাকম। অফিসের সব কাজ ফেলে তাকে নিয়েই ভাবছি।
মেঘলার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো কলেজর নবীনবরণ অনুষ্ঠানে। কি ভারি মিষ্টি গানের গলা মেয়েটির। প্রথম দেখাতেই যা-তা ভাবে মেয়েটির উপর ক্রাশ খেয়েছিলাম। বিষয়টা কাউকে না জানিয়েই রোজ ওর পিছু নিতাম। যেখানেই তার যাতায়াত সেখানেই আমার উপস্হিতি। এমনকি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র হয়ে আমি ইন্টারমিডিয়েটের ফাস্ট ইয়ারের জুনিয়েদের ক্লাসে গিয়ে বসে থাকতাম মেঘলাকে দেখার জন্য। আমার বন্ধু নাঈম বিষয়টা লক্ষ্য করে বি,বি, সি বাংলার জানালায় খবরটি প্রকাশ করে ফেলে। পুরো ক্যাম্পাস জানাজানি হয়ে গেছে, অথচ যাকে ভালবাসতে শুরু করেছি সে কিছুই জানেনা।
একদিন সকালে মেঘলা তার গ্যাং গ্রুপ নিয়ে হাজির আমার সামনে। মেঘলার এমন আচমকা উপস্হিতিতে আমার পিঠ ঘামে ভিজে শার্টে চুইচুই। পিছন থেকে নাঈম বি,বি,সি বাংলা আমার শার্ট ধরে রেখেছে যেন পালাতে না পারি। খুব রাগ নিয়ে চৌধুরী সাহেবের মেয়ে বলে ফেললো,এভাবে পিছু পিছু ঘুরে কোন লাভ নেই! যা বলার আছে সোজাসাপ্টা সামনা সামনি এসে বলবেন। আমি ভেবে দেখবো আপনার বিষয়টা! হাঁ করে সব শুনে নিলাম। দুদিন পর অপরিচিত কোন নাম্বার হতে কল আমার মোবাইলে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পরিচিত কণ্ঠে সালাম পেলাম। সালামের জবাব দিয়ে অচেনার ভং ধরে বললাম কে আপনি?
এমন প্রশ্নে সে অবাক হয়ে বললো ! আমি তোমার মধুর চাক,যার পিছনে সারাদিন মৌমাছির মত ঘুরঘুর করো। মোবাইলে টাকা নেই, মোবাইলে কথা বলতে চাইলে টাকা পাঠাও,আর না হয় দেখা করতে চাইলে ৯ মিনিটের ভিতরে লেক পার্কে চলে আসো। এই বলেই ফোন কাট করলো মেয়েটি।
মনে মনে ভাবছি, কার উপর ক্রাশ খেলাম? যে কিনা প্রেম শুরু হওয়ার আগেই লুটপাট শুরু করে দিয়েছে,এ দেখি জল না চাইতেই বৃষ্টি।............
চলবে.............
দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্তি দিবো।
নোট:চেষ্টা করছি গল্প লিখার।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৯ ভোর ৪:১৩