বিন্তির জন্য দাঁড়িয়ে আছি বটগাছের নিচে। বটগাছের নিচে একটা লাল গাড়ি। গাছের ডালে বসে ফলখেকো পাখিরা টুপটাপ বর্ষণ করছে। লাল গাড়ির ছাদ চিত্রময় হয়ে উঠেছে। আকাশে তাকাব নাকি? আমার মাথার ওপরে কোনো পাখি বসে নেই তো! যেই না তাকিয়েছি, অমনি! পাখিদের টার্গেট এত নির্ভুল হয়।
মাথা থেকে ফলের গুঁড়ো মোছার জন্য টিসু পেপার খুঁজছি।
বিন্তি এসে পড়েছে। রিকশার ভাড়া দিচ্ছে। এই মুখ এখন কোথায় লুকাব।
নীল রঙের শাড়িতে তাকে দেখাচ্ছে অপরূপ। রিকশা থেকে নামতে গিয়ে তার শাড়ি গোড়ালির ওপরে উঠে গেল। আমার বুকটা হু হু করে উঠল।
বিন্তির সঙ্গে আমার পরিচয় ফেসবুকে। এখনো দুজনে দুজনকে ভালোমতো চিনি না। আমার মাথা ভর্তি টাক, একেবারে পাকা তালের মতো। আমার বয়স ৩২, কিন্তু আমাকে দেখতে লাগে ৫২।
ফেসবুকে সুন্দর সুন্দর স্ট্যাটাস দিতাম আমি। নিজের কোনো কাব্যপ্রতিভা আমার নেই। আমার বন্ধু সুমন পাটোয়ারীর স্ট্যাটাস কপি করে পেস্ট করে দিতাম। বিন্তি সেই কাব্যময় স্ট্যাটাস পড়ে আমার প্রতি আগ্রহ বোধ করতে লাগল।
প্রথম দিন আমাকে দেখে সে খুবই হতাশ হয়েছিল। বলেছিল, ‘তুমি কি মিনহাজ, নাকি মিনহাজের আব্বা।’
আমি বলেছিলাম, ‘আমার বয়স মোটে ৩২।’
সে দাঁতে দাঁত চেপে বলেছিল, ‘বিশ্বাস করি না।’
আমি বলেছিলাম, ‘দেখো, খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির হলে থেকে থেকে আমার এ অবস্থা। ওদের পানিতে খুব লবণ। চুল সব উঠে যায়।’
আজকে আমি আমার ম্যাট্রিকের সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি এনেছি। বিন্তিকে দেখাব। এরপর যদি সে বিশ্বাস করে যে আমার বয়স মোটেও বেশি নয়।
বিন্তি বলল, ‘এ কী অবস্থা তোমার! সারা মাথায় এসব কিসের গুঁড়ো? টাকমাথায় বটফলের গুঁড়ো, হি হি হি… কাক টাক পছন্দ করে না।’
আমি বললাম, ‘টিস্যু পেপার আছে না তোমার ব্যাগে?’
সে টিস্যু পেপার বের করল। এমন সময় একটা সাত-আট বছরের টোকাই কোত্থেকে এসে আমার হাত ধরে বসল, ‘আব্বা, আসো, আম্মা ডাকে।’
আমি হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বললাম, বাকীটুকু পড়ুন