শ্রেণিসংগ্রামের চেয়ে সমশ্রেণিভুক্ত বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার যে দ্বন্দ্ব্ব চলে সেদিকে জনতার দৃষ্টি মূলত নিবদ্ধ। এখানে একনায়কতন্ত্র বা কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে, গণতন্ত্রহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বক্তব্য আসে, দুর্নীতি, অনিয়ম, সুশাসনের অভাব, অন্যায়-অবিচার ও অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে জনতাকে সোচ্চার হতে দেখা যায়। কিন্তু চিহ্নিত ধনীদের বিরুদ্ধে কোনো গোষ্ঠীকে জোরালো বক্তব্য রাখতে দেখা যায় না। বাংলাদেশে তো নয়ই। এ দেশে যে দুটি বড় দল রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রক, সম্পদবৈষম্য দূর করে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা তাদের রাজনীতির মূল উপজীব্য নয়। যারা সমাজতন্ত্রের কথা বলে তারা ব্যক্তি হিসেবে সম্মানিত, কিন্তু তাঁদের দলের জনসমর্থন নেই। এখন নাগরিকরা ক্ষমতাকেন্দ্রিক। যে দল ক্ষমতায় আসতে পারবে তার প্রতি তারা আকৃষ্ট। প্রত্যন্ত গ্রামের সমর্থকও হিসাব করে তার দল ক্ষমতায় এলে তার বৈষয়িক তরক্কি কী হবে। কার নীতি ভালো, কে ভালো লোক এটি মূল বিবেচ্য নয়, কেন্দ্রে তার নেতা কত কোটি টাকা উপার্জন করল এটি জানতে সে আগ্রহী নয়, অত টাকা সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা নেই। সে এটুকু বোঝে, তার দল, তার নেতা সরকারে থাকলে গ্রামপর্যায়ে তার কয়েক হাজার টাকা আয়-উপার্জনের পথ সুগম হবে। অতএব দলের প্রতি তার আনুগত্য অবিচল থাকতে হবে। শহরে-বন্দরে, গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষ, এমনকি মধ্যবিত্তরাও জানতে চায় না কোন ধনী পরিবারের কত হাজার কোটি টাকা আছে। এটি তাদের মাথায় ধরে না। তারা শুধু অবাক মুগ্ধতায় এসব শুনে যায়, এ নিয়ে রসাত্মক গল্প করে। একইভাবে বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট, কার্লোস স্লিম, আমানিকো ওরতেগা, প্রেমজি কিংবা আম্বানির বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের হিসাব আমাদের মাথায়ও তাত্ক্ষণিকভাবে ধরে বলে মনে হয় না। আমরা মুগ্ধ হই। আমাদের মধ্যে যারা বৈষয়িক ও চালাক, তারা এ সম্পদের ছিটেফোঁটা কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে অনুদান হিসেবে পেতে পারে কি না সে সম্পর্কে চিন্তা-ধান্দা করতে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে কারো কোনো ক্ষোভ নেই। নিজেদের আয়-উপার্জন ঠিক থাকলেই হলো। আয়-উপার্জন আরো বাড়ানোর জন্য তাদের একাংশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুস্তর মরুভূমি কিংবা উত্তাল সাগর পাড়ি দিতেও রাজি। নগণ্যসংখ্যক কয়েকজন ছিনতাই, ডাকাতি কিংবা নানা ধরনের অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে কুণ্ঠা বোধ করে না। অর্থের লোভে সন্ত্রাসী দলেও তারা নাম লেখায়। তবু তারা জীবনপণ করে ধনিক শ্রেণির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে রাজি নয়। যে কর্মসূচি থেকে নগদ কিছু পাওয়া যাবে না, সে কর্মসূচি সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য।
বৈষয়িক জীবন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমেরিকানরা ভীষণ কনজারভেটিভ
আমেরিকা নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই—এটা প্রথমেই বলে ফেলা ভালো। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমেরিকা তথা উত্তর আমেরিকাতে আমার যাওয়া হয়েছে বেশ কিছুবার। সবগুলো ভ্রমণ যোগ করলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই
ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন
চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।
এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য
চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?
সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসকন
INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন