somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনলাইনে পড়তেই হয়; তবে বইও যেন সঙ্গে থাকে

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমরা বাঙালিরা, যারা এই মার্কিন মুলুকের স্কুল-কলেজে পড়াশুনো করছি, তারা মজা করে বলি, দেবতাদের মিনিস্ট্রিতে এখনই একটা রদবদল দরকার৷ শিক্ষা দপ্তরটা সে ক্ষেত্রে সরস্বতীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে বিশ্বকর্মার হাতে দিয়ে দেয়া উচিত৷ অন্তত আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থা দেখে এ কথা বলাই যায়৷ কারণ, এই মহাদেশ দিন-কে-দিন এমন যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে যে, শিক্ষকতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের যাবতীয় পরীক্ষার বেশিরভাগটাই হচ্ছে অনলাইনে৷ স্রেফ একটা কম্পিউটার, ট্যাবলেট বা স্মার্টফোন নিয়ে বসে পড়লেই হল৷ তবে এখনও আমরা কিছু বই-পত্তর নিয়ে স্কুল-কলেজে যাই বটে৷ সেগুলি আমাদের পড়তেও হয়৷ কিন্তু সেই বইপত্তর বেশিরভাগই অনলাইনে মেলে৷

আমরা অনলাইনে হোমওয়ার্ক পাই৷ শিক্ষকদের সাহায্য লাগলে, তাও পেয়ে যাই অনলাইনে৷ বেশিরভাগ শিক্ষক গ্রেডেশনও করেন সেখানে৷ গোটা প্রক্রিয়াটায় যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্য রয়েছে বেশ কিছু সফটওয়্যার৷ আমরা একে বলি 'ম্যাজিক মেশিন'৷ আরও কয়েকটা নাম বলি৷ যেমন, 'মেম্বিন', এটা ভোকাবুলারির জন্য৷ প্লেজারিয়াজম (বাংলায় এটাকে নকল করা বলে) ভেরিফিকেশনের জন্য আছে 'টার্নিটিইন', বিবলিওগ্রাফির জন্য 'ইজিবিব' ইত্যাদি৷ অনলাইন ডেটাবেসের ক্ষেত্রে রয়েছে 'স্যরস', 'জেস্টর', 'প্রোকোয়েস্ট' প্রভৃতি৷ আবার অনলাইন মেমোরাইজেশন ফ্ল্যাশকার্ডের জন্য আছে 'কুইজলেট'৷ অনলাইন অ্যাপ টেস্ট প্র্যাক্টিসের জন্য 'লার্নেরেটর'৷

কম্পিউটারের লোকেরা যেমন 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' করে, তেমনই এখানে 'হোমস্কুল' বলে একটা সিস্টেম রয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে বাড়িতে বসেই অনলাইনে লোকাল স্কুল বোর্ডের ক্যারিকুলাম ফলো করা যায়, যেটাকে বলে 'ভার্চুয়াল স্কুল'৷ আমি পার্সোনাল ফিনান্সিংয়ে এ রকম একটা ভার্চুয়াল কোর্স করছি৷ পুরো প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাটাই 'সেলফ টট৷' কোথাও আটকে গেলে অনলাইন হেল্প ডেস্ক থেকে আমাদের ইস্যুটা সমাধান করে দেয়া হয়৷ অনলাইনেই আমরা সব শেয়ার করতে পারি বন্ধু বা শিক্ষকদের সঙ্গে৷ অনেক ক্ষেত্রে টেক্সট করেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়৷ তা ছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়া তো আছেই৷ সাহায্য দরকার হলেই আমরা সেটা ফেসবুক, টুইটার বা স্ন্যাপচ্যাটে পোস্ট করে দিই৷ কম্পিউটার বা ট্যাব খোলারও দরকার পড়ে না৷ প্রয়োজন মিটে যায় স্মার্টফোনেই৷

অনলাইন ব্যবস্থাটা খুবই স্মুথ৷ কিন্তু এর কয়েকটা খারাপ দিকও রয়েছে৷ প্রথমত, ক্লাসরুমে বসে শিক্ষক-ছাত্র সবাই মিলে ক্লাস করার যে আনন্দ, সেটা একটা যন্ত্রের সামনে একা বসে মোটেই জমে না৷ বরং বেশ একঘেয়ে লাগে৷ দ্বিতীয়ত, আমরা যারা বই পড়তে ভালোবাসি, তারা বুঝি যে পাতার গন্ধ নিতে নিতে পড়ার যে সুখ, সেটা যন্ত্র নাড়াঘাঁটা করলে মোটেই পাওয়া যায় না৷ তা ছাড়া অনলাইনে অন্য সব কিছুর মতোই পড়াশুনোটাও একেবারে হাটে হাঁড়ি খুলে দেয়ার মতো৷ এখানে ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই৷

ধরা যাক, আমি একটা টেস্ট দিচ্ছি৷ সেই সময়ে কোনও শিক্ষক এসে আমার সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ বা কোনো বন্ধু আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে৷ অনলাইন স্টাডির ক্ষেত্রে এ রকম একটা অনুভূতি হয়৷ সবচেয়ে বড় কথা, অনলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সময় আপাত ভাবে মনে হয় ছাত্ররা একে অপরকে কপি করছে বা চিট করছে৷ দিন কয়েক আগেই, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতেই শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে এ রকম একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে৷

অনলাইনের ঠেলায় আমেরিকার ভালো ভালো বইয়ের দোকানগুলো উঠে যাচ্ছে৷ উইকএন্ডে বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনও বইয়ের দোকানে গিয়ে কফি খেতে খেতে বই বা ম্যাগাজিন বা সংবাদপত্র নাড়াচাড়া করাটা কমে যাচ্ছে দ্রুত৷ আমেরিকায় বড় হয়ে উঠলেও, এই ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে না৷ মডার্ন বা সিভিলাইজড মানে কি শুধু যন্ত্র থাকবে, বই থাকবে না? এ কেমন কথা! টলস্টয় বলেছিলেন, 'মানুষের জীবনে শুধু তিনটে জিনিসের প্রয়োজন, বই, বই আর বই!' আমেরিকায় তো দেখছি, মানুষের জীবনে শুধু তিনটেই মন্ত্র, 'যন্ত্র, যন্ত্র আর যন্ত্র৷'


**লগ্নজিতা মুখোপাধ্যায়: ইলেভেন গ্রেডের ছাত্রী, ন্যাশভিল, টেনেসি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×