………………. ৬মাস ১সপ্তাহ ধরে সামুতে লিখালিখি করছি। লিখালিখির অভ্যাস আরেকটু আগেই, ফেসবুকে। তবে, সেখানে আমি শুধু কবিতা লিখতাম। একটা সময় বুঝতে পারলাম, কবিতা লিখা আমার কাজ না, কেমন জানি অখাদ্য-কুখাদ্য হয়ে যায়!
শুরু হলো সামু যাত্রা। প্রথম প্রথম কিছু লিখতাম না, খালি পড়তাম। তারপর লিখা শুরু করলাম ১
আক্ষেপমুলক আলোচনা টাইপের লিখা দিয়ে।এক বড় ভাই আমাকে ইম্যাচিউর বলেছিলো, খুব মন খারাপ হয়েছিলো তাই ওইটা লিখা। এরপর ভাবলাম, নাহ, লিখাটা চালিয়েই যাই! এরপর বেশ খেটেখুটে একটা দারুণ (আমার কাছে দারুণ মনে হলেও, সামুতে তা ছিলো সর্বকালের ফ্লপ লিখা। ১টা কমেন্ট পরেছিলো মাত্র) সায়েন্স ফিকশন লিখলাম। কিভাবে আত্মার বিশ্লেষন করতে গিয়ে এক লোক সময়ের ফাঁদে পা দিয়ে বসে, তার গল্প। হাল ছেড়ে দেইনি। এরপর লিখলাম হিমুকে নিয়ে! আমি নিজে লিখতে গিয়ে বুঝেছি, হিমু লিখা কতো শক্ত একটা কাজ ! হুমায়ুন আহমেদ স্যারের একটা ধরা-বাধাঁ ভাষা আছে , এ ভাষাটা রপ্ত করাই তো প্রায় ইমপসিবল! তাও মোটামুটি দাড় করিয়ে ফেললাম একটা আমার “ হিমু” ! নাম দিলাম “ হিমু ও কিছু নষ্ট অন্ডকোষ ”। প্রচলিত মজারু হিমু থেকে বেড়িয়ে সৃষ্টি করলাম নায়ক হিমুকে। সামু’র ব্লগাররা নতুন হিমুকে আমন্ত্রন জানিয়েছিলো! সাহস পেলাম, লিখলাম আরেক হিমু! এবারের হিমু একটু কুটিল! রাজনৈতিক ফাঁদে পারা না দিয়ে বরং রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা পারা দিলো হিমু’র ফাঁদে! ধরা খেলো আমার সেই কল্পনার চরিত্র “এডভোকেট পাহাড়া খাতুন” !
নতুন এই হিমু ভালো বাহবা কামালো। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ফোটোব্লগ পোস্ট করে ফেললাম। একজন সিনিয়র ব্লগারের সাথে ভুল বুঝাবুঝি হলো, ব্লগে সেই প্রথম, এখন পর্যন্ত সেটাই শেষ পোস্ট যা আমার অস্থিতিশীল কমেন্টে মুখরিত হয়েছিলো। পরে নিজের ভুল বুঝে ক্ষমাও চেয়েছিলাম।
ইতিমধ্যেই টিভিতে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ফাজলামো দেখে সহ্য হলোনা। ক্ষমতার চুড়ান্ত প্রয়োগ ঘটালাম, তা হলো আবারো ব্লগিং! লিখলাম বৈশাখী টিভির অনৈতিক এই কান্ডকে নিয়ে । ব্লগাররা দেখলেন কিভাবে আমাদের মুক্তি যুদ্ধকে নিয়ে ব্যাবসা চলছে।
গত ২টা দিন খুব মনঃকষ্টে ছিলাম। নারী হয়ে জন্মিয়ে যারা সারাদিন আক্ষেপ করে “কেনো মেয়ে হয়ে জইন্মালাম” , ঠিক একই আক্ষেপ হচ্ছিলো, “কেনো জানোয়ারের জাত হয়ে জন্মালাম” ! মিজানুর রহমান, চাপাঁ রানী’র মৃত্যু আর শত শত মেয়ের এই গ্লানী মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। লিখলাম ইভটিজিং নিয়ে। ব্লগে এই গল্পটা আমি লিখেছি আমার সব থেকে বেশী আবেগ দিয়ে। ব্লগাররা সেটা বুঝেছে মনে হয়। তারা আমাকে নিরাশ করেনি। উচ্ছাসের সাহে লক্ষ্য করলাম, ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে আমার সাথে আছে অনেকে! সামুতে আসছে এই ঘৃন্য কর্মের বিরুদ্ধে অনেক অনেক লিখা! যে দেশে এত্তো কলম যোদ্ধা আছে, সেই দেশে হাতে-গোনা কয়টা বদমাঈশ টিকে থাকবে কিভাবে? আমি অপেক্ষা করছি বড় ধরনের একটি পরিবর্তনের।
অনেকেই হয়তো জানেন না, ব্লগে আমি খুবি কনিষ্ঠ একজন সদস্য। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। ব্লগে দৈনিক ৫-৬ঘন্টা সময় ব্যয় হচ্ছে। এভাবে আসলে আমার দ্বারা ভালো একটা রেজাল্ট আশা করা যাচ্ছেনা। তাই নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম, ৬ মাসের একটা বিরতি নেবার। আজকে রাতের পরেই, অর্থাৎ সকালে ব্রডব্যান্ডের লাইন খুলে নিয়ে যাবে। প্রথম ২০দিন মনে হয় সামু’র দুঃখে পড়াশুনাই করতে পারবোনা! বড় স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দেয়া লাগে, আমিও দিলাম।
সামুতে আমি একজনকে পেয়েছি, যাকে আমি অজান্তেই প্রচন্ড আপন করে ফেলেছি! তিনি হলেন জিকুব্বাই । উনার খলীল-১৩ আমার প্রথম পড়া পোস্ট। আমি অবাক হয়ে ভেবেছিলাম – “He is the going to be someone like Humayun Ahmed Sir”। এরপর আর কি, রীতিমতো উনার ফ্যান বনে গেলাম!
খুজে পেলাম একজন মামাকে , যার কথা-বার্তায় স্নেহের অভাব ছিলো না। আমার মনে হয়, উনার আপন ভাগ্নের সাথে উনি এভাবেই কথা বলেন বা বলবেন! ডেইফ মামা, আপনার লিখা অসাধারণ, তবে এত্তো কষ্টের লিখা আর দিয়েন না। পাবলিক কান্দে!
ব্লগে সবসময় খুব হেল্পফুল ছিলেন আমার জন্য চতুষ্কোণ ভাইয়া, রুশো ভাইয়া , কালীদাস ভাইয়া, এক্স ভাই, পারভেজ আলম ভাইয়া, গুরুজী আর মনসুর ভাইয়ের নাম তো না বললেই নয়। যখন একেকটা পোস্ট দিয়ে বসে থাকতাম, তখন ইনাদের কমেন্ট দেখে একটু ব্যস্ত হয়ে পরতাম, সে কি আনন্দ লাগতো, বুঝাতে পারবোনা!
ব্লগে আমি কখনো গালিগালাজ করিনাই যদ্দুর মনে পরে! তবে আক্ষেপ রয়ে যাবে একটাই, আমি একজনের ব্লগে ব্লকড। রেজোয়ানা আপু, আপনি বয়স, ব্লগিং সব দিক থেকেই আমার অনেক বড়। আমি সর্বসম্মুখেই আপনার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম। নিজের ভুল স্বীকার করেছিলাম। মনে হয়না এই লেখা আপনি পড়ছেন, তবুও আমি আসলেই জানতাম না ওই জায়গার নাম। ভুল লিখেছিলাম, কথা কাটাকাটিও করেছি। আজ আবারো মাফ চাইলাম। মনে একটা আক্ষেপ রয়ে যাবে যে ভুলের মাশুল হিসেবে ব্লক হবার অপমান কপালে জুটেছিলো।
বেশ বড় লিখে ফেললাম। ৬ মাস, কম কথা না। কার যেনো ব্লগে একটা লিখা পড়ে ছিলাম “ আমরা সামু পরিবার।“ পরিবার থেকে ৬মাস বিছেদ থাকাটা খুব কষ্টের। সবার থেকে দোয়া ছাড়া আর কিছু কামনা করিনা। দোয়া করবেন যাতে GPA 5.00 এর সাথে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেবার মতো এটলীস্ট যোগ্যতাটা অর্জন করতে পারি।
সামুর কাছে কয়েকটা আবদার করেই বিদায় নিবো। ইভটিজিং এর উপর একটা স্টিকী পোস্ট, একটা ব্যানার কামনা করছি। আর একটা নোটিফিকেশন সিস্টেম করে দিলে, মন্তব্যের উত্তর জানাটা খুব সহজ হতো।
সবাই ভালো থাকবেন। নতুন ব্লগারদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা। অবশ্য ৬মাস পর নতুন ব্লগাররাই আমার সিনিয়র হয়ে যাবে! হা হা হা।