শাফিন, ফরহাদ সাহেবের ছোট ছেলে. মেয়েটা বড়। ফরহাদ সাহেব পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি সকালে স্কুলে যাবার আগে এবং সন্ধ্যা থেকে বেশ রাত অবধি শাফিন কে পড়ান। বেশ কড়া শাসনে রাখেন। মেয়েকে দিয়ে নাকি তার আশা পূরন হয় নি। তাঁর স্বপ্ন ছিল মেয়ে এস এস সি তে এ+ পাবে। আশানুরূপ ফল না হওয়াই, বিভাগ পরিবর্তন করে বানিজ্য বিভাগে দেন। ওনার ধারনা শুধুমাত্র যারা এ+ পাবে তারাই বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার যোগ্যতা রাখেন। তাই নিজের সর্বচ্চোটা দিয়ে ছেলেকে পড়ান। যাতে ছেলে তার সম্মান রাখে। এজন্য তিনি নিজের বাড়ি ফেলে রেখে শহরে ভাড়া বাসায় থাকছেন। শাফিনকে শহরের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। নিজে শহর থেকে গ্রামে স্কুল করছেন।
শাফিন এবার জে, এস, সি পরীক্ষা দিয়েছিল। অল্পের জন্য তাঁর এ+ মিস হয়ে গেছে। ফরহাদ সাহেব, দুই দিন যাবৎ বাড়ির কারো সাথেই কথা বলছেন না। ছেলের ফলাফল নিয়ে তিনি এতটাই মনক্ষুন্ন, রাতে খাবার টেবিলে আস্তে করে বলে দিয়েছেন, তারা আগামী মাসেই গ্রামে চলে যাবে। ধীরে ধীরে যেন বাড়ির জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলেন।
ফরহাদ সাহেবের এ আক্ষেপ যথাযথই। এত কিছু ছাড় দেবার পরও যদি রেজাল্ট খারাপ হয় সেটা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
শাফিন, তার বাবাকে জমের মত ভয় পাই। কারণ তিনি যেদিন গায়ে হাত তোলেন সেদিন, বোন কিংবা মা, কেউই তাকে থামাতে পারেন না। এদিকে ফরহাদ সাহেব, স্কুলে চলে যাবার পর, শাফিন যা বলবে বাসায় তাই করতে হবে। মা এবং বোন কাউকেই বিন্দু পরিমাণে ভয় পাই না। সে যা বলে তাই করতে হবে। এমন কি গায়ে হাত তোলা পর্যন্ত হয়ে যায়। মাকে মাঝে মাঝে কেঁদে কেঁদে বলতে হয়, তুই এমন করলে, আমি কিন্তু তোর বাবাকে বলে দিব।
দুঃখজনক হলে সত্য, কল্পনার এই শাফিন কিংবা ফরহাদ সাহেবদের সংখ্যা হয়ত নেহাত কম নয়।
আচ্ছা, শিক্ষক হিসাবে না হোক বাবা হিসাবে কি কখনো নিচের কাজগুলো করেছেন?
ছেলেকে পড়াতে বসে হঠাত করে বলা, চল আজ পড়া বাদ, বাপ বেটা মিলে দাবা খেলি।
মোটর সাইকেলে কোথাও যাবার সময়, রাস্তায় মোটরসাইকেল থামিয়ে কি ছেলেকে বলেছেন, রাস্তার মাঝের ঐ কলার খোসাটা ফেলে দিয়ে আয়, নাহলে বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
অথবা মাঝপথে রিক্সা থামিয়ে বলেছেন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা ঐ বৃদ্ধার( যিনি একা রাস্তা পার হতে পারছেন না) হাত ধরে রাস্তাটা পার করে দিয়ে আয়।
এক সময় পুকুরে সাতার কাটতাম। একদিন দেখি এক ভদ্রলোক, তার ৪ বছর বয়সী মেয়েকে কাধে নিয়ে পুকুরে নামছেন। এর কিছুদিন পর দেখি মেয়েটা দিব্বি একা সাতার কাটছে। আপনি কি কখনো আপনার ছেলেকে সাথে নিয়ে পুকুরে বা নদীতে নেমেছেন?
একবার উচ্চপদস্থ এক সরকারি কর্মকর্তার বাসায় গিয়েছি। দেখি ওনার অষ্টম শ্রেনী পড়ুয়া ছেলের সাথে ভীষন তর্ক। ছেলে বাবাকে বলছে, তুমি ঐটা জানো না। এটা হবে। অমুক বইয়ে আছে। পড়ে নিও। অথচ তিনি জানেন কোন বইয়ের কোথায় আছে। ছেলে পড়েছে কি না সেটা নিশ্চিত হবার জন্য ছেলের সামনে ভুল তথ্য বলে। ভেবে দেখুন তো শেষ কবে আপনি এমনটা করেছেন আপনার সন্তানের জন্য।
ভেবে দেখুন তো শেষ কবে পরিবারসহ বাইরে ঘুরতে বা খেতে গেছেন।
পিএসসি, জেএসসি বা এস এস সি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের মাঝে একটা ভীতি কাজ করে। এই বোধহয় ভুল করে ফেললাম। তাদের মানসিক সাপোর্ট দিন। যাতে সে তার সর্বচ্চোটা করে আসতে পারে। একটা পরীক্ষা খারাপ হলে বকাঝকা না দিয়ে যাতে পরের পরীক্ষা ভাল করতে পারে সে ভাবে বোঝান।
শিক্ষিত হবার চেয়ে মানুষ হওয়াটা বেশি জরুরি। আপনার সন্তান মানুষই হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল করুন।
ছবি ইন্টারনেট থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩