--চাচা , যাবেন ?
--কই যাবেন ?
--মোড়ের উপর ।
--হ, যামু ।
--কত ?
--২০ টাকা ।
--২০ টাকা কেন , ভাড়া তো ১০ টাকা ।
--১০ টাকায় ১ প্লেট ভাত হবে বাবা ।
--আচ্ছা চলেন ।
শহরের বেশির ভাগ রিক্সাই যান্ত্রিক । পরিশ্রম কম । এর উপর অনেক চালকরা এখন বিভিন্ন অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা দাবি করে । নাফিম বেশ কয়েকবার এরকম পরিস্থিরির সম্মুখীন হতে হয়েছে । সে এখন যে রিক্সায় উঠেছে , সেটা পায়ে চালিত । চালকরে বয়স তাঁর বাবার বয়সের চেয়ে বেশি । ১০ টাকা ভাড়া বেশি দাবি করায় নাফিমের কাছে আশ্চর্য লাগে । আর তাছাড়া রাত ১১টার সময় পায়ে চালানো রিক্সা সচারচার দেখা যায় না । যাদের পাওয়া যায় তারা ডাবল ভাড়া দাবি করে ।
--বাসায় কে কে আছেন, চাচা ?
--তোমার চাচী আছে ।
--ছেলে মেয়ে নেই ?
--ছেলে আছে , তিন জন । সবাই বিয়ে করে সংসার করছে । নিজের সন্তান নিয়ে ব্যাস্ত ।
--আপনি এতরাত পর্যন্ত আছেন যে ?
--চাউল কেনার টাকা হলেই চলে যাব ।
--কেন সারাদিনে চাউল কেনার টাকা হয় নি ?
--আমি তো এসেছি সন্ধ্যা পর । এক মাস যাবত তোমার চাচীর টাইফয়েড জ্বর । বাড়ীর কাজ সেরে, ওকে গোসল করিয়ে ,খাওয়াই বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে । এসে ১৫০ টাকা ভাড়া মেরেছিলাম । টিউব নষ্ট হয়ে গেছিল । ১২৫ টাকা দিয়ে টিউব কিনেছি । আর মেকার ১৫ টাকা দিয়েছি লাগানোর জন্য । কাছে আছে ১০ টাকা ।
--চাচীকে ডাক্তার দেখিয়েছেন ?
--হ , বাবা , দেখিয়েছি ।
-- ওষুধ খাওচ্ছেন ?
-- হ , বাবা । অনেক দামি দামি ওষুধ । ওর ওষুধ কিনে সংসার চালাতে হিমিসিম খাচ্ছি । আবার , ফলমূল ও খাওয়াতে বলেছে ।
চাঁদনী রাত । নাফিম রিক্সা থেকে নেমে হাঁটছে । রিক্সা চালাক তখনও নাফিমের চলে যাবার দিকে অবাক করা চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যে তাকিয়ে থাকার মাঝে আছে বুক ভরা ভালবাসা আর চোখ জোড়া মায়া । নাফিম রিক্সা থেকে নামার সময় তাঁর মানিব্যাগে থাকা ১৫০ টাকা ( যারা ছাত্র জীবনে জাতীয় পেশা টিউশনি করে চলে , মাসের শেষের দিকে এসে তাদের সবার হাতেই টানাটনি পড়ে) দিয়ে , বলে , চাচা আপনি আর কিছুক্ষন শহরে থাকেন । চাল কেনার টাকা হয়ে যাবে । আর এই টাকা দিয়ে চাচীর জন্য ফল কিনে নিয়ে যাবেন । কাউকে এই রকম আবেগী পরিস্থির মাঝে ফেলতে পারাটা নাফিম বেশ উপভোগ করে । আত্মতৃপ্তি পায় । টাকা নামক কাগজের বস্তু হাতে নিয়ে রিক্সাওয়ালা তখনো নাফিমের চলে যাবার দিকে তাকিয়ে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৩