এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আবিস্কৃত হওয়া সেরা ঝর্ণার নাম হলো তিনাপ সাইতার। ২০১৫ সালে আবিস্কৃত হওয়া এই ঝর্ণাটা দেখে মনটা আমার উতলা হয়েছে। বান্দরবানের ঝর্ণাগুলো শুধু তারাই দেখতে পারে যাদের ট্রেকিং করার অভিজ্ঞতা আছে। ২০১৬ সালে যেভাবেই হোক ওখানে যাওয়ার পরিকল্পনা মাথায় ছিলো, কিন্তু বিধি বাম বান্দরবানে দু'জন পর্যটক অপহৃত হওয়ায় ওদিকে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেনাবাহিনী। তারপরও কিছু টিম চোরাই পথে জীবনের ঝুকি নিয়া গিয়েছে শুনেছি, তাদেরও আমি নাগাল পাইনি ২০১৬ তে।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দুরের রোনিন পাড়াটা হলো তিনাপে যাওয়ার ট্রানজিট পয়েন্ট। আর রোনিন পাড়া থেকে তিনাপ সাইতার দেখতে হলে আসা যাওয়া ৯/১০ ঘন্টার পাহাড় ট্রেক করতে হয়। আফসোস হলো এই ভেবে যে এই রোনিন পাড়ায় ২০১১ সালে রাত কাটিয়ে ছিলাম, অথচ তখন এই ঝর্ণার খোজ ছিল আমাদের নাগালের বাইরে। ২০১৩ সালে সর্বশেষ ট্রেকিং করে বাংলাদেশের সর্বোচ চুড়া সাকা হাফং যাওয়ার পর মোটামুটি আমি ছিলাম ট্রেকিং থেকে অনেক দূরে। তাই এবার এই লম্বা ট্রেকিং নিয়া অনেকটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। সর্বশেষ এই ভ্রমণে যাওয়ার দুইদিন আগে থেকে বাম কুচকিতে ব্যাথা অনুভব হচ্ছিল, তবু প্রচন্ড মনোবল নিয়ে বের হয়েছিলাম স্বপ্নের এই ঝর্ণা দেখতে। এবং সফলতার সাথে তা শেষও করে আসতে পেরেছি..............
(২/৩) প্রথমে বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়িতে করে রোয়াংছড়ি, তারপর আবার অন্য চান্দের গাড়িতে করে প্রায় রোনিন পাড়ার প্রায় অর্ধেক পথ গিয়ে শুরু হয় আমাদের ট্রেকিং পথ।
(৪) বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ে ট্রেকিং করার মজাই আলাদা, জোঁকের ভয়ে পথ চলতে তাড়াতাড়ি অথচ পিচ্ছিল পথে তাড়াতাড়ি হাটাটা বিপদ জনক।
(৫) কেউ বলে টেপা ফল, আমরা বলি পেলা গোটা, এর টক মিষ্টি সাদটা বেশ ভালো লাগে। তবে অবশ্যই আগে পাকতে হবে এখন এগুলো কাঁচা।
(৬/৭) গ্রামের নাম মহাজন সিম থাং পাড়া, এই পাড়া বোম আদিবাসী দোকানী লিপি স্টোর থেকে ডজন খানের পাহাড়ি রসালো আনারস খেয়ে আমরা সামনের দিকে পা বাড়ালাম।
(৮/৯) প্রখর রোদে পাহাড়ে হাটার কষ্ট দূর করে দেয় এমন ফুল-প্রজাপতিরা।
(১০/১১) এটা রোনিন পাড়া, এখানে দুই রাত থাকতে হয়েছিল।
(১২) রোনিন পাড়া থেকে তিনাপ সাইতার আরো প্রায় ৪/৫ ঘন্টার হাটা পথে আমরা ছুটে চলেছি তিনাপের পথে।
(১৩) এমন কিছু গ্রাম পেলে জিরিয়ে নিচ্ছিলাম পথে পথে।
(১৪) অতি সাধারণ কচু ফুলকেও মাঝে মাঝে খুবই আপন মনে হয়।
(১৫/১৬) যারা পাহাড়ি ঝর্ণা দেখে অভ্যস্থ্য তারা অবশ্যই জানেন ঝর্না দেখতে হলে কিছুটা পথ হলেও ঝিরি পথে চলতে হয়, তিনাপ দেখতে এবার আমাদের ও শুরু হলো ঝিরি পথে পথ চলা।
(১৭) ঝিড়ি পথের শীতল পানিতে গা ভিজিয়ে নিলে নিমিষেই দুর হয়ে যায় পাহাড় চলার সব ক্লান্তি, তাইতো আমরা গা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম।
(১৮/১৯) পিচ্ছিল এই ঝিড়ি পথটার একটা নাম আছে, তা হলো পাইন্দু খাল। তাইতো অনেকে তিনাপ সাইটারকে পাইন্দু সাইতারও বলে থাকে।
(২০) অবশেষে আমাদের সামনে উদয় হলো সেই কাঙ্খিত তিনাপ সাইতার। বোম দের ভাষায় সাইতার মানে ঝর্ণা, তিনাপ মানে নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো দেখতে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:২৩