বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি কক্সবাজার শহরের উত্তর- পশ্চিম কোণায় ৫/৬ কি: মি: দূরত্বে স্ব-মহিমায় দণ্ডায়মান এ দ্বীপাঞ্চল। বাঁকখালী নদীর কিছু অংশ এবং বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যেতে হয় মহেশখালী। আবার চকরিয়া উপজেলার বদরখালী-মহেশখালী সংযোগ ব্রিজ হয়ে সড়ক পথেও যাওয়া যায় মহেশখালী।
ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে মহেশখালী মূলত: কোন দ্বীপ ছিল না, কোন মহা প্রাকৃতিক পরিবর্তন বা দুর্যোগের কারণে মূল ভূখ- হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে এ দ্বীপের সৃষ্টি। টেকনাফ হতে সিলেট পর্যন্ত দেশের পূর্বাঞ্চলে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহের অবিচ্ছেদ্য অংশই দ্বীপ মহেশখালীর দক্ষিণ থেকে উত্তর জুড়ে অবস্থিত। যেখানে রয়েছে মুসলিম, হিন্দু ও রাখাইন সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সংমিশ্রণে বাঙ্গালী জাতিসত্তার এক অপূর্ব সম্মিলন। মহেশখালীতে রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন তীর্থস্থান আদিনাথ মন্দির ও সু-উচ্চ আদিনাথ পাহাড়।
৫৮০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ চট্টগ্রামে আরাকানী শাসন শুরু হলে মূল ভূ-খন্ড থেকে পৃথক থাকার কারণে মহেশখালী দ্বীপের উপর শাসকগোষ্ঠীর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলোনা বরং এখানে একটি সংঘবদ্ধ জলদস্যুদের আবাসস্থল গড়ে ওঠে বলে তিনি অনুমান করেছেন। মূলত কোম্পানী শাসনামলেই মহেশখালী দ্বীপটি ইংরেজদের নজরে পড়ে। সাগরের মাঝখানে অবস্থিত এই দ্বীপটি, ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ওয়ারলেজ নামক জনৈক ইংরেজ কর্মচারী বন্দোবস্তি নেবার জন্য আবেদন করলে, ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে দ্বীপটির বন্দোবস্তি সংক্রান্ত দলিল সম্পাদিত হয়।
কয়েকদিন আগে খুব অল্প সময়ের জন্য মহেশখালী যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো, আর এই সময়ে মহেশখালীর কোন কিছুই ভালোভাবে আমার জানার সুযোগ হয়ে উঠেনি, বলতে পারেন এই যাওয়াটা ছিলো আমার ভবিষ্যতে ওখানে যাওয়ার রিহার্সেল মাত্র। আজ আমার ছবিব্লগ মূলত সেই সল্প সময়ে দেখা মহেশখালীকে নিয়েই।
(২) কক্সবাজারের ফিসারি ঘাট থেকেই ট্রলার আর স্পিড বোট গুলো ছাড়ে, ট্রলারে প্রায় এক ঘন্টা আর স্পিড বোটে ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে মহেশখালী যেতে।
(৩) মাছ ধরার ট্রলারগুলো যখন গভীর সমুদ্রের দিকে ছুটে চলে তখন এভাবেই তারা প্রচুর খাবার পানিও জ্বালানী নিয়ে যায়।
(৪) আমাদের ট্রলার যখন মহেশখালী পানে ছুটে চলে তখন ফিসারী ঘাটের বিপরিত দিকে এমনি একজন মাছ ধরায় ছিল মগ্ন।
(৫) স্পিড বোটগুলো অনেক সময় এমনিভাবে প্রতিযোগি্তা করে ছুটে চলে মহেশখালী পাণে।
(৬) বাকখালি নদী আর সাগরের মোহনায় সীগার্লগুলো যেন আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলছিলো।
(৭) গলাগলি ধরে সাগর থেকে ফিরে আসছে জেলেদের দুটি ট্রলার।
(৮) এক সময় মেহেশখালী জেটি ঘাট আমাদের নজরের ভেতর চলে এলো।
(৯) বিশাল লম্বা জেটির ওই পাশ দেখাই যায় না, আর জেটির দুই ধারে সুন্দরী আর গোল পাতার নতুন বনায়ন করা হয়েছে।
(১০) জেটি পার হয়ে মহেশখালীতে পা রাখলেই এখানে আদিনাথ পাহাড়ের পাদদেশে প্রচুরে ঝুপরি দোকান, আর প্রতিটি দোকানেই ডাবের প্রসার পর্যপ্ত এবং সব দোকানীই মহিলা। এখানেই বাংলাদেশের সব চেয়ে সস্তায় ডাব পাওয়া/খাওয়া যায়।
(১১) আদিনাথ মন্দিরে উঠার জন্য পাহাড়ের গায়ে সিমেন্ট দিয়ে সিড়ি নির্মান করে দেওয়া হয়েছে, আর এখানে রাখাইনদের হস্তশিল্পের প্রচুর দোকান, যা সিড়ির ধাপে ধপে আদিনাথের দিকে উঠে গেছে।
(১২) যে পাহাড়টার মাথায় অদিনাথ মন্দিরটি নির্মিত, স্থানীয় জনশ্রুতিতে এটাই সেই পৌরানিক মৈনাক পর্বত।
পৌরনিক কাহিনী অনুযায়ি রাম রাবনের যুদ্ধের সময়, রাবন অমরত্ব পাবার আশায় কৈলাস থেকে শিবরূপি উর্ধমূখি শিবলিঙ্গকে বহন করে নিয়ে যাবার সময় দেবতাদের দৈববানী ভুলে গিয়ে এই মৈনাক শিখরে রেখেছিল। কিন্তু দৈব্যবানী অমান্য করায় সে শিবকে আর এখানে থেকে সরাতে পারেনি, আর মহাদেব তারপর থেকে এখানেই অবস্থান নেয়। শিবের আরেকটা নাম হলো মহেশ, এই মহেশের নামানুসারে এই দ্বীপের নাম হয়েছে মহেশখালি।
(১৩) আদিনাথ মন্দির থেকে সিড়ি বেয়ে আরো কিছুটা দূরে গেলে এই স্তুপটা দেখা যায়, এটা অবশ্যই বৌদ্ধদের হওয়ার কথা।
(১৪) পান নিয়ে যাচ্ছে দুইজন শ্রমিক, মহেশখালীর বিখ্যাত মিষ্টি পান, দেশ-বিদেশে যার রয়েছে যথেষ্ট চাহিদা ও সমান জনপ্রিয়তা। তাইতো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল: ‘‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, যদি নতুন একখান মুখ পাইতাম, মইশ খাইল্যা পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম’’।
(১৫) ভেতরের দিকে দেখতে পাওয়া যায় এমন প্রচুর মুলি বাঁশ, পানের বরজ আর লবন চাষের জমি।
(১৬/১৭) বড় রাখাইন পাড়া বৌদ্ধ বিহার।
(১৮/১৯) গৌতম বৌদ্ধের মুর্তি, বিশাল কাঠ গোলাপ গাছ....এখানে বিরাজমান পবিত্র একটা আবহ।
(২০) এখানেও রয়েছে রাখাইনদের হস্তশিল্পের অনেক দোকান।
(২১) নতুন জেটি ধরে এখানে এলেও পুরোনো জেটি ধরে ফিরে চললাম আমরা, সেখান দিয়ে কিছু জেলে ফিরছিল মাছ ধরা শেষ করে।
(২২) ট্রলারে চেপে বসলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। কিছুই দেখা হয়নি মহেশখালীর, তাই কানে কানে তাকে বললাম আবার আসব ফিরে, সে আমাকে কি প্রতি উত্তর দিয়েছিল ট্রলারের শব্দে তা আর শোনা হয়নি.......হয়তো বলছিলো তোমার অপেক্ষায় থাকলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০