somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শালিমার বাগ

২২ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইতিহাসঃ
ভারতের জম্বু কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের অদূরে বিখ্যাত ডাল লেকের উত্তর-পূর্ব দিকের সংযোগ খালের পাড়ে মুঘল জমানায় গড়ে তোলা হয় প্রথম শালিমার বাগ। এ উদ্যানটিকে অনেক নামেই অবিহিত করা হয়। কখনও শালিমার গার্ডেন, কখনও শালামার বাগ, কখনও ফারাহ বক্স এবং কখনও বা ফাইজ বক্স নামে এটি পরিচিত ছিল। প্রখ্যাত মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর তার প্রিয়তমা সম্রাজ্ঞী নূর জাহানের মনোতুষ্টির জন্য ১৬১৯ সালে এ স্থাপনার গোড়া পত্তন করেছিলেন। এটিকে মুঘলদের উচ্চ মার্গের উদ্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। মুঘল আমলে এখানে সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার ছিল না। মুখ্যত রাজণ্যদের বিনোদন, বিশ্রামের জন্য এটি সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু এখন পুরো উদ্যানটি জন সাধারণের বেড়ানোর জন্য উন্মুক্ত।


(২)
যদিও এই উদ্যানের সার্বিক উৎকর্ষতা ও নান্দনিকতার জন্য সম্রাট জাহাঙ্গীরকেই পরিপূর্ণ কৃতিত্ব দেয়া হয়ে থাকে, তথাপিও হাল আমলের কিছু ভারতীয় গবেষক এ কথা প্রমাণ করেছেন যে, প্রাচীন ভারতের ২য় শতাব্দীতে এ স্থানে একটি উদ্যানের অস্তিত্ব ছিল। সে উদ্যানটি গড়েছিলেন দ্বিতীয় প্রবর সেনা নামক একজন শাসক। তিনি শ্রীনগর নগরটিও নির্মাণ করেছিলেন এবং ৭৯ থেকে ১৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাশ্মীর শাসন করেছেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ডাল লেকের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ‘প্রেমালয়’ নামে একটি কুঠির নির্মাণ করা হয়েছিল। তিনি তার রাজধানী থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে অবস্থানরত সুকারাম স্বামী নামের একজন সন্তের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎকালে এ পথে যাওয়া আসার সময় যাত্রা বিরতির প্রয়োজনে এ কুঠিরে বিশ্রাম গ্রহণ করতেন। অবশ্য অতি প্রাচীন কালের এ কুঠিরের অবস্থান নির্ণয় বা ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা কখনও সম্ভব হয়নি। অতীতের এ ধরনের কথা গবেষণা কর্মেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে বাস্তবে যে হেতু এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি সে হেতু এ নিয়ে পরবর্তীতে কেউ তেমন একটা মাথাও ঘামায়নি।
বাস্তবতা হলো এটি সম্রাট জাহাঙ্গীরেরই এক অনবদ্য সৃষ্টি। এ সৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা এবং প্রেমিকের প্রতি অনবদ্য প্রতিশ্রুতির এক প্রেমময় উপাখ্যান। সুন্দরী সম্রাজ্ঞীকে আরও গভীরভাবে হৃদয়ঙ্গম করণের অভিলাষে তিনি স্বর্গের আদলে এ বাগান বাড়ি সৃষ্টি করেছিলেন।


(৩)
মুঘলদের শাসনামলে বিশেষ করে সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং নূর জাহানের সময়কালে এ বাগিচার গুরুত্ব, তাৎপর্য এবং জৌলুস ছিল অপরিসীম। বিশেষ করে সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের সঙ্গে এ বাগিচার এক ধরনের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সম্রাজ্ঞী এখানকার সৌন্দর্য সুধা পান করবার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। যে কারণে তিনি রাজধানীর সমস্ত রাজকীয় ঐশ্বর্য ছেড়ে ছুটে আসতেন কাশ্মীরের পথে। বিশেষ করে গ্রীষ্মের সময় সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী তাদের পুরো লাট বহর নিয়ে বরফাচ্ছাদিত পীর পাঞ্জাল গিরিপথ পাড়ি দিয়ে হাতির পিঠে বসে হাজির হতেন এখানে। এখানেই অনুষ্ঠিত হতো সম্রাটের রাজকীয় বিচাকার্য। এখান থেকেই পরিচালনা করা হতো সামগ্রিক রাজ কার্য। এ প্রশান্ত উদ্যান হয়ে উঠত রাজকীয় আবাসন। দিনে পাখিদের কলতানে এবং রাতে সেতার, বীণা সুরে এবং নূপুরের ছন্দে মুখরিত হয়ে উঠত পুরো উপত্যকা।


(৪)
এ স্থাপনাটিও পার্সিয়ান গার্ডেনের আদলে ইসলামী স্থাপত্যশৈলীতে নির্মাণ ও সজ্জিত করা হয়েছিল। ঝরনাধারা, বৃক্ষরাজি এবং অন্যান্য ব্যবহারের জন্য জল সরবরাহ ব্যবস্থার নিশ্চিতকল্পে সমতল ভূমিতে বর্গাকার আয়ত ক্ষেত্রে বাগিচাটি নির্মিত হয়েছিল। সমগ্র বাগিচার আয়তন ৩১ একর। এর দৈর্ঘ্য ৫৮৭ মিটার এবং প্রস্থ ২৫১ মিটার। এখানে তিন চত্বরবিশিষ্ট ঝরনাধারা সংবলিত সরোবরে প্রতিনিয়ত জলধারার আমেজ বিরাজ করত। এ ছাড়াও ছিল বেশকিছু কৃত্রিম জলপ্রপাত।


(৫)
উঁচু উপত্যকা থেকে যাতে করে জল প্রবাহ সঠিক পথে বাগিচায় প্রবেশ করতে পারে সে ভাবেই সামগ্রিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল। এ জলপ্রবাহের খালটিকে বলা হতো শাহী নহর। সে জমানায় রাজা বাদশাহদের সব কিছুতেই বনেদি বিশেষণ যুক্ত থাকত, যে কারণে এ জল প্রবাহের খালটির কপালেও জুটেছিল শাহী নহরের তক্মা। এখানকার ঝরনাধারা সচল রাখবার জন্য জল আবর্তন প্রক্রিয়ার যান্ত্রিক কলাকৌশল অনুসৃত হয়েছিল। এ ছাড়া এ উদ্যান থেকে ডাল লেকে চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল একটি জলপথ। এ জলপথের দৈর্ঘ্য ছিল ০১.৬ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১১ মিটার। বিস্তৃত ধান ক্ষেত, কর্দমাক্ত জলাভূমি পেরিয়ে এ খাল দিয়ে ডাল লেকে ছুটে যেত রাজকীয় তরীর বহর। তথ্যগুলো দৈনিক জনকন্ঠ থেকে নেওয়া।


(৬) এমন সুন্দর সবুজের গালিচায় ইচ্ছে করে শুয়ে থাকতে।


(৭) রয়েছে চেনা অচেনা নানা রকম ফুল।


(৮)


(৯)


(১০)


(১১)


(১২)


(১৩) চমৎকার ম্যাপল গাছ, এই গাছের লালপাতাগুলো নিচে বিছিয়ে থেকে শালিমারে সৌন্দর্য্যে এনেছে এক অনন্য রূপ।


(১৪) শুকিয়ে যাওয়া ম্যাপল বনের পাতাগুলো।


(১৫) সম্রাট জাহাঙ্গীরের ‘দিওয়ানি-ই-আম’ এ দরবার হলে সম্রাট সাধারণ জনগণকে দর্শন দিতেন এবং তাদের আর্জি শুনতেন। এটার অবস্থান শালিমারের শেষ প্রান্তে।


(১৬/১৭) ‘দিওয়ানি-ই-আম’ এর ভেতর দাঁড়িয়ে পুর্ব ও পশ্চিমে দুই দিক থেকে তোলা দু'টি ছবি।




(১৮) মোগল গার্ডেনগুলো দেখলে চমৎকৃত হবেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এই মোগল গার্ডেন গুলো সবই পাহাড়ের ঢালে তৈরি করা হয়েছে, ক্রমান্বয়ে পিছনের দিকটা উঁচুতে উঠে গেছে, আর সেখান থেকে পাহাড়ি ঝর্ণাকে গার্ডেনের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান রাখা হয়েছে। এই অংশটা শালিমারের একেবারে শেষ প্রান্ত, এর পেছনেই পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে পানির ধারাগুলো গার্ডেনের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান।


(১৯) ফিরে আসার আগে উদয়পদ্ম গাছের তলায় এমন খালি বেঞ্চে কিছু সময় জিরিয়ে নিতে ইচ্ছে হয়েছিলো, কিন্তু সময় যে স্বল্প.......হয়তো ভবিষ্যতে কোন একদিন হবে :-B
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৩৪
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×