"রোমান্টিক ছোট গল্প।।"
-আমার কথা মনে পড়ে তোমার??
অনিমার কথাটা পরিযায়ী পাখির ডানায় হাজার মাইল দূর থেকে ভেসে আসা এক ঝটকা হিম বাতাসের মত ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়ে গেল।বাহুতে মাথা রেখে স্বপ্ন বোনার দিন গুলতে যে কথা গুলো চিন্তা করতে আমাদের বুক পাজর ভেঙ্গে দিত,আজ সময়ের পরিক্রমায় সামনে দাড়িয়ে অবলিলায় সে কথা গুলো বলতে আমাদের বাধছে না।অনিমার কথার জবাব দেবার বদলে আমি অনিমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রেস্টুরেন্টের মোটা কাঁচের দেয়াল দিয়ে বাইরে তাকালাম।মানুষের সীমাহীন ব্যাস্ততা আমাকে কিছুক্ষনের জন্য চাপমুক্ত হতে সাহায্য করল।একটা নোংরা কাপড়ের বাচ্চা মেয়ের হাতে এক গুচ্ছ কাটাওয়ালা লাল গোলাপ যেন আমার জীবনের দিকেই ইঙ্গিতময়। জীবনের তাগিদে নোংরা গায়ে নোংরা জামায় পরিষ্কার পবিত্র ফুল সে ফেরি করে বিক্রিতে ব্যাস্ত।
এখনও কি সিগারেট খাও?
কোমল গোলাপ এবং কঠিন জীবন সংগ্রাম থেকে যেন আমাকে এক ঝটকায় আবেগ ও মোহের দুনিয়ায় নিয়ে এলো।আমি অনিমার দিকে তাকালাম।সেই ঘন কালো লম্বা চুল,টানা টানা চোখ। সেই চোখে ময়ুরের পেখমের মত পাপড়ি,আমি ছুয়ে দেখতাম আর বলতাম "তুমি এতো সুন্দর চোখের পাপড়ি কোথায় পেলে"।অনিমা আমার কথা শুনে হাসত।
"তোমার কথা যে মনে পড়ে না তা ঠিক না" বলে আমি চুপ করে অনিমার চোখের দিকে তাকালাম।আমার কথার আঘাতে সম্ভবত চোখ লোনা পানিতে টলমল করে উঠল।আমি আর একটু সময় নিলাম।
"তোমার কথা মনে পড়ে,যখন আকাশে মেঘ করে।মনে পড়ে যখন দুনিয়া অন্ধকার করে কুয়াশা নামে,আবার যখন শরতে কাশফুল ফুটে। নিঝুম রাতে যখন সব নিস্তব্ধ হয়ে যায়,কিংবা সকালের কোলাহলেও তোমার কথা মাঝে মাঝে মনে হয়।"
অনিমা সম্ভবত চোখের পানি আড়াল করতেই চোখ সরিয়ে নিলো।আমি চুপ করে গেলাম।ঘুরে অন্যদিকে তাকালাম যেন ওর চোখের পানি আমি এতোদিন পর দেখছি এটা ভেবে যেন সামান্য লজ্জাও না পায়।
রেস্টুরেন্টের গ্লাসে ত্রিকোন করে সাজিয়ে রাখা টিস্যু পেপার তুলে নিয়ে অনিমা চোখ মুছলো।বুঝলাম,সে লজ্জা পাচ্ছে না,স্বাভাবিক আছে।
আমি আবারো বলতে শুরু করলাম "তোমার কথা আমার আরো মনে পড়ে,যখন হালকা অথবা ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়।যখন আকাশে চাঁদ উঠে, চাদের রুপালি আলোয় ভূবন ভেসে যায়,অথবা আমাবস্যায় যখন যখন আকাশ তার মুক্তোর পশরা সাজায়। "
অনিমা বিষাদ মাখা মুখে হেসে উঠল।"থামো থামো,আমি তোমার কবিতা শুনতে এখানে বসি নি,তুমি কি এখনও কবিতা লেখ?"
"নাহ,সিগরেট খাওয়া ছাড়িনি।ছাড়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করছি না।"
"আমাকে প্রশ্ন করলে না তো,তোমার কথা আমার মনে পড়ে কি না?"
"কি আসে যায়"
"কিছুই কি আসে যায় না?"
"নাহ,তেমার কাছে কিছু জানবার নেই,চাওয়ার আছে"
"তোমাকে দেওয়ার মত বর্তমানে আমার কাছে নতুন কিছুই নেই"
"আছে,তোমার ভাল থাকা"
অনিমা শব্দ করে হাসল।এ হাসিতে বিষাদ নেই।অনিমার নিস্পাপ হাসিতে লক্ষ কোমল গোলাপ যেন আমার অন্তরে পরিস্ফুটিত হলো।
অনিমা সেদিন বিদায় নিয়েছিলো শেষ দিনের মতই।আমি কিছু বলিনি।যেমন শেষ দিন নিশ্চুপ ছিলাম।তবে অনিমা যেদিন আমার জীবন থেকে বিদায় নিয়েছিলো, আমার শরীরের প্রতিটা অনু পরমাণু কোষ বিদ্রোহ করছিল।নষ্ট হয়ে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল সবকিছু।অনেক দিন আমি ঠিকমত নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না।মানুষ বোঝে,শরীর সহজে বোঝে না।আস্তে আস্তে বুঝতে শিখে।
অনিমা ফিরে এসেছে।নিঃশব্দে আমার সামনে এসে দাড়ালো।আমি চোখ তুলে চাইলাম। চোখের ভাষায় জানতে চাইলাম "কিছু বলবে?"
"শেষ একটা কথা জানার ছিলো?"
"বলো"
"আমাকে তুমি আটকাবার চেষ্টা করনি কেন?"
সেদিন আমি অনিমাকে সে কথার জবাব দিতে পারিনি।চুপ ছিলাম।বলতে পারিনি, "হয়ত কিছু কষ্টা নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম বলে"।বলতে পারিনি "যে ভালবাসে সে কখনও ছেড়ে যায়না"।অনেক কিছুই বলতে চেয়েছিলাম।কিছুই বলতে পারিনি।ব্যার্থ প্রেমিকের কিছু বলার অধিকার থাকে না।শুধু থাকে চুপ চাপ সয়ে যাওয়ার চাপ।
**ছবি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:০৭