পুরো শহর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাস্তার কুকুরগুলোও ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। কিন্তু রিশান ঠিকই হেটে চলছে রাস্তা দিয়ে। একা হাটছে। ইদানীং রাতে একা হাটতে ভালো লাগে রিশানের। হিমুর মতো! কিন্তু হিমুর মতো খালি পায়ে না সে। হিমুর মতো হলুদ পাঞ্জাবিও নেই তার। হলুদ পাঞ্জাবি কিনতে গিয়ে বারবার ফিরে আসে। কেমন যেন চড়া রং! চড়া রং রিশানের ভালো লাগে না। তাই নিজের গায়ের রং এর সাথে মিলিয়ে কালো একটা পাঞ্জাবি কিনেছে। রাতে এটা পড়েই হাটে। পাঞ্জাবি আর তার গায়ের রং মিলেমিশে এক হয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে হলুদ নিয়ন আলোয় তাকে অন্যরকম দেখায়। আশপাশে কেউ থাকলে তাকিয়ে থাকে রিশানের দিকে। রিশানও উল্টো তাকিয়ে থাকে তার দিকে। সে বেচারা হয়তো ভয় পেয়ে যায়! কারণ রিশান তাকানোর সাথে সাথে লোকগুলো চোখ সরিয়ে নেয়।
আজকে রিশান যাবে হাতিরঝিল। কিন্তু ওটা নাকি ভিআইপিদের এলাকা। রিশানকে এতরাতে সন্দেহ করে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় কিনা কে জানে! তবুও মনস্থির করে সে,হাতিরঝিলেই যাবে আজ সে।
মধ্যরাতে গাড়ি খুব কমই থাকে। কিন্তু গুলশান রোডে সব বড়লোকের ছেলেরা রাতে মদ খেয়ে উল্টা পাল্টা গাড়ি চালায়। একটা গাড়ি তো প্রায় রিশানের উপরেই তুলে দিয়েছিল। কোনোরকমে বেঁচে গিয়েছে। প্রায় কাছেই চলে আসছে। এখন আর ফিরে যেতে চাইছে না। হাতিরঝিলের ব্রিজে বসে পানি আর আলোর খেলা দেখবে আজ সে। চলছে সে হাতিরঝিলের উদ্দেশ্যে...
হাতিরঝিলের ব্রিজে বসে আছে রিশান। মনে মনে ভাবছে 'এখন একটা সিগারেট হলে ভালো হতো!' রিশান যে সবসময় সিগারেট খায় এমন না। আসলে পরিবেশটায় সিগারেট হলে জমতো এই আর কি! বসে বসে পানিতে ছোট ছোট ইটের টুকরো ঢিল দিচ্ছে আর একটু পরপর পাশে ঘুমানো দুটো বাচ্চা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সে। রিশান যখন প্রথম ঢাকায় আসে তখন ও নিজেও এভাবে ঘুমাতো। যখন যেখানে জায়গা পেত। রাস্তায় যারা থাকে তাদের মাঝেও সিন্ডিকেট আছে! কে কোন জায়গায় থাকবে সেটা নিয়ে। রিশান বাবা মা মারা যাওয়া একটা ছেলে। কোনো আত্মীয় স্বজন না থাকায় একা একাই ঢাকায় চলে আসছে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু এখানে যে আরও কত রংতামাশা অপেক্ষা করছে জানতো না সে। গায়ের অবুঝ বোকাসোকা একটা ছেলে ছিল সে। শহরে এসে শহরের সাথে খাপ খাওয়াতে নিজেকে বদলে ফেলেছে। হঠাৎ পিছন থেকে কাধে হাত পড়ায় সম্বিত ফেরে তার।
:- এই যে মিস্টার,এখানে বসে আছেন ক্যান? খাইছেন টাইছেন নাকি কিছু?
:- না স্যার,আমি রাতে হাটাহাটি করতে পছন্দ করি,তাই হাটতে হাটতে এখানে এসে বসে আছি।
:- কথার স্টাইলে তো মনে হয় ভালো ঘরেরই পোলা তুই। ভালো ঘরের কেউ তো এতরাতে এখানে বইসা থাকে না।
:- স্যার আমি আসলেই হাটতে হাটতে আসছি।
:- পকেটে কিছু আছে নাকি? চেক করমু?
:- করেন স্যার। সমস্যা নেই।
:- যদি পাই তাইলে বুঝিস কিন্তু? সোজা ভিতরে ঢুকাই দিমু।
:- কিছু থাকলে তবেই না ভিতরে ঢুকাবেন স্যার?
:- কথায় কথায় জবাব তাই না? খাড়া দেখাইতাছি তরে।
হাতে রাখা ওয়াকিটকি টা প্যান্টের বেল্টে ঝুলিয়ে রিশানের দুই পকেটে হাতরাতে শুরু করলো অফিসার। রিশান জানে রাত দুপুরে এভাবে দেখলে পুলিশ সার্চ করবে এটাই স্বাভাবিক। আর অনৈতিক কিছু ছিলও না তার কাছে।তাই সে জোড় গলায় সার্চ করতে বলেছে। সামনের দুই পকেট সার্চ শেষ করে পিছনের পকেটে হাত দিয়েছে অফিসার। রিশান নিজেও উল্টো হয়ে দেখছে অফিসারের সার্চ করা। ঠিক দুই সেকেন্ড পর,রিশানের মুখ পুরো ফ্যাকাসে হয়ে যায়! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। অফিসার বিজয়ের হাসি হাসছে!
:- পকেটে নাকি কিছু নাই? এইডা কি তাইলে? লজেন্স?
:- স্যার বিশ্বাস করেন এটা কীভাবে আমার পকেটে আসলো আমি সত্যি জানি না!
:- জানিস না? ঠিকাছে সমস্যা নাই। চল আমার সাথে। কি জানিস তুই সেটাই জানবো। চল!
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫২