বাসায় ফিরলাম দিন তিনেক পর।এক বন্ধুর বোনের
বিয়ের দাওয়াত ছিল সেখানেই গিয়েছিলাম।
অনেক দূর জার্নি করতে হয়।তাই বাসায় ফিরলাম পুরো
ক্লান্ত অবস্থায়। গোসল করে এসে শুয়ে
ঘুমানোর প্রস্তুতি নিব তখনি মহল্লার যত ফ্রেন্ড
আছে সবাই আমার ঘরে হুরহুর করে ঢুকে পরল।
.
সবাইকে দেখে যতটা অবাক হলাম তার চাইতে বেশি
খুশি হলাম।ভাবলাম এরা হয়ত আমাকে দেখার জন্য
এখানে আসছে।কিন্তু ভুল ভাঙতে খুব একটা সময়
লাগল না।
.
একজন বিছানায় বসতে বসতে কারণ বলে
ফেলল,কারণ হল মহল্লায় এক সুন্দরী মেয়ে
আসছে। সুন্দরী বললেও কম বলা হয়ে যাবে।
পরী টাইপ নাকি।একবার দেখলে প্রেমে
পড়তেই হবে মাস্ট।
.
এসব শোনার আমার কোন ইচ্ছাই আমার নেই। তাই
আমি বিরক্তি দেখিয়ে বললাম,
-তো আমার কাছে কি?
.
তখন অন্য এক ফ্রেন্ড জবাব দিল,
-মেয়ে তোকে চিনে,
-কিভাবে?
-সেটা জানিনা,কিন্তু আমাদের সাথে কথা হইছে।
তোর কথা জিজ্ঞেস করছে?
-নাম কি মেয়েটার?
-সিমি,
.
সিমি নামের কাওকে চিনিনা আমি।
সুমি নামের আমার এক ক্লাসমেট ছিল সেটাও কলেজে থাকতে।
আমার কোন বন্ধু কি?
না আমার কোন বন্ধু পরীর মত সুন্দর না।
.
-তোরা ঠিক শুনছিস,,আমার কথাই জিজ্ঞেস করছে?
-আরে হ্যা,,শোন তুই যখন দেখা করবি তখন একটা
কাজ করে দিবি?
-কি?
-মেয়েটাকে আমার কথা বলে দিবি।আমি প্রেমে
পড়ে গেছি।
.
এই কথাটা সবাই সাজেস্ট করে গেল।সবার কথাই
বলতে বলল।সবাই নাকি সিমি মেয়েটার মেয়েটার
প্রেমে পড়েছে।তবে মেয়েটার প্রতি আমার
আগ্রহ হল না কোন,মেয়েদের প্রতি খুব খারাপ
এক্সপেরিয়েন্স আছে তাই ওদের থেকে দূরে
থাকতেই সাচ্ছন্দ বোধ করি।
তবে একটু খটকা লাগল আমাকে চেনে এরকম
মেয়ে দুনিয়াতে আছে জানতাম না তো।
দেখা তো একবার করতেই হবে।
.
দেখা খুব দ্রুত হয়ে গেল সিমি নামের মেয়েটার
সঙ্গে। এই তিন দিন টিউশনি করাতে যাইনি। তাই ভাবলাম রাতের
বদলে দিনে চলে যাই তাহলে একটু বেশি পড়িয়ে
দিয়ে পুষিয়ে নেয়া যাবে।
যেই ভাবা সেই কাজ,সকালের দিকে বাসা থেকে
বের হলাম।একটা রিকশা দরকার।
সকাল সকাল তাই রিক্সা নেই,যে কয়টা রিক্সা
আসতেছে সেগুলাও ফুল।অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে
থাকার পর একটা রিকশা পেলাম। তাই দরদাম না করেই
উঠে পরলাম।আমি উঠে বসতেই পাশ থেকে
আরো একজন মেয়ে উঠল। মেয়েটার মুখ
তখনো ওপাশেই ঘোরানো। বিরক্ত হলাম,নামতে
বলব তখনি মেয়েটা মুখ ঘোরালো এদিকে।
মেয়েটা খুব সুন্দর তার চাইতে বড় কথা
মেয়েটাকে আমি চিনি। এভাবে কতক্ষন তাকিয়ে
ছিলাম জানিনা, তবে এতক্ষনে রিকশা অনেক দূর
চলে এসেছে।
.
মেয়েটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-আমি সিমি,
-সুমি,
-চিনতে পারছ তাহলে?
-চিনতে না পারার কিছু নাই,নাম বদলালেও মানুষের
ক্যারেক্টার বদলে যায়না।
-এখনো ঘৃনা করো,
-যাকে ভালবাসা যায় তাকে ঘৃনা করা যায়না।
.
আর কোন কথা না বাড়িয়ে রিকশা থেকে নেমে
পড়লাম।এই মেয়েটার সঙ্গে একসাথে যাওয়ার
কোন প্রশ্নই আসেনা।
.
সিমি মেয়েটাই সুমি।নাম চেঞ্জ করছে বাট চেহারা
অত চেঞ্জ হয়নি।মেয়েটার সাথে আমার একটা
কুৎসিত অতীত আছে।
তখন কলেজে পড়তাম,কলেজের প্রথম থেকেই সুমিকে ভাল লাগত।তাই সব বন্ধুদের পরামর্শে একটা
চিঠি ধরিয়ে দিয়েছিলাম সুমির হাতে।পরের দিন চিঠির
উত্তর না আসলেও,সুমি কে দেখে মনে
হয়েছিল ও আমাকে পছন্দ করে।তখন থেকেই
আমাদের মধ্য প্রেম শুরু। দুজনের মাঝে চিঠি লিখাই
হত বেশি,কথা খুব কম হত অবশ্য।
.
তবে এরকম চলার মাস তিনেক পর হঠাৎ একদিন
প্রিন্সিপালের রুম থেকে আমার ডাক এল।
কোন কিছু না বলেই প্রিন্সিপাল আমার বাবাকে ডেকে পাঠালেন। অনেক কথা শুনালেন আমার বাবাকে। শেষে কারণ হিসেবে চিঠির কথা
বললেন।যেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
ক্লাসে ফিরে এসে দেখি সুমি উৎসুক চোখে
আমার জন্য অপেক্ষা করছে,মেয়েটা এমন কিছু
করতে পারে চিন্তাও করিনি।
চিঠির ব্যাপার ছড়িয়ে পরল খুব দ্রুত।ইচ্ছে করলে
আমিও সুমির লেখা চিঠি গুলো দিতে পারতাম স্যারের
কাছে বাট কেন জানি দেইনি।
বাবা আমাকে কিছু বলেন নি এসব নিয়ে।কিন্তু আমি জানতাম তিনি কতটা কষ্ট পেয়েছেন। মান সম্মান নষ্ট
হয়েছিল এর জন্য কষ্ট লেগেছিল।ওই দিনের পর
আর কলেজ যাইনি।
এক ফ্রেন্ড সুমির একটা চিঠি নিয়ে এসেছিল, সেটা
নেয়ার প্রয়োজন মনে হয়নি।
সব কিছু হয়ে যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পরেই আমরা
ওখান থেকে এখানে চলে আসি।
ভালই তো ছিলাম কিন্তু এই মেয়ে সুমি থেকে সিমি
হয়ে এখানে কেন?
চায় কি?
.
রিকশা আমাকে ছেড়ে গেল না।
সুমি রিকশা থেকেই ডাক দিল,
-এই নেমে গেলে কেন?
-এমনি,
-ভয় পাচ্ছ?
-কিসের ভয়,,
-সেটা তো তুমি জানো?
-নাহ কোন ভয় পাচ্ছিনা,আর আমি ভয় পাইনা,
-তাহলে উঠে আসো,
.
আমি কথা না বাড়িয়ে আবার রিকশায় উঠলাম।
-এই তুমি কেমন আছ?
-ভালো,
-জিজ্ঞেস করবানা আমি কেমন আছি?
-প্রয়োজন নাই,
-এখনো রেগে আছো আমার প্রতি,
-না,,আমি অতিত ভুলে গেছি,
-তোমাকে কিছু বলার ছিল?
-বলো,
-শোন,চিঠিটা আমি প্রিন্সিপাল কে দেইনাই,
-আমি ওই বিষয়ে কিচ্ছু শুনতে চাচ্ছিনা,
.
সুমি হঠাৎ করে আমার হাত ধরে ফেলল।
-প্লিজ শোন,
.
আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
-আচ্ছা,বলো,
-চিঠিটা আমার বইয়ের মাঝে ছিল।আমার বড় আপা খুঁজে পায়,ওই স্যারকে দিছিল। আমি কিচ্ছু জানি না।
-ও আচ্ছা,,ভাল।
-শুধু ভাল?
-কি বলব তাহলে?
-আমি তোমাকে ভালবাসি,
-আমি আগের মত নেই,
-অনেক কষ্টে তোমাকে আমি খুঁজে পেয়েছি,
-সরি,,,
.
আর কিছু না বলে রিকশা থেকে নেমে পড়লাম।
মেয়েটার জন্য আমার মনে ভালবাসা আছে,সেটা
মনেই থাক। কিছু জিনিষ মনে থাকাই ভাল বৈকি।
.
তিনটা টিউশনি,আর কাজ শেষ করে বাসায় ফিরলাম
সন্ধ্যার পরে।
নিজের ঘরে যেতেই,মা ও আমার ঘরে আসল।
-কিছু বলবা?
-হ্যাঁ,
-বলো,
-সুমি নামের মেয়েটা এখানে আসছে নাকি শুনলাম?
-কোন সুমি,
-চিনিস না তুই?
-হুম,চিনছি।তুমি কিভাবে জানো,
-কিভাবে জানি সেটা বড় কথা না,ওই মেয়ের আশে
পাশে তোরে দেখলে বাড়ি থাইকা বার কইরা দিমু,
-আচ্ছা,,
.
মা আর কিছু না বলে গট গট করে হেটে ঘর
থেকে বেরিয়ে গেল।
মা বেরিয়ে যেতেই এলাকার ফ্রেন্ড গুলা
সেদিনের মত আবার ঘরে ঢুকল।আমি বিরক্ত হয়ে
বললাম,
-কি হয়েছে আবার কেন?
-তুই এইটা কি করছস?
-কি?
-তুই নাকি সিমি রে প্রপোজ দিছস,
-কি? কি বলিস?
.
ওদের কথা শুনে আমার অবাক হওয়ার শেষ নাই।যে
মেয়েটারে আমি এত্ত ইগনোর করলাম,ওই
মেয়ে এই কাজ টা কিভাবে করে?
মা শুনলে তো আমারে ঘর থেকে শিউর বের
করে দিবে।
.
খালি মেয়েটাকে পাই সামনে!!!!!!
.
সবাই বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর ফোন বেজে
উঠল।ফোন হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার।
ফোন ধরতেই ও পাশ থেকে বলল,
-আমি সুমি,
-তোমার সাথে কিছু গুরুত্ত্ব পূর্ণ কথা আছে?
-দেখা করবে?
-না ফোনেই বলব,
-আচ্ছা,আমার ফোন নাম্বার নাও,
-এটা কার নাম্বার?
-আমার ফ্রেন্ডের,
-ও আচ্ছা, দাও,
-০১৭৮০৯৪......
.
ফোন নাম্বার নিয়ে আবার ফোন দিলাম,
-হ্যালো,
-আমার বন্ধুদের কি বলছ তুমি?
-বলছি তুমি আমাক প্রপোজ করছ,
-কবে?
-কেন? ক্লাস এইটে,
-এটা জানাইছ ওদের?
-না,শুধু প্রপোজ করার কথা বলছি,
-তুমি আর ওদের কিছু বলবা না,
-কেন?
-এমনি,আর কিছু বলবা না
-আচ্ছা দেখি,
-দেখা দেখির কিছু নাই আর বলবাই না
-আচ্ছা।
.
তবে সুমি নিজের কথা রাখেনি,ও আবার আমার
ফ্রেন্ডস দের বলছে যে আমি ওকে ফোন
দেই।প্রমান হিসেবে কল লিস্ট দেখাইছে।
যেখানে আমার নাম্বার খুব সুন্দর ভাবে দেখা
গেছে।
.
পরের দিন সুমি কে একটা রেস্টুরেন্টে ডাকদিলাম।
মেয়েটার সাথে সব শেষ করে দেওয়া দরকার
এভাবে চললে বাসাতেও সবাই জেনে যাবে।আর
মা যেরকম ক্ষ্যাপা সুমির উপর তাতে আমার কপালে
দুক্ষ আছে অনেক।
.
রেস্টুরেন্ট সুমিকে দেখে আরেকবার
প্রেমে পরে গেলাম।কি সুন্দর মেয়েটা?
মেয়েটাকে আমি খুবই পছন্দ করি কিন্তু কিছু একটা
সমস্যা আছে।হয়ত বা ওটা ওর দোষ না,তবুও হয়ত
ভাগ্য খারাপ।
.
সুমি আমার সামনে এসে চেয়ারে বসতে বসতে
বলল,
--কেন ডেকেছ?
-কি সমস্যা তোমার?
-মানে?
-দেখো আমাদের মধ্য আর কিছু সম্ভব নয়,
-ও আচ্ছা,
-হুম,
.
আমি সুমির দিকে তাকালাম।ওর চোখে পানি এসে
গেছে।মেয়েটা এত দ্রুত কিভাবে কাঁদতে পারে?
সুমি চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,
-কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসি,
-আমার বাসায় তোমাকে পছন্দ করেনা,অনেক
ভেজাল হয়ে যাবে।
-সেটা সমস্যা না,তুমি কর কিনা সেটা আসল,
-হ্যা করি,কিন্তু সম্ভব না,
-সব সম্ভব,
-কিভাবে?
-আমি দেখছি,
-থাক,আমি দেখছি,
.
আমার কথা শুনে সুমির মুখে হাসি ফুঁটল।
আমি এই মেয়ের কথায় কিভাবে রাজি হয়ে গেলাম
টেরই পেলাম না।অবশ্য যা হয়েছে খারাপ না ভালই।
.
সেদিন আবার রিকশায় উঠলাম সুমির সাথে।
কেন যেন ভাল লাগছিল সেদিন, খুব ভাল। এলাকার সব
বন্ধুরাই দেখেছিল রিকশায় আমাদের দুজন কে
একসাথে।সেটা নিয়ে চিন্তা করার সময় ছিল না
আমাদের।
.
সুমিকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে এসে যেই বাসায়
ঢুকেছি,বাসায় ঢুকেই সোজা মার সামনে পড়লাম।উনি
চোখ মুখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হয়েছে?
-সুমির সাথে তোর কি?
-কিছুনা তো,
-রেস্টুরেন্ট এ নাকি গেছিলি
-কে বলল?
-কে বলল,সেটা জরুরী না,গিয়েছিলি কিনা সেটা
জরুরী,
-হ্যা,
-কেন?
-ওকে বিয়ে করব,
-কেন? তুই কি সব ভুলে গেছিস,
-না,ওই জন্যই ওকে বিয়ে করব।বিয়ের পর খুব
জালাব ওকে
-কি বলিস পাগলের মত?
-হুম
-থাক,জালাজালির দরকার নাই।গতকাল মেয়েটা এখানে
এসে কান্নাকাটি করছে।ওর নাকি কোন দোষ নাই।
মাফ করছি আমি,তুই ও কর,
.
এই কথা বলে মা চলে গেল।আমি একটু অবাক হলাম।
মেয়েটা আগেই সব প্লানিং করেই রেখেছে।
ভালতো, আমাকে বেশি কিছু করতে হলোনা।পিচ্চি
বেলার প্রেম টা এবার বিয়ে হবে।
পরেরদিন সেই কনকনে শীতের মাঝে সকালে নীল রঙের একটা শার্ট পড়ে হাতে একটা গোলাপ নিয়ে হাজির হলাম ওদের বাসার সামনে। অপেক্ষা করতে লাগলাম। গোলাপের সাথে একটা কাগজও ছিলো, সেটায় লেখা ছিল 'প্রতিদিন সকালে আমাকে বেড টি দেয়ার দায়িত্বটা নিবে তুমি?' ঠিক ১১ মিনিট পর বাসা থেকে বের হয়ে আসে সুমি।কিন্তু আমি ততক্ষণে কাগজটা লুকিয়ে সাড়তে পারি নি।কাগজটা দেখে ফেলে ও।একপ্রকার জোড় করেই আমার হাত থেকে নিয়ে নেয় ও কাগজটা। তারপর ওর উত্তরটা ছিল এমন 'আমি কিন্তু চা খুব ভালো বানাতে পারি'।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫২