আজ মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি! এই ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে আমাদের যত আয়োজন । খুব বেশি মনে পড়ে ছোট্র বেলার মিশনারী বোডিং স্কুলের সেই দিনগুলোর কথা । ক্রীড়া শিক্ষক নীপা আপা (তৎকালীন ভারতেশ্বরী হোমসের ক্রীড়া শিক্ষক-পরবর্তীতে আমাদের শিনারী স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক) শহিদুল ইসলাম সানু স্যার। যখন একশে ফেব্রুয়ারীর আগের দিন সন্ধাকালীন এসেম্বেলিতে সবাইকে দাঁড় করিয়ে বলতেন-আগামীকাল কি দিবস জান’তো ? আমরা দুষ্টেরদল সবাই সমস্বরে বলে উঠতাম জি স্যার ২১শে ফেব্রুয়ারী। তখন নীপ আপা আর সানু স্যার এ বিষয়ে খুব সুন্দর উপস্থাপানার মাধ্যমে আমাদেরকে এর গুরুত্ব বুঝিয়ে বলতেন। আমরা মনযোগ দিয়ে শুনতে থাকতাম আর ভাবতাম সেই দিন আসলেই কি হয়েছিল। স্যারদের কথায় পুরা বিষয়টির সংক্ষিপ্তরুপ উঠে আসতো। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য খুবই আগ্রহ জন্মাতো। আজকের দিনের মত তখন তথ্য প্রবাহের এত সুযোগ ছিলনা। পাঠ্য বই ছিল তখন একমাত্র ভরসা। ২১ ফেব্রুয়ারী খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্যারদের দেয়া গাঁদা ফুল হাতে নিয়ে, খালি পায়ে, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি ? গানটি গাইতে গাইতে সেই সেগুন বাগিচা হতে প্রেস ক্লাবের সামনের রোড দিয়ে হাইকোট, শিশু একাডেমীর সামনের তিন’তলা রোড (তখন হাই কোট+শিশিু একাডেমীর সামনের রোডটিকে তিন তলা রোড বলা হতো) শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার কথা ।আসলে তখন আমি ছিলাম অনেক ছোট(১৯৮৫) , আর তাই সেদিন এই ফুল দেয়ার অর্থ কি ছিল তা আমার কাছে অজানা ছিল । বড় হয়ে এই বিষয়ে অনেক কিছু জানলাম । ২১ ফেব্রুয়ারীর দিন খুব ভোরে আমাদের নিবেদিত প্রাণ শ্রদ্ধেয় স্যারগণ আমাদেরকে ঘুম হতে ডেকে তুলে প্রস্তুত হতে বলতেন এবং রাস্তায় কিভাবে চলতে হবে তা বাতলিয়ে দিতেন ; এদিক সেদিক যাওয়া যাবেনা, লাইন ছাড়া হবেনা আরও কত কি উপদেশ। আমাদের স্যারদের ভাষার প্রতি ও দেশের প্রতি মমতাবোধ দেখে এই মুহুর্তে আমি খুব বিস্মিত হচ্ছি। কারণ তখনকার স্যার আর এখনকার আমাদের বাচ্চাদের স্যারদের মধ্যে কত ফারাক । ফেব্রুয়ারী মাস শুরু হলেই আমাদের সেই প্রিয় আপা ও সানু স্যার এসেম্বেলিতে দাঁড় করিয়ে পূর্বের চাইতেও বেশী আবেগ ও দরদ দিয়ে জাতীয় সংগিত ও ভাষার গান সম্বস্বরে বলতেন। আজকের ২১ ফেব্রুয়ারী আর আমার সেই ছোট্র বেলার মিশনারী স্কুলের ২১ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে যোজন যোজন ফারকা। আজকে আমার খুব মনে মনে পড়ছে আমার সেই শ্রদ্ধেয় স্যারদের কথা তাঁরা হলেন সবর্জনাব শহিদুল ইসলাম সানু স্যার (যার নামের শেষ অংশটি স্যারই আমাকে গিফট করেছিলেন-স্যারের দৃষ্টিতে আমি খুব ভাল স্কাউটিং ও মাচ-পাষ্ট করার কারণে-স্যার বলতেন আমি নাকি দেখতে ঠিক স্যারের মতই ছিলাম-তাই স্যার খুব আদর করতেন আমাকে), নীপা আপা (নীপা আপাকে খুব ভয় পেতাম, শাহনেওয়াজ স্যার, খালেক স্যার (যিনি সড়ক দূঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন), সাবিনা আপা, তখনকার বেগম পত্রিকার খুব নির্বিক পাঠক নূরজাহান আপা (আমরা ক্লাসে বসে দেখতাম আপা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে তার বড় সাইজের ভ্যানেটি ব্যাগ হতে “প্রিয় বেগম পত্রিকায় চোখ বোলাতেন’’। সেই ছোট্র আমিটি আজকে অনেক বড় হয়ে গিয়েছি-কিন্তু আমার সেই নিবেদিত প্রাণ স্যারেরা কে কোথায় কি ভাবে আছেন তা আর আজকে জানার উপায় নেই-আমার স্যারদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা রইল । সেই সাথে ভাষা শহীদ’দের প্রতি রইল আমার অন্তহীন শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। যাদের প্রাণের বিনিময়ে ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বাঙ্গালী ও বাংলা ভাষা পৃথিবীর সকল ভাষাভাষীর কাছে স্বতন্ত্র মরযাদা পেয়েছে এবং বাঙ্গালী জাতীকে অনন্য সম্মানে বিশ্ব দরবারে অধিষ্ঠিত করেছে। তাই এই দিনটি শুধু শোকের নয় । আত্মমরযাদায় নিজেদের অবস্থানকে অনুভবের আরেকটি দিন। জয়তু ২১ ফেব্রুয়ারী।
ছবি-নেট হতে সংগৃহিত ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:২৮