উম্মে হানি নামের জনৈকা গৃহবধূ গেলেন রাজধানীর এক কাঁচাবাজারে। মাছ-মাংসের দোকান ঘুরছেন আর ভাবছেন কী কী কিনবেন। সাহস হলো না মাছ-মাংস কেনার। ৫০ টাকায় শুটকি কিনে শাক-সবজি কিনতে মনস্থির করলেন। কিন্তু সব সবজির দাম আকাশচুম্বি। কেবল কমের মধ্যে আছে পেঁপে। ১ কেজি পেঁপে, ২৫০ গ্রাম পেঁয়াজ, ৫০০ গ্রাম একটা পামওয়েলের বোতল কিনে বাসায় চলে এলেন।
রাতে স্বামীকে বললেন, ‘১৫ হাজার টাকা বেতনে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই এখন কঠিন।’ স্বামী বেচারা আর কী বলবেন? এই সামান্য বেতনে স্বামী-স্ত্রী মিলে চলা যায় না, এরপর আবার গ্রামের বাড়িতে খরচা পাঠাতে হয়। প্রতিমাসে ধারদেনা লেগেই থাকে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমদানি কমে যাওয়ায় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিসেম্বরের আগে নাকি সব স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার, তাও ডিমের দাম ৫৫ টাকা হালি। উম্মে হানি জিগ্যেস করলেন, ‘সরকারের কাজটা আসলে কী? বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না কেন? এই যে পদ্মা সেতু, এই যে মেট্রোরেল - মানুষ যদি খেতে না পারে এসব দিয়ে কী হবে? সবার আগে তো মানুষকে খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে।’ স্বামী বেচারা নিরব দর্শক।
২
সামনে নির্বাচন। রাজপথ গরম। কে ক্ষমতায় যাবে, তা নিয়ে মাঠ কাঁপাচ্ছে রাজনীতিকেরা। দেশ-বিদেশে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়েছে। ছিঁচকে চোরও এখন বড়ো নেতা। পথেঘাটে বিলবোর্ড। ব্যবসায়ীরা সংসদ দখল করেছেন। রাজনীতির ওপর তো আর ব্যবসা নেই।
সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে। কাকে রেখে কাকে বিশ্বাস করবে? নির্বাচনের আগে যে নেতা কদমবুসি করে যায়, নির্বাচন শেষে সে জমিদার। কোনো কাজে গিয়ে একশো দিন ঘুরেও কাজ উদ্ধার করা যায় না। যেন রোগ সারলে ডাক্তার ব্যাটা শালা।
কোনোমতে নির্বাচিত হয়ে গেলে সরকারের বরাদ্দ নিজের মনে করে গিলে ফেলা। নির্বাচনি খরচ সুদে-আসলে তোলা। বিপদজনক মনে হলে বিদেশে অর্থ পাচার। ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়ানো। দেশ ভালো না বলে জাহির।
৩
নেতা মসজিদ-মাদ্রাসায় দান-খয়রাত করেন প্রচুর। গরিব-দুঃখীদের সাহায্য-সহযোগিতা করেন। হজ করে এসেছেন। নামের আগে হাজি টাইটেল। খুব ভালো লোক হিসেবে স্বীকৃত। যদিও চরিত্র নিয়ে কানাঘুষা আছে। কারও মনে প্রশ্ন নেই উনি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন কীভাবে।
ভাত ছিটালে যেমন কাকের অভাব হয় না, তেমনি নেতারও গুণগ্রাহীর অভাব নেই। নেতা জনপ্রিয়তা ধরে রাখার কৌশলও ভালো জানেন। এসব ফকির-মিসকিনদের দু’পয়সা দিয়ে কেনা যায়; এটা উনি বুঝতে পারেন।
৪
সাক্ষরতার হার বেড়েছে। তবে এখনও শিক্ষিতদের বৃহদাংশ নারীর উচ্চ শিক্ষার বিরুদ্ধে। তারা চাকরি করলে নাক সিটকায়। ঘরে-বাইরে কোথাও তাদের নিরাপত্তা নেই। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী-বিরোধীদলীয় নেত্রী-স্পিকার যেখানে নারী, সেখানে নারীকে এখনও মানুষ হিসেবে দেখতে না পারা আসলেই অভাবিত।
৫
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ। হামলা-প্রতি হামলায় মানুষ মরছে। কাঁদছে মানবতা। একপক্ষ ইসরায়েলকে মদদ দিচ্ছে আরেকপক্ষ ফিলিস্তিনকে। সমস্যার যেন সমাধান নেই। জিইয়ে আছে যুদ্ধ। এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বে পৃথিবী দু’ভাগে বিভক্ত। ভুক্তভোগীরা ছাড়া যুদ্ধের ভয়াবহতা কে উপলব্ধি করতে পারে? অনেকের কাছে সেসব কেবলই সিনেমা! স্থিরচিত্র-ভিডিও দেখে শিহরিত হওয়া ছাড়া আর কার্যকারিতা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:১৭