somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজের দেখা / শোনা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার আর্কাইভের জন্য-

৩১ শে মার্চ, ২০০৭ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


71 সালের মাঝামাঝি কোন একটা সময়। আমার স্মৃতিশক্তি বিট্রে করছে ইদানিং আমার সাথে, নাহলে তারিখটা সহ-ই বলা যেতো। আমাদের মাধবদী এলাকায় যুদ্ধে লিপ্ত আছে কয়েকটা মুক্তিসেনার গ্রুপ। তেমনি এক গ্রুপের কমান্ডার আনোয়ার। ভীষন সাহসী আর নির্ভিক। আলগী নামক গ্রামে এক অপারেশনে আসে। এই আলগী গ্রামের অবস্থান মাধবদী বাজার থেকে খুব বেশী দূরে নয়। মাধবদী বাজারে অপারেশন চালানোর জন্য কান্দাপাড়া আর আলগী গ্রামের অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

নুরালাপুর হয়ে আনোয়ারের গ্রুপ আলগী ভুঁইয়া বাড়িতে অবস্থান নেয়। পাক-হানাদারদের ভয়ে আলগী গ্রাম প্রায় ফাঁকা তখন। আলগী গ্রামে তখন ইতস্ততঃ ঝোপঝাড় আর জঙ্গল। একটা বড়, মাটির রাস্তা এঁকে বেঁকে মাধবদী বাজারের দিকে চলে গেছে।

ভুঁইয়া বাড়ির দোতলা দালানটিতে গড়ে ওঠে আনোয়ারদের আস্তানা। উদ্দেশ্য, এখান থেকেই আস্তে আস্তে মাধবদী বাজার মুক্ত করে সামনে পাঁচদোনার দিকে এগুবে তাঁরা।

সব প্ল্যান ঠিক হয়। কবে অপারেশন হবে, কে কোথায়, কোনদিক দিয়ে অতর্কিতে হামলা চালাবে, সবকিছু। অপারেশনের আগের রাতে, যখন সবাই গভীর ঘুমে। তখনই হঠাৎ বুটের ধুপধাপ আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আনোয়ারদের। কিছু বুঝার আগেই বাড়িটি তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে পাক সেনারা। বাকি একদিকে কাঁটাবন। লম্বা চাবুকের মতো লতার সারা গায়ে কাঁটা। ঐ কাঁটার ঘন জঙ্গল ছিলো সেদিকটায়। কয়েকজন ঝুপ ঝুপ করে লাফিয়ে পড়ে সেই কাঁটায়। কোন মতে সারা শরীর ছিলে বের হয়ে দৌড়ে চলে যায় ডৌকাদীর দিকে। পালাতে পারে না আনোয়ার সহ কয়েকজন। আটকা পড়ে তারা।

ঘরে ঘরে তল্লাশী হয়। পাওয়া যায় যুদ্ধের নানা সরঞ্জাম। "সাক্ষাৎ মুক্তি"- প্রমাণিত। এগিয়ে আসে রশীদ, রাজাকার রশীদ নামে যিনি এখন সর্বাধিক পরিচিত। মাধবদীর অদূরে বাগবাড়ি নামক জায়গায় যার বাড়ি। তার নির্দেশে বেঁধে ফেলা হয় আনোয়ার আর তাঁর সঙ্গীদের। আনোয়ার শুধু একবার বলে, "আপনে না আমার চাচতো ভাই...! আপনে এই জালিমগো হয়া আমারে মারোনের লাইগ্যা লইয়া যাইতাছেন, রশীদ ভাই? অহনো সময় আছে আমরা ইচ্ছা করলেই এগোরে শ্যাষ কইরা দিতাম পারি...।" রাজাকার রশীদ তখন আনোয়ারকে ধমক দিয়ে বলে, "দেশের লগে গাদ্দারী করছস তুই। এহন তোরে মায়া কইরা আমি মরমু নিহি"?

বাড়ির নিচে কাঁঠাল গাছের সাথে বাঁধা হয় তিনজন মুক্তি সেনানী কে। তারপর রাজাকার রশীদের নির্দেশে তাঁদের বুক বরাবর চালানো হয় গুলি। গুলির ধাক্কায় দেহ গুলো লাফিয়ে ওঠে, রক্তে ভেসে কাঁঠাল গাছের তলা...। রশীদেরা ফিরে যায় একসময়। আনোয়ারদের লাশ ফেলে রেখে যায় রক্তের নালায়।

আমি যতোবারই ঐ বাড়িটির সামনে দিয়ে যেতাম, ততবারই মনে হতো- হয়তো ঠিক এখানটাতেই পড়েছিলো আনোয়ারের মুক্তিকামী শরীরটি, হয়তো এখনো তিনি ঘোলা চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে এক জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে। আমি, স্বাধীনতা-উত্তর এক প্রজন্ম, কী-ই বা করতে পেরেছি আনোয়ারদের জন্য?

কিছু যে করিনি তাও তো নয়। যখন সেভেনে পড়ি তখন রশীদ রাজাকারের ছোট ভাই আমাদের বাড়িতে আসে। আমি সবার সামনেই চিৎকার দিয়ে বলেছিলাম, "তোমার ভাই একটা রাজাকার..."। প্রবল শাসনের ভেতর রাখা আমার মা আমার এমনতর 'ঔদ্ধত্বে' সেদিন কিছুই বলেনি। কেউ যদি ঢাকা থেকে সিলেট গেলে পাঁচরূখী বাজারের পর একটা জায়গায় 'উট মার্কা ঢেউটিন'-এর কারখানা দেখতে পাবেন। জায়গাটার নাম বাগবাড়ি। লোকাল বাসের এখানে একটা স্টপেজ আছে, "রশীদ রাজাকারের বাড়ি"। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর মনে হয় স্টপেজটা ঐভাবে আর বলে না কেউ।

লোকটি এখনো জীবিত যে!
====================================

কিং অফ জি্বনস- আমার এখানে মার্চ মাস বিদায় নিতে এখনো পুরো দুই ঘন্টা ঊনত্রিশ মিনিট বাকি!

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০০৭ বিকাল ৩:৩৭
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

১. ৩১ শে মার্চ, ২০০৭ রাত ৯:৪৬

অতিথি বলেছেন: ধুসর,

অসংখ্য ধন্যবাদ।

আর্কাইভে ঢুকিয়ে নেব।



এন্ড, গ্রেট জব!!! মুখের উপর বলতে পারছেন!!

২. ৩১ শে মার্চ, ২০০৭ রাত ৯:৪৬

নজমুল আলবাব বলেছেন: অসাধারন। কিন্তু মূল বর্ণনাটা কার দেয়া?

উল্লেখ করলে ভাল হত।

৩. ৩১ শে মার্চ, ২০০৭ রাত ১০:০৩

অতিথি বলেছেন: আর্কাইভ ওপেন হয়েছে।

৪. ৩১ শে মার্চ, ২০০৭ রাত ১০:২৬

অতিথি বলেছেন: ঘটনাটা আমাদের এলাকায় মুখে মুখে এখনো আছে। আমি অনেকের কাছ থেকে শোনা অ্যানেকডোট গুলো একীভুত করেছি কেবল।



অনেক সোর্সের মাঝে একজন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মনির, যার কোলে বসে শুনতাম মুক্তিযুদ্ধের নানা গল্প, আরেকজন আনোয়ারদের বুকে গুলি করার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা এক তৎকালীন কিশোর।



নিজের পরিবার থেকে শোনা কথার সোর্সটা না হয় তুলেই রাখলাম!



ধন্যবাদ আপনাকে প্রেসিডেন্ট অফ জি্বনস।

৫. ৩১ শে মার্চ, ২০০৭ রাত ১১:০৩

অতিথি বলেছেন: অসাধারন গোধূলী, আরও জানা থাকলে কষ্ট করে আমাদের সাথে শেয়ার করেন।

৬. ৩১ শে মার্চ, ২০০৭ রাত ১১:৪৪

মুশফিক বলেছেন: হু সাহসের তারিফ করতে হয়।গুড জব

৭. ০১ লা এপ্রিল, ২০০৭ ভোর ৬:২৬

অতিথি বলেছেন: পড়লাম ... কিছু বলার নাই ... শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়া।

৮. ০১ লা এপ্রিল, ২০০৭ বিকাল ৫:৫৮

অতিথি বলেছেন: আলী রাসায়নিক, মুশিমুশি- ধন্যবাদ আপনাদের।



এতো বড় লেখা পইড়া ফেল্লেন ঝড়োবাতাস? ক্যামনে কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। একাত্তুর থেকে চব্বিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২০




সমাজকল্যাণ ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। তাদের সুস্থ করতে পারিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটু সৃজনশীল হও=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৬


খেয়ে দেয়ে আরামসে ঘুম, এ জীবন বুঝি
খাও দাও ঘুমাও এ কর্ম রোজই,
টিকটকে ভিডিও, ফেসবুকের রিল,
তাতেই করছো সুখ ফিল?

সাজুগুজু, প্রাশ্চাত্যের ড্রেসাপ, হাই হিলে হাঁটা
ব্যস! এমন অহমে পূর্ণ জীবনে ঝাঁটা
নেই সংসার গুছানোতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকার কি পদক্ষেপ নিবে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২৭


আওয়ামী লীগের মিছিলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকার ডেমরা-উত্তরা- বাড্ডা - মিরপুর সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল করছে। প্রায় তিনমাস ধরে রাস্তায় মিছিল নামানোর প্রস্তুতি ছিলো। মিছিলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবেনাকো তুমি- যেদেশে হাসির জন্যও প্রাণ দিতে হয়!

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩৩

কয়েক দিন আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম হবু চন্দের আইন কবিতা নিয়ে, যেখানে কান্নার বিরুদ্ধে রাজা আইন জাড়ি করেছিলেন.....আজ লিখতে হচ্ছে- হাসির জন্য প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ঘটনা নিয়ে। আমরা সবাই ইতোমধ্যেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

৭১ না দেখেও কেবল ইতিহাস পড়ে যদি আপনি ৫৩ বছর পরে এসেও পাকিস্তানকে ঘৃণা করতে পারেন। তাহলে নিজ চোখে ভারতের আগ্রাসন দেখেও চুপ কেন?

লিখেছেন তারেক সালমান জাবেদ, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

প্রথমেই শুরু করতে চাই সীমান্ত হত্যা নিয়েঃ -
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী দ্বারা ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ সাধারণ ও বেসামরিক বাংলাদেশি হত্যা করা হয়েছে। ভারত সরকারের বাংলাদেশের সীমান্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×