somewhere in... blog

গদ্য কার্টুন- বুয়েটের সমস্যা সমাধানে বিকল্প প্রস্তাব (কপি পেষ্ট) পড়ে দেখুন একবার

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে উদ্ভূত সমস্যার সবচেয়ে সুন্দর সমাধান কী হতে পারে? উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য মহোদয় পদত্যাগ করবেন না। কারণ, ওই পদের মালিক তাঁরা নন, যাঁরা তাঁদের ওই পদে বসিয়েছেন, তাঁরা যদি আদেশ করেন, কেবল তা হলেই তাঁরা তা করতে পারেন। ওদিকে শিক্ষকেরা এবং শিক্ষার্থীদের সিংহভাগ এককাট্টা, তাঁরা ওই দুজনের পদত্যাগ ছাড়া কিছুতেই ক্লাস করবেন না, আন্দোলন ছাড়বেন না।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে বসে আছেন হাজার হাজার ছাত্র, তাঁরা বুয়েটে, মেডিকেলে ভর্তি হতে চান; দুই জায়গাতেই অনিশ্চয়তা। একজন অভিভাবক আমাকে এক করুণ চিঠি লিখেছিলেন, তিনি সরকারের একজন নিম্ন বেতনভুক কর্মচারী, তাঁর দুই ছেলে বুয়েটে পড়েন, তিনি চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন, কবে আবার বুয়েটে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে, কবে তাঁর ছেলেরা আবার ক্লাসে যাবেন, কবে তাঁরা পাস করে বেরোবেন।
এই অবস্থায় সরকার নিশ্চুপ, সম্ভবত নিষ্ক্রিয়। হয়তো হাজার হাজার ছাত্র ও তাঁদের অভিভাবকদের দীর্ঘশ্বাস যাঁদের স্পর্শ করার কথা, তাঁদের চামড়া খুবই মোটা, তাই কোনো কিছুই তাঁদের বোধে ধরা পড়ে না। তবে একজন এমন কথাও বললেন, যেখানে পদ্মা সেতুর মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ভেস্তে যাচ্ছে একজন-দুজনের পদত্যাগের অনীহায়, যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারি ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে হায় হায় কোম্পানি, যেখানে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি গড়াগড়ি খাচ্ছে সরকারের চৌকাঠের পাশে মলিন কার্পেটের ধূলিতে, সেখানে বুয়েটের মতো একটা ছোট্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বছর কয়েক যদি বন্ধও থাকে, কার কী এসে-যায়? শিক্ষকেরা পদত্যাগ করতে চান, তাঁদের পদত্যাগ করতে দাও; বুয়েটে ক্লাস হবে না, না হোক; দরকার হলে ভাড়া করে শিক্ষক আনা হবে, দরকার পড়লে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ বুয়েটে ক্লাস হবে না, তাতে কী বা এমন এসে-যায় চামড়া-মোটাদের?
শুনে আমার বুক কেঁপে উঠল। আইভরি কোস্টের রাজধানীতে আমি একটা বিশ্ববিদ্যালয় দেখেছি। পাকা একতলা বিল্ডিং। মেঝে থেকে গাছ গজিয়েছে, ছাদ ফুঁড়ে সেই গাছ আকাশ দেখার চেষ্টা করছে। কত দিন কোনো শিক্ষার্থী বা শিক্ষকের পা ওই শিক্ষাঙ্গনে পড়েনি!
বুয়েটেরও কি সেই দশা হবে?
না, আমরা চাই না বুয়েটের সুন্দর সুন্দর বিল্ডিং, ঢাকার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার সোনার চেয়ে দামি জমির এই রকম অপচয় হোক। অবশ্যই উৎপাদনশীল খাতে বুয়েটের এই স্থাপনা ও অমূল্য ভূসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে।
এ জন্য সরকার এবং উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের সহূদয় বিবেচনার নিমিত্ত কতগুলো সুচিন্তিত প্রস্তাব পেশ করছি।
এক: হাঁসমুরগির খামার স্থাপন:
দেশে সম্প্রতি ডিমের দাম খুব বেড়ে গেছে। মুরগিরও খুব আক্রা। অথচ পুষ্টিহীনতার এই দেশে আমিষসংকট মেটাতে হাঁস-মুরগির মাংস ও ডিমের কোনো বিকল্প নেই। বুয়েটের আবাসিক হলগুলোতে হাঁস-মুরগির চাষ করা হোক। ছাত্রদের রুমগুলোতে ফার্মের মুরগি থাকার জন্য বহুতলবিশিষ্ট তাক বানানো হলে কয়েক লাখ মুরগির আবাসন সম্ভব। ধরা যাক, মুরগির সংখ্যা দাঁড়াল তিন লাখ। এর মধ্যে দুই লাখ ডিমও যদি প্রতিদিন পাওয়া যায়, তা হলে রোজ ১৬ লাখ টাকা শুধু ডিম থেকেই আয় করা যাবে। এ ছাড়া মুরগির মাংস সরবরাহ করে দৈনিক কয়েক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
দুই: উন্নত প্রজাতির গরু চাষ:
বুয়েটের খেলার মাঠে জিমনেসিয়ামে উন্নত প্রজাতির গাভির চাষ করা যেতে পারে। এই গাভি কেবল দুধই দেবে না, মাংস দেবে, নিয়মিত গোবরও দেবে। গরুর গোবর থেকে উৎকৃষ্ট সার হবে। এই গোবর থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করে বিদ্যুৎ সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব। গরুর লেজ থেকে জুতার বুরুশ, দাড়ি কামানোর ব্রাশ ইত্যাদিও বানানো যাবে। গরুর চামড়া মূল্যবান জাতীয় সম্পদ। এ থেকে উন্নত জুতা বানানো যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। পদ যদি কেউ ত্যাগ না করে, তবে সেই পদের জন্য পাদুকাও তো প্রয়োজনই বটে।
তিন: ঘুঘু চাষ
বুয়েটের ক্লাসভবনের সামনে খোলা ভিটে পড়ে আছে। সেই ভিটেয় ঘুঘু চড়ানো যেতে পারে। ঘুঘু ঘু ঘু করে ডাক দিয়ে খোকাদের ঘুম পাড়িয়ে দেবে। খোকারা ঘুমুলে পাড়াটা জুড়োবেও বটে।
চার: প্লট বরাদ্দ ও বহুমুখী বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ
বুয়েট ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সোনার চেয়ে দামি স্থানে অবস্থিত। এর প্রতি বর্গইঞ্চি জমির যা দাম, তাতে ওখানে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাখা কোনোভাবেই অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক বলে বিবেচিত হতে পারে না। কাজেই বুয়েটের ওই জমিটা কোনো বেসরকারি হাউজিং কোম্পানিকে বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। যারা ওখানে গড়ে তুলবে একটা বহুমুখী বহুতল মার্কেট কমপ্লেক্স। যেখানে দোকান বরাদ্দ দেওয়া যাবে, জিমনেসিয়াম থেকে শুরু করে সিনেমা হল পর্যন্ত থাকবে। সেই কমপ্লেক্সে অন্তত ডজন খানেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরও জায়গা দেওয়া সম্ভব। ওপরের তলার পরিসরগুলো আবাসিক ফ্ল্যাট হিসেবে বিক্রি করা যাবে। এই কাজটা ঠিকভাবে করতে পারলে কয়েকটা পদ্মা সেতুর খরচ সরকারের পক্ষে উঠিয়ে আনা সম্ভব। আর কাজ দেওয়া, দোকান বরাদ্দ, ফ্ল্যাট বরাদ্দের সময়ও কোটি কোটি টাকা যথাযথ পকেটে ঢুকিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।
আশা করি, এই প্রস্তাবগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষ সহানুভূতির সঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখবে। বুয়েট-সংকটের এমনতর সুন্দর সমাধান পেয়ে দেশের মানুষ সাধু সাধু বলে রব করে উঠুন, কর্তৃপক্ষ কি তা চায় না?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

উৎস
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:১৪
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৫০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩



গতকাল ছিলো বাংলা নববর্ষ।
সকালে এক জরুরী কাজে আমি উত্তরা গিয়েছিলাম। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু দেরী করে ফেললাম। আজ বাসার সবাই মাওয়া যাবে। সেখানেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই সময়ের কিঞ্চিৎ ভাবনা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭

বাক স্বাধীনতা কিংবা যা মনে আসছে তাই লিখে বা বলে ফেলছেন, খুব একটা ব্যাক স্পেস চাপতে হচ্ছে না এখন, তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোন দল নির্বাচিত হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: অপেক্ষা (১ম পর্ব)

লিখেছেন শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭

ফকির আবদুল হাই সাহেবের সাথে পরিচয় হয় যখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন। খুবই আধ্যাত্মিক আর রহস্যময় মানুষ। পেশায় একজন অধ্যাপক। অধ্যাপনা ছেড়ে আধ্যাত্মিকতা করেন, ফকির নামটি তার নিজস্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ১০ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরা বেশীরভাগ সময়ই সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। গত তিনদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের মডেল মসজিদ প্রকল্প: রাজনীতি, প্রতারণা ও সমাজের প্রতিচ্ছবি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৪


২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়। ইসলামপন্থীদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর পথ বেছে নেয়। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা সরকারকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×