সেই ছোট বেলা থেকে ডাক্তার হতে চেয়েছি, সবাই উৎসাহ দিয়েছে কিন্তু ভুলেও কেউ কখনো বলেনি এক অসম্ভব কস্টের কথা ,কেউ বলেনি এত বছর ডাক্তারী করে জীবনে হঠাৎ ই অস হায়ত্ব চলে আসবে.।তিলে তিলে জীবনের পরাজয় দেখতে হবে।প্রতিদিন নতুন ঘটনা,নতুন এক জীবনের সাথে পরিচয় আবার নতুন করে পরাজয় দেখা.........।আমাদের ইউনিটে এক জন বৃদ্ধ ভদ্রলোক ভর্তি হলেন শ্বাস কস্ট নিয়ে।যথারীতি রোগীর লোকের সাথে কথা বললাম শুনে দেখি বেচারা ভীষন ভালো এথলেট ছিলেন।১৯৬৫ ও১৯৭০ এর ম্যারাথন রেস জয়ী।তারচেয়েও বেশী হলো তিনি ছিলেন চীরকুমার।আর তাই তার এই অস হায় মূহূর্তে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলো তার ভাগনে....যিনি রোগী তিনি ভালোই শ্বাসকস্টে ভুগছিলেন এমনকি মনে হলো যদি লাইফ সাপোর্ট না দেই তাহলে কিছুক্ষনের মধ্যেই অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটবে।তাদেরকে বুঝিয়ে বললাম মেশিনের কথা কিন্তু তারা কোন ভাবেই মেশিনে দিবেন না।এমন না যে টাকা পয়সার অভাব কারন হলো তাকে দেখার কেউ নেই....।আমি অসহায় বোধ করছি...অবস্থা দ্রূত খারাপ হচ্ছে...আমি বুঝতে পারছি রোগী হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে আমি বার বার কথা বলছি তাদের একটাই কথা মেশিনে দিবেন না যদি আল্লাহ এমনেই নিয়ে যায় এমনেই নিবো............।তাহলে হাসপাতালে আনলেন কেন আল্লাহ বাড়ীতেই নিয়ে যেত ।তাদের উত্তর শুনে থমকে গেলাম তা হলো যদি তাকে হাসপাতালে না আনা হয় তাহলে আত্মীয় স্বজন বলবে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়নি.......এই দায় এড়াতে....তারা রোগীর কাছ থেকে সরে গেল বললো ডাক্তার সাহেব রাতে কেউ থাকতে পারবোনা আমাদের দরকার হলে ফোন দিয়েন বলে নাম্বারটা দিয়ে গেল......বললো যেন মৃত্যুর সময়টা জানিয়ে দেই.....আমি প্রস্তুত হলাম কস্টকর এক মৃত্যু দেখার জন্য।অনেক চেস্টা করলাম রোগীকে একটু আরাম দেয়ার জন্য.।আমাকে হতাশ করলোনা রোগী.রাত প্রায় আড়াইটার দিকে আরামে চোখ বুজলো ....।চীর দিনের জন্য.।..আমি ফোন দিলাম সেই নম্বরে জানালাম মৃত্যুর খবর ওনারা বললো এতো রাতে কিভাবে আসবেন ..সকালে আসবেন..। আমি জানতাম এমনই কিছু হবে বললাম আসেন সকালেই আসেন......।সেই মৃতদেহ তারা নিতে এসেছিলো পরেরদিন দুপুর ২ টায়.........কি দাপটময় জীবনের কি করুন পরিনতি........।ভাবলাম তার ছেলে মে্যে থাকলে হয়ত তাকে এমন ভাবে চলে যেতে হতোনা.. আবার ভাবি আসলে তাও না কয়টা ছেলে মে্যেই এখন বাবা মা র খোজ রাখছে??দেখা যায় বাবা গ্রামের বাড়ীতে ছেলে আমেরিকায় মেয়ে কানাডায় ..মৃত্যুর পর বাবা অপেক্ষা করছে হিমাগারে ছেলে এসে কবরে শুয়াবে বলে....।হায়রে সারাজীবনের কস্টের মূল্য ছেলেমেয়েরা এভাবে দেয়??????? এসব দেখতে দেখতে অস হায় লাগে জীবন জেতার যুদ্ধে নেমে এভাবে পরাজয় মেনে নিতে পারিনা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৫১