লেখকঃ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
প্রথম প্রকাশঃ ২০১৫
মূল্যঃ ২৪০ টাকা
এক বাক্যেঃ
রহস্য আর শঙ্কার গোলক ধাঁধাঁয় হারাতে চাইলে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি’ পড়ুন।
কাহিনি সংক্ষেপঃ
মফঃস্বল শহর সুন্দরপুরে আগমণ ঘটে এক অচেনা ব্যক্তির; নাম নূরে ছফা। নিজেকে সে পরিচয় দিয়েছে “মহাকাল” পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে। তার গতিবিধি অস্পষ্ট আর রহস্যময়। সেই রহস্য রবন্দ্রনাথ কে কেন্দ্র করে। রবীন্দ্রনাথের খুব বড় ভক্ত না হলেও তার যাবতীয় কৌতূহল সুন্দরপুরের ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথা ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি’কে কেন্দ্রিক।আদৌ রবীন্দ্রনাথ এখানে খেতে এসেছিলেন, কি এসেছিলেন না তা নিয়ে তার মাথা ব্যথা না থাকলেও, তার মাথা ব্যথা অন্য একটা বিষয় নিয়ে। যারা একবার ‘রবীন্দ্রনাথ’এ খেতে আসেন, পরবর্তিতে কেন তারা আবার কিসের আকর্ষণে এখানেই ফিরে আসেন এই প্রশ্নের উত্তর জানতেই তার সুন্দরপুরে আসা।
পুলিশের ইনফর্মার আতর আলিকে নিয়ে সঙ্গে প্রশ্নের উত্তরের অনুসন্ধানে নামেন নূরে ছফা। উত্তর খোঁজার এই যাত্রায় যোগ হতে থাকে বিস্ময়কর সব ঘটনা আর অভিজ্ঞতার। সত্যের মুখোমুখি হয়েও পরিহাসের ব্যাপার এই যে, সেই সত্য প্রকাশ করার সুযোগ নেই। সত্যটি জানতে হলে পড়তে হবে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি’।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
শুরুতেই বলে নেই, ভালোলাগার বই ছাড়া আমি কোন বই সম্পর্কে কথা বলি না। আর সেহেতু এই বইটিও নিঃসন্দেহে আমার পছন্দের তালিকাভুক্ত। বইটির প্রথম কৌতূহল জাগানিয়া উপাদান হচ্ছে এর শিরোনাম; ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি’। নামটি পাঠকের মনে হাজারও প্রশ্নের উদ্ভব ঘটায়। নামটা পড়ে আমার প্রথমে মনে হয়েছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে হয়ত অপ্রচলিত কোন গোপন তথ্যকে কেন্দ্র করে যা ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে গেছে। আর টুইস্টের শুরু এখান থেকেই, মানে শিরোনাম থেকেই। আমার মত অনেকেরই অন্তত একবার মনের দরজায় কড়া নাড়বে একটি প্রশ্ন— রবীন্দ্রনাথ কোথায় খেতে আসেন নি? নামের এই আসল রহস্যটা বই না পড়লে জানা সম্ভব না। তাই একথা বলা যায়, নাম থেকেই পাঠককে রহস্যের হাতছানি দিয়ে ডাকে বইটি।
নাম থেকে যে বইয়ের রহস্যের শুরু তার ভেতরটা একেবারে সাদামাটা নয়। নামের টুইস্টের পরে পাওয়া যায় অন্য স্বাদ। পুরো উপন্যাসটা একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে কাটে। সত্যটা কি? কি ঘটতে চলেছে? কি ঘটবে? কি আছে এই রহস্যে ঘেরা নামের পেছনে? নায়ক নূরে ছফার সাথে সুন্দরপুরে ঘুরতে খুব একটা খারাপ লাগবে না পাঠকের। আর সেই সুন্দরপুরের রহস্যময়ী নারী মুসকান জুবেরি নামের যে চরিত্রের দেখা পাওয়া যায় তাকে নিয়েও কম প্রশ্নের উদয় হয় না।
উপন্যাসটিতে বেশকিছু মুখরোচক খাবারের বর্ণনা পাওয়া যাবে যা ভোজন রসিক মানুষ না হলেও যে কাউকে আকর্ষণ করবে। আর এর কৃতিত্ব একমাত্র ঔপন্যাসিকের। তার সার্থক উপস্থাপন জিহ্বায় পানি এনে দেবে। আর রহস্যের উন্মোচনে আপনি হবেন বিস্মিত।
রহস্যের প্রাচীরে ঘেরা এই উপন্যাসে রহস্যের পাশাপাশি অশিক্ষিত ও সরল মানুষগুলো মধ্যে প্রচলিত কুসংস্কারের উদাহরণ হিসেবে গোরখোর ফালু চরিত্রটির দেখা পাওয়া যায়। উপন্যাসটিতে তাকে নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রচলিত ধারণাটি বেশ হাস্যকর মনে হলেও নেহাত একটি উপন্যাসের চরিত্র হিসেবে অবহেলা করা যায় না। আমাদের চারপাশে এরকম চরিত্রের দেখা পাওয়া যায় যাদের নিয়ে লোক মুখে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে থাকে। আর উপন্যাসে ফালু চরিত্রটি রহস্যের অন্যতম খোঁড়াক হিসেবে কাজ করছে।
উপন্যাস সম্পর্কে শুধু এটুকুই বলবো, বিস্ময়কর এক সত্যের মুখোমুখি হতে পাঠককে নিরবে অগ্রসর হতে হবে নায়ক নূরে ছফার হাত ধরে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৪৫