লেখকঃ রেমন্ড খাউরি
প্রকাশকালঃ ২০০৫
এক বাক্যেঃ
কেন, কে বা কারা এই প্রশ্ন দুটির উত্তর খুঁজতে পাঠককে টেম্পলারদের ঘোড়ার চড়ে তাদেরই ফেলে যাওয়া সূত্র ধরে বর্তমান থেকে কখনো কখনো যেতে হবে কয়েক শতাব্দী পূর্বে এবং অতঃপর নতুন আরেকটি প্রশ্ন পাঠকদের দিকে ছুড়ে দিবে ''কি ছিল"।
কাহিনি সংক্ষেপঃ
এপ্রিল মাস। নিউইয়র্ক শহর। আলো ঝলমলে এক সন্ধ্যা। মেট্রোপলিটন মিউজিয়ামে আয়োজন করা হয়েছে এক জমকালো প্রদর্শনীর। প্রাচীন রীতিতে সাজানো মিউজিয়ামের পিলারগুলোর উপর যে সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে তাতে লেখা-
"ট্রেজার অফ দ্য ভ্যাটিকান।"
শহরের অভিজাত শ্রেণির মানুষগুলো তো এসেছেই, সেই সাথে কৌতুহলী সাধারণেরও আগমন ঘটেছে। কারণ, ভ্যাটিকানের সংরক্ষিত ট্রেজারগুলো দেখার এ রকম সুযোগ বার বার আসে না।
উৎসব মুখর এই পরিবেশে প্রাচীন সাজে সজ্জিত চারজন ঘোড়সওয়ার একসারিতে এগিয়ে চলেছে মিউজিয়ামের দিকে। তাদের মাথায় শিরস্ত্রাণ, গায়ে প্রাচীন ভেস্ট, পায়ে কালো বুট, পুরু কাপড়ের লম্বা মোজা, কোমরে ঝুলছে তলোয়ার আর বুকে ঝুলানো একটুকরো সাদা কাপড়ের মাঝে লাল রঙের ক্রস চিহ্ন আঁঁকা। ঠিক যেন কয়েক শতাব্দী পূর্বের ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা নাইট টেম্পলার।
টেম্পলার সাজে সজ্জিত ঘোড়সওয়ার দলটি মিউজিয়ামের ফটকের সামনে পৌঁছামাত্র তাদের ভেতরে প্রবেশে বাঁধা দেয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের একজন। ঘোড়া থেকে একজন ঘোড়সওয়ার নেমে এগিয়ে যান লোকটির সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোমরের তলোয়ারটি দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তা কর্মীটির মাথা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলেন টেম্পলার সাজে সজ্জিত লোকটি। উপস্থিত সকলের বুঝতে বাকি রইলো না যে লোকগুলো মিউজিয়ামের প্রদর্শনীটির সাথে যুক্ত নয়। কিন্তু ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেছে।
মিউজিয়ামে শুরু হয় ভয়ংকর আর বিভৎস ডাকাতি। নাইট টেম্পলারদের পোশাক পরা ডাকাতেরা মূল্যবান জিনিসপত্রের সাথে নিয়ে যায় বহু প্রাচীন এক এনকোডার। ঘটানার তদন্তে এগিয়ে আসেন এফবিআই এজেন্ট শন রাইলি। ঘটনাচক্রে এর সাথে জড়িয়ে পড়ে আর্কিওলজিস্ট টেস চৌকিন। শুরু হয় অনুসন্ধান..
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
১২৯১ খৃস্টাব্দে জেরুজালেমে পরাজিত টেম্পলারদের একটা অংশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু দলিল লুকিয়ে রাখে সভ্যতার আরালে। আর রেখে যায় কিছু সুত্র। সেই সুত্র ধরে এগিয়ে যেতেই নিউইয়োর্কের মিউজিয়ামে ঘটে এই বিভৎস ডাকাতি।
কেন এই ডাকাতি? কে বা কারা আছে এর পেছনে?- আপনাআপনি এই প্রশ্ন দুটি পাঠকের মনে উদয় হবে। উল্টাতে বাধ্য হবে পরের পৃষ্ঠাগুলো। তদন্তে নামবে এফবিআই এজেন্ট শন রাইলির সাথে, নিজেকে ঘটনার সাথে জড়িয়ে ফেলবে আর্কিওলজিস্ট টেস চৌকিনের মত করে। পাঠক নিজেও হয়ে উঠবে এ দুজনের অজানা যাত্রার সহযাত্রী।
তদন্তের স্বার্থে ছুটতে হবে ফেলে যাওয়া সূত্রের পিছু পিছু। আর জটিল এসব সূত্র বার বার ফেলবে কঠিন পরিক্ষার মধ্যে। অনেকটা ড্যান ব্রাউনের "দ্য দা ভিঞ্চি কোড" উপন্যাসটির মত।
বর্তমান এবং ঐতিহাসিক ঘটনা সমান্তরালে এগিয়ে যাবে উপন্যাসটিতে। বহু বছরের পুরনো রহস্যের ইতিহাস নিয়ে হলেও সেটা মঞ্চস্থ হয়েছে বর্তমানকালে যা অবশ্যই উপন্যাসিকের দক্ষতার পরিচায়ক। খৃস্টিয় ইতিহাসের অলিগলিতে লুকিয়ে থাকা সত্যের সন্ধান করার আরও একটি সুযোগ পাবেন পাঠক নিজেও।
শুধু সূত্র ধরে এগিয়ে যাওয়াই নয়, সেই সাথে আছে অজানা শত্রুর পেতে রাখা সব ফাঁদ যা উপন্যাসটিকে করেছে অনেকটা সিনেমাটিক। সেই সাথে উপন্যাসটি কাহিনির সাথে যুক্ত হয়েছে দুর্দান্ত গতি। একশনের চিত্রায়নও প্রশংসাযোগ্য।
মোটকথা, রেমন্ড খাউরির লেখা "দ্য লাস্ট টেম্পলার" উপন্যাসটির প্রথম দৃশ্যটি যেমন মনোমুগ্ধকর, তেমনি শেষের টুইস্টটিও পাঠকের ভালো লাগবে। নাইট টেম্পলারদের প্রতি কৌতূহল জিয়িয়ে রাখা পাঠকদের জন্য বইটি যথেষ্ট উপাদেয় হবে আশা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১