লেখকঃ জেমস রোলিন্স
(সিগমা ফোর্স সিরিজের দ্বিতীয় বই)
প্রকাশকালঃ ২০০৫
এক বাক্যেঃ
“গির্জায় কেন চালানো হলো নারকীয় হত্যাযজ্ঞ?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিস্ময়কর তথ্য আর এডভেঞ্চারের মধ্য দিয়ে আপনি নিজেও সিগমা ফোর্সের সাথে পুরো বইটা চষে বেড়াতে বাধ্য হবেন।
কাহিনি সংক্ষেপঃ
জার্মানীর কোলনে প্রাচীন ক্যাথেড্রালে প্রার্থনারত একদল মানুষ খুন হয় একটা অজানা পদ্ধতিতে। সন্ন্যাসীর পোষাক পরিহিত একদল ডাকাত প্রার্থনারত মানুষগুলোকে চার্চের ভেতরে খুন করে। রেখে যায় পৈশাচিকতার ছাপ। একসাথে খুন হয় চার্চের সকল প্রার্থনাকারী, যারা গ্রহণ করেছিল চার্চ থেকে সরবারকৃত রুটি। অন্যদের হত্যা করা হয় গুলি করে।
চার্চে রাখা মূল্যবান সব গুপ্তধন বাদ দিয়ে সন্ন্যাসী বেশে আসা ডাকাতদল চার্চ থেকে সাথে করে নিয়ে যায় স্বর্ণের কফিনে রাখা পুরনো কিছু হাড়; যা খ্রিস্টিয় ইতিহাসের প্রাচীন তিন রাজার মধ্যকার একজনের। তারা যেভাবে এসেছিল, ঠিক সেভাবেই হাওয়া হয়ে যায়। নিজেদের কোন চিহ্ন রেখে যায়নি তারা। শুধু রেখে গেছে কিছু প্রশ্ন।
কেন ডাকাতেরা মূল্যবান সব ধনসম্পত্তি বাদ দিয়ে ঐ হাড়গুলো নিয়ে গেল? কেন-ই-বা তারা প্রার্থনা চলাকালীন সময়ে ডাকাতি করলো? কেন হত্যা করল ক্যাথেড্রালে প্রার্থনা করতে আসা মানুষগুলো কে? একইসময়ের মধ্যে কিভাবে খুন করলো এতগুলো মানুষকে? এই পৈশাচিক হত্যা যজ্ঞের পেছনে কি উদ্দেশ্য?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে স্মরণাপন্ন হয় আমেরিকান সিগমা ফোর্সের। সিগমা এজেন্ট গ্রেসন পিয়ার্স, ক্যাপ্টেন ক্যাথরিন ব্রায়ান্ট ও মঙ্ককের তিন সদস্যের সিগমা ফোর্সের দলটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে ভ্যাটিকান বিশেষজ্ঞ ভেরনা আর লেফটেন্যান্ট র্যাচেল। সম্মিলিত তদন্ত শুরু করতেই বাঁধার মুখে পরে তারা। প্রাচীন একটি গুপ্ত সংঘের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। একের পর এক বাঁধা, ধ্বংসযজ্ঞ উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে এগিয়ে যেতে থাকে সত্য উদঘাটনের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত টিমটি।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
আধুনিক বিজ্ঞান, মিথ, খৃস্টিয় উপাখ্যান এবং রোলিন্সের অন্যান্য উপন্যাসের মতই বরাবরের ন্যায় দুর্দান্ত অ্যাকশন আর অ্যাডভেঞ্চার সাজানো আরেকটি চমকপ্রদ উপন্যাস "সিগমা ফোর্স" সিরিজের দ্বিতীয় বই “ম্যাপ অব বোনস”। আধুনিক বিজ্ঞানের পাশাপাশি প্রাচীন মিথ এবং সেই সাথে ইতিহাসের সম্মিলনে লেখা এই উপন্যাসটি পাঠককে অনেক অজানা তথ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। পুরনো চার্চ, ক্যাথেড্রাল, ভ্যাটিকানের সেইন্ট পিটার ব্যাসিলিকা, মিশরের পিরামিড, আলেকজান্দ্রিয়ার পানির তলা, সম্রাট আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সমাধি প্রভৃতি কেন্দ্র করে বিস্তৃত রহস্যের জটিল ও দুর্ভেদ্য জাল রহস্যময়তাকে করেছে সমৃদ্ধ। বিস্ময়কর সব তথ্য পাঠককে টেনে নিতে থাকবে উপন্যাসের গভীর থেকে আরও গভীরতমে। দুর্ভেদ্য পাজল কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা অ্যাডভেঞ্চার ও অ্যাকশন পছন্দ করে এমন পাঠকেরা নিজেরাও মিশে যাবে উপন্যাসের চরিত্রগুলোর সাথে।
দ্রুত গতিতে ছুটে চলা উপন্যাসটিতে আছে নিঃশংসতা, পৈশাচিক হত্যকাণ্ড, ধ্বংসযজ্ঞ; সেই সাথে আছে একদল পরিশ্রমি আর অনুসন্ধানি মানুষকে নিয়ে গড়া একটি টিম, যাদের টিম ওয়ার্কে স্থাপিত হয়েছে বিশ্বাসের দৃষ্টান্ত। আছে রহস্য, শক্তিশালী প্রতিপক্ষ, দূর্ভেদ্য জাল, মৃত্যুর হাতছানি, প্রতারণা। উপন্যাস শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস পাঠকের উদর থেকে বের হয়ে আসবে, যেন এক নিঃশ্বাসে রোমাঞ্চকর সব ঘটনা পাড় করে পাঠক নিজেই সমাধান করেছে অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সকল রহস্যের। জেমস রোলিন্সের উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ছুটে চলা যার ঘাটতি এই উপন্যাসটিতেও পরে।
যারা বইয়ের পাতায় এডভেঞ্চারের সঙ্গে ছুটতে ভালোবাসেন তাদের জন্য বইটি অবশ্যই পাঠ্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৩