আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ কথায় কথায় কেন যেন ভারত বিরোধীতা করেন বুঝি না । এরা ভুলে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতকোটি মানুষের জীবন বাচাতে ভারতের প্রত্যক্ষ অবদানের কথা। সেই ইতিহাস হয়ত তারা জানেও না কিংবা জেনেও না জানার ভান করেন। যাহোক লেখার মুল বিষয়ে যাবার আগে বন্ধুপ্রতীম এ দেশটির প্রজাতন্ত্র দিবসে আমার সকল ভারতীয় বন্ধু,স্বজন ও শুভাকাংখিদের শুভেচ্ছা।
গতবছর জানুয়ারী মাসে পাভেলের সাথে বহুল আলোচিত " পদ্মাবত" সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায়। সেই সময় বাংলাদেশের আখাউড়া রেল স্টেশন হতে নেমে রিক্সায় সীমান্তের দিকে যেতে থেমেছিলাম নারায়ণপুর গ্রামের পাকা রাস্তায়।
এ পথটি হলো বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তবর্তী আখাঊড়া - আগরতলা সংযোগ সড়ক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ সড়কটি দিয়ে সহায় সম্বলহীন কয়েক লাখ শরনার্থী হেটে, ভ্যানে চড়ে আশ্রয় নিয়েছিল আগরতলায়।সেই সময়টায় এ সড়কটি ছিল সিমেন্টের ঢালাই করাএবং কোথাও কোথাও সেমিপাকা।এপ্রিল মাসে এ পথে শরনার্থীদের ঢল নামে। দু'পাশে তেমন বড় কোন গাছ না থাকলেও শরনার্থীরা সামান্য বিশ্রামের জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বুক সমান বা মাথা উচু এসব গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন।
ভারতের অনুন্নত রাজ্য ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের মানুষের একটা আত্মীক সম্পর্ক বহুদিন আগে থেকেই বিদ্যমান।মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা রাজ্য ২০ লক্ষ বাংলাদেশী শরনার্থীকে শুধু আশ্রয় দেয়নি, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, মেডিক্যাল ক্যাম্প, শরনার্থী শিবির স্থাপনসহ নানানভাবে সাহায্য করেছে।সেই সময় ভারতীয় সামরিক বেসামরিক অফিসার ও রাজনীতিবিদদের পদচারনায় আগরতলা গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ্বের জন্য।
সেই সময়টাতে ত্রিপুরা রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১৬ লাখ।অথচ তারা আশ্রয় দিয়েছে ২০ লাখ শরনার্থী। এখানে বিদ্যুৎ ছিল না।সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে থাকত আগরতলা। শরনার্থীদের চাপে কেরোসিন, খাদ্য সংকটে এখানকার জনজীবন অচল হয়ে পড়লেও ত্রিপুরাবাসী হাসিমুখে আন্তরিকতায় বরন করে নিয়েছিল শরনার্থীদের।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরাবাসীর অবদান, সেক্রিফাইস ছিল অতুলনীয়। তাদের এ অবদান ভুলে যাওয়া, অস্বীকার করা মানে চরম বিশ্বাসঘাতকতার শামিলই মনে করি।
রিপাবলিক ডে অফ ইন্ডিয়া উদযাপনের মুহুর্তে স্মরন করছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হওয়া সকল ভারতীয়দের।
ছবি পরিচিতি :
নীচের ছবিটি হলো নারায়ণপুরের বিখ্যাত আখাউড়া- আগরতলা সড়ক। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ সড়কটি দিয়ে কয়েক লাখ শরনার্থী হেটে, ভ্যানে চড়ে আশ্রয় নিয়েছিল আগরতলায়।
ছবি ক্রেডিট: পাভেল