ভুলে যাইনি ২০০১ সালে অস্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট নিরংকুশ বিজয়ের পর সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন চালিয়েছিল।সিরাজগঞ্জের পূর্নিমারানী শীল, বাগেরহাটে ছবি বালা, বরিশালে প্রিয়াংকারানী, রাজশাহীর পুঠিয়ায় মহিমা খাতুনদের ওপর যে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছিল তার বর্ননা শুনলে যে কোন বিবেকবান মানুষের গা শিউড়ে ঊঠে। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকার সমর্থকরা বিরোধী শিবিরের সমর্থকদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে দিয়েছে। নিরংকুশ বিজয় ক্ষমতাকে শুধু পাকাপোক্তই করেনি, জবাবদিহীতার কোন বালাই না থাকায় কেউ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকছে না। ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতাই সন্ত্রাসীদের নিপীড়ন নির্যাতনের সাহস জোগাচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরের দিনই নোয়াখালির সুর্বনপুরের ৪ সন্তানের জননীকে সরকার দলীয় নেতার গনধর্ষন সেই সত্যটাই চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।এই নারীর অপরাধ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর পুর্নিমা,ছবিবালা,মহিমাদের মতনই।এই জননী ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ধানেরশীষে, আর ২০০১ সালের নির্বাচনে পুর্নিমারা ভোট দিয়েছিলেন নৌকায় । নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পরই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রানে তান্ডব শুরু হয়েছে।
ফরিদপুরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই এলাকায় ভাঙ্গায় শতাধিক হিন্দু বাড়ী ঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নি সংযোগের ঘটনাকে "আওয়ামী ইসলামী" তান্ডব বলা কি ভুল হবে?
খুলনায় পাইকগাছায় এক হিন্দুযুবকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে।নেত্রকোণার আটপাড়া থানার সোনাচুর বাজারের নিলকমল রায়ের দোকান দখল করলো কারা?
বিজয়ের পর নিপীড়নের ক্ষেত্রে দু'দলের মধ্যে কোথাও কোন পার্থক্য নেই।
একটু ফিরে দেখুন ২০০১ সালে পুর্নিমাদের কিভাবে নির্যাতন করেছিল ৪দলীয় জোটের সিরাজগঞ্জের সমর্থকরা।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা।র ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী পুর্নিমারানী শীল ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চারদলীয় নির্বাচনী জোটের(বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, আর জাতীয় পার্টি) কর্মীদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিল। নির্বাচনের পর পরই দেশব্যাপী নেমে আসে এক অমানিশার ঘোর অন্ধকার। হিংস্রতা ভর করে বিজয়ী গোষ্ঠীর উপর।তারা নেমে পড়ে প্রতিশোধ নিতে। খুঁজে খুঁজে বের করা হয়েছিল হিন্দু ,বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান দের যারা তাদের কথা না মেনে নৌকায় ভোট দিতে গিয়েছে। হানা দেয়া হয়েছিল আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের বাড়ি। নিহত / আহত করা হয়েছে একে একে। জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল ঘর বাড়ি, ফসলের মাঠ। বিষ ঢেলে দেয়া হয় মাছের খামার। লুট করা হয় অর্থ সম্পদ, গবাদি পশু পাখি। তার চেয়েও বেশী যন্ত্রনার ছিলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিশোরী, যুবতী, কিংবা মায়ের বয়সী নারীদের উপর নির্মম পৈশাচিক নির্যাতন। ধরে ধরে পরিবারের সদস্যদের সামনে, মায়ের সামনে, পিতার সামনে কিংবা স্বামীর সামনে গণ ধর্ষন করা হয়।
এমনি এক কালোরাতে হায়েনার দল উপস্থিত সদ্য কৈশোরে পা পড়া পুর্নিমা রানী শীলের বাড়ি। যার বাবা, মা নৌকায় ভোট দিয়েছিলো বলে কথিত। এটা ছিলো হায়েনাদের চোখে অপরাধ। ১০/১২জনের জামাত বিএনপির দল পুর্নিমার বাড়িতে আসলে তাদের উদ্দেশ্য আর গোপন থাকে না। পুর্নিমার অসহায় বাবা মা বাধা দিবে এমন শক্তি কোথায়। পুর্নিমার মা হায়েনার দল দেখে ছোট মেয়েটার জীবন নিয়ে শংকিত। একদল কুকুরের হিংস্র মুর্তি দেখে পুর্নিমার মা কুকুর গুলোকে অনুরোধ করেছিলো বাবা সম্বোধন করে।
বারা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো, মরে যাবে।
পুর্নিমা অবশ্য মরেনাই, মরে গেলেই মনে হয় ভালো হতো। তাহলেই সমস্ত ল্যাঠা চুকে যেত।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ধর্ষিতা নারীও মরে নেই।হিংস্র কুকুরদের পাশবিক নিপীড়নে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। তার ওপর আওয়ামীলীগের স্থানীয় এক নেতার নেতৃত্বে গণধর্ষনে অংশ নেয় ৪/৫ জন হিংস্র কুকুর।থানায় পুলিশ কোন ডায়েরি নিতে চায়নি ধর্ষকরা সরকার দলীয় বলে। দেশকে একটা অসভ্য দেশে পরিনত করছে এইসব জানোয়ারদের বিচরন!