আমার ছিল মেঘের জীবন-
এক চিলতে মেঘ বাঁধন বিহীন ;
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে
একটা ভীষণ ইচ্ছে নামক আকাশ জুড়ে ।
স্বপ্ন ছিল শিশির হব;
ভোরের শিশির ।
দূর্বা ঘাসের বুকে লুকিয়া থাকা যেমন শিশির;
তোমার মাঝে- বুকের মাঝে লুয়িয়ে থাকা-
তেমনি কোন স্বপ্ন শিশির ।
স্বপ্ন খুঁজে -
বহুদূর পথ হেঁটেছি আমি ;
হিজলের ছায়া - অশ্বথ আর বটের মেলায়
বিলিয়েছি আমার যত ক্লান্তি ।
নির্ঘুম রাতে ঐ শেওড়া গাছের ভূতের সাথেও
কত শত গল্প !
তোমার - আমার গল্প ।
একদিন পৃথিবীর পথ ধরে চলে যাওয়া
জ্যোৎস্নারাও জেনেছিল আমাদের কথা !
জীবনের কত বাঁক ; কত সকাল- সন্ধ্যা;
মায়ামধু বিকেল -
কত সুর স্বরের মোহিনী মায়া ।
ছল ছল জল চোখে চলে যাওয়া সময় ;
পথ ও পথিকের বেদনা বিধুর কত আলিঙ্গন ।
আর কি কিছু চাওয়া হল !
ছুটে চলা - সময়ের সাথে ধীরে নিভে যাওয়া
গোধূলি আলো ।
প্রবাহী জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দের মত
কি যেন কি একটানা বেজেই চলেছে
নিভৃত প্রকোষ্ঠে আলোহীন কুঠুরিতে !
তবু স্বপ্নের লুটুপুটি ;
অসমাপ্ত যত পাণ্ডুলিপি !
অর্ধেক জীবন !
একদিনতো ঠিক নিজেকে আর খুঁজে পাব না !
না তুমি , না আমি ।
শরতের সকাল - শ্রাবণের সন্ধ্যা -
বৈশাখী ঝড়ের রাত্রি -
তখনও কি ঠিক এমনই থাকবে !
তখনও কি রাত জেগে কীর্তনের আসরে
নতুবা মুর্শিদী গানে-
কোন যুবক রক্তাক্ত হবার জ্বালা মেটাবে !
তখনও নিশ্চই আমাদের এই চলার পথের
ধুলিদের ঘুম ভেঙ্গে যাবে সন্ধ্যা বাতাসে !
এখনও তোমাকে খুঁজি ;
ফাল্গুনী বিকেলের ঐ উন্মাদ বাতাসে;
ধানের শীষের দোলনায় - ফিঙ্গের নাচে-
বিস্তীর্ণ নীল সবুজে ।
থিয়েটারের করুণ সংলাপে।
ভাল লাগা কবিতায় ;
হাসি আর বিরক্তির বেতাল নৃত্যে-
অবসাদে- প্রশান্তিতে -
এবং ঘুমের ঘোরে !
তোমাকে খুঁজি-
আনমনে বহুদূর পথ হেঁটে;
অচেনা পথে ।
পদার্থবিদ্যার জটিল সমীকরণে ;
ভাল লাগা গানে-
আর কালো কাজল চোখে ।
শুক্লপক্ষ জ্যোৎস্নার জোনাকিতে
অথবা কৃষ্ণপক্ষ ঘোর অন্ধকারে !
ক্ষুধার যন্ত্রণায় - তৃপ্তির হাঁসিতে;
দূর থেকে ভেসে আসা বেহালা সুরে।
মাতাল হাওয়া রাতে-
ভীষণ একাকিত্বের আনন্দে ।
জীবনের গলিপথে নিরুদ্দেশ নিরুদ্বেগ
স্রোত অথবা নদী তবু বহমান ।
ক্লান্ত পৃথিবীর গভীর ঘুমে
তবু কোন স্বপ্নের বিলাসী জেগে থাকা !
একাকী অন্ধকারের বুকে মাথা গুঁজে
তবু চন্দ্রস্নান !
যেখানে পথিক এসে দাঁড়ায়
ঠিক সেখানে আমাদের স্মৃতি রোমন্থন ।
রাতভর জেগে থাকা পাখির কান্নায়
ভারী হয় প্রিয় অন্ধকার !
যদি এক শ্রাবণ রোদন শেষে
কেঁদেই চলে বুকের গহীন আকাশ তোমার
কোন মাঝ রাত্তিরে ;
তবে অন্ধকারের শরীরে খুঁজে দেখো
নিবিড় কোন ছোঁয়া আছে জেগে -
অনন্ত ঘুমহীন চোখ মেলে !
যদি প্রিয় কোন গানে-
কোনদিন কেটে যায় তাল ;
তবে ভেবে দেখো এই গান ভালবেসে
একদিন কেউ যেন ছিল পাশে ।
তোমাকে নিয়ে লেখা প্রিয় কবিতা
যদি কোনদিন চোখে আনে জল
তবে খুঁজে দেখো শব্দের গন্ধে -
মিশে থাকা শরীর- কত শত না বলা কথা !
মহাকালের ধূলায় মিশে আছে
তবু একটা হৃদয়-
এই পৃথিবীর আলো-ছায়ায় ।
যদি কোনদিন অবেলায় স্নান সেরে
ঘাঁটে বসে চকিত হও জলের ভাষায়;
তবে স্মৃতির আঙ্গিনায় খুঁজে দেখো-
অনেক আগেই জলেরা জেনেছে
সেদিনের সব না বলা কথা !
যদি পাখিটা একাকী চুপচাপ বসেই থাকে
সারাটা বিকেল তোমার আঙ্গিনা পাশে -
তবে তার স্থির দৃষ্টি গভীরে
খুঁজে দেখো- পাবে কারো আজন্ম পিপাসা !
চিৎকার দিয়ে পৃথিবী কাঁপানো সময়ে
যদি চেপে আসে কণ্ঠনালী তোমার !
ধূসর যদি মনে হয় কোনদিন
রঙ্গিন যত স্বপ্ন সকাল !
তবে ছুঁয়ে দেখো গলে যাওয়া সেই রঙ্গিন আলোয়
মিশে আছে নিভৃত কোন ভালবাসা;
ভালবেসে যে একদিন হয়েছিল জল !