শারদ আকাশ ছিল সেদিন ;
ছিল তুলোর মত মেঘমালাদের অবিশ্রান্ত লুটোপুটি।
তুমি- আমি ; শুধু আমরা দুজন বসে ছিলাম
বিকেলের সোনারোদ চুম খাওয়া জলের ধারে ।
কি অদ্ভুত নির্লিপ্ত দুটি হৃদয় ;
তুমি- আমি আমরা দুজন পাশাপাশি ।
স্থির দৃষ্টির গহীনে পৃথিবীর তাবৎ পিপাসা-
কত শতকথা- স্বপ্নকথা, ভিড় করেছে মনের কোনে;
হয়তঃ তোমারও ।
শান্ত সেই পুকুরের জল কান পেতেছে;
কান পেতেছে পাড়ে দাঁড়ানো সারি সারি বৃক্ষরাজি -
যেখানে পাতা ঝরে পড়ার মর্মর ধ্বনিতে চকিত হয় পথিক;
নিরবতা মোড়ানো অখণ্ড সেই মায়াবিকেল।
একজোড়া শালিক খুব সন্তর্পণে দিয়েছে উঁকি
পাতার আড়াল থেকে-
রাতের ঝিঁ ঝিঁ পোকারা এসেছে দলবেঁধে;
এসেছে জ্যোৎস্নার জোনাকিরা।
নিঃশব্দে আসা শব্দরাশি নিভৃতে বেঁধেছে বাসা কণ্ঠনালীর নিচে;
তবু ভাঙ্গেনি নীরবতা।
না তুমি না আমি ।
বিভোর গভীর স্বপ্নবৃষ্টিতে ভিজেছে হৃদয়;
যেন কেটেছে অনন্ত প্রহর !!
মৃদু বাতাসে শিরশির দেহে সবুজ পাতাদের অবনত মুখ।
ভীষণ প্রসন্ন সেই শারদ আকাশ ছিল সেদিন।
না তোমার কপালে ছিলনা কোন টিপ;
না কোন সাজ সরাঞ্জম।
বিন্দু বিন্দু ক্লান্তিঘাম; কি ভীষণ গর্বে ফুটেছে-
মেতেছে নিজেদের অস্তিত্ব দীর্ঘায়িত করার প্রতিযোগিতায় ।
আমার ভেতরে বয়েছিল যৌবনা ব্রহ্মপুত্রের শান্ত প্রবাহ;
কি মায়া মেখেছে প্রকৃতি তোমার ওই মুখে !
যেখানে বড় অসহায় আমার শব্দভেলা;
এ যেন নিজের মাঝে আপন হাতে গড়া মায়াদ্বীপে
কাশফুলেদের নরম আদর ছোঁয়া ।
তোমার আজন্ম কাজলমাখা চোখ জোড়া ;
যে চোখে তাকিয়ে কেটে যেতে পারে সহস্র শতাব্দী-
যেখানে নিঃশঙ্ক চিত্তে রাখতে পারি জমা
আমার এই এক জীবনে সঞ্চিত সকল দুঃখমালা।