মফস্বলের শহর ছেড়ে যাদুর শহর ঢাকায় পাড়ি জমালো অপ্সরী। ভর্তি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে। নতুন ক্যাম্পাস, প্রথম বর্ষ, সবই স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে। তবু মনের এক কোনে ভিষন্নতা, সবার সাথে কোথায় যেন তার মিলেনা। দেখতে দেখতে সবার অনেক বন্ধু হয়ে গেলো, তার কেউ নেই। সবকটা সার্কেলে সে কিছুটা দুধভাতের মত। থেকেও নেই। রঙ্গীন ক্যাম্পাসে তার কেউ থেকেও নেই। তবে হ্যা, আছে একজন ইন্দ্র। প্রতিদিন ক্লাসে যাবার ফাকে ঝাঁকড়া চুলের প্রানবন্ত ছেলেটিকে দুর থেকে দেখে সে। সারাদিন আড্ডা, গান, হাসাহাসি এসবেই দিন কেটে যায়। সামনে সামনি দাড়িয়ে কথা বলার তীব্র ইচ্ছে হলেও বলা হয়না। অপ্সরী একদিন এগিয়ে গেলো। ইন্দ্র তখন আড্ডায় ব্যাস্ত। এতো হাসতে পারে ছেলেটা! ডাকার সময় তার বন্ধুরা কেমন দুষ্টু চোখে তাকাচ্ছিলো......
মাস দুয়েক পর।
ইন্দ্রের হাত ধরে ওভারব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে চাদ দেখছে অপ্সরী। অজানা এক সুখে ভাসছে দুজনে। ইন্দ্রের হাত টেনে জড়িয়ে ধরে দাড়ালো অপ্সরী, চাদের আলো এসে পড়েছে চোখে। মনে হলো এমন কিছু সুখী মুহুর্তের জন্যই বুঝি জীবন সুখী হয়। তাদের প্রতিদিনই কেটে যায় এমন কিছু সুখী মুহুর্ত দিয়ে...
আরও মাস দুয়েক পর।
প্রানবন্ত ছেলেটি কেমন যেন চুপষে এলো। হাসি হাসি মুখটিতে কিসের যেন চিন্তা! অপ্সরী হঠাত কেমন হয়ে যাচ্ছে। অপ্সরী কদিনের মাঝেই বুঝতে পারলো আড্ডাবাজ এ ছেলেটি আর যাই হোক ভালো প্রেমিক না। সারাদিন থাকে বন্ধু নিয়ে, আড্ডা নিয়ে, গানের আসর নিয়ে। তার দিকে ওর সময় নেই। আরো কিছুদিন পর মনে হলো এতদিন থেকে সে যেই অনুভুতিগুলো পেতো তা আর সে পাচ্ছেনা।
অথচ সে বিশ্বাস করে মনে প্রানেই তার ইন্দ্রকে ভালোবাসতো। কিন্তু এখন কেন জানি আর কিছুই লাগেনা। বেচারা ইন্দ্র এতদিনে ভালোবেসে ফেলেছে। আড্ডাবাজি ছেড়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ায় অপ্সরীর পিছু। কিন্তু ততদিনে কতো দেরী হয়ে গেলো। প্রতিদিনের একটু একটু করে জমে থাকা অভিমান জমা হতে হতে একসময় বিষ্পোরিত হলো, অপ্সরী আর তাকে চায়না। অপ্সরীও ধীরে ধীরে বুঝতে পারলো, হঠাৎ তার মধ্যে কত পরিবর্তন। আসলে হয়তো সে ইন্দ্রকে ভালোই বাসেনি। হয়তো তার একাকিত্বের সেই সময়গুলোতে ইন্দ্রকে পেয়ে মনে হয়েছিলো ভালোবাসে, আসলে তা ভালোবাসা ছিলোনা। কিন্তু....
আরাও কিছুদিন পর।
ইন্দ্র বুঝতে পেরেছে অপ্সরী তাকে আর চাইছেনা। এতে সে অপ্সরীকে কোন দোষ দিতে পারছেনা। নীরবে নিভৃতে দিন কেটে যায় তার। বুকের ঠিক বাম পাশটায় কেমন জানি ব্যাথা লাগে তার। অপ্সরীর সাথে কাটানো প্রতিটি মুহুর্ত তাকে খুবলে খুবলে খায়। আর একটিবার যদি সে ফিরে পেতো তবে জীবনের সবটা ফেলে শুধু তাকেই ভালোবেসে যেতো। দিন যায়, কতো জোস্নাভরা রাত যায় তবু অপ্সরী আর আসেনা। গলা পর্যন্ত কি যেন আটকে থাকে ইন্দ্রের, চিরহাস্য ছেলেটি এখন কতো সহজে কেদে উঠে। প্রেম তাকে কাদতে শিখিয়েছে। তবু
এই কান্নার মাঝেও সুখ খুজে বেড়ায়। অপ্সরীকে সে ভালোবাসেতো, তাই!
ভালোবাসার মানুষ কখনো হারায় না...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১৭