অনেক অনেক বছর আগে আমার জন্ম। সঠিক দিন তারিখ আমিও জানিনা। তাই সবার মত মজা করে জন্মদিনও পালন করতে পারি না।
তার উপর বেশিরভাগ সময় আটকে রাখা হয় আমাকে। বড় অবিচার। যদিও ফাঁক-ফোকড় পেলেই আমি চলে আসি আপনাদের এদিকে। জামাকাপড় থাক্ বা না থাক, পিঠে আর হাতে তীর-ধনুক সবসময়ই থাকে। জামাকাপড়ের কথা আসলো, কারণ ঐ যে বললাম, আমি অনেক পুরনো দিনের। সেই সময় আবার এসব তেমন মানতো না কেউ। আপনাদেরই যত এসবের বালাই।
আমার নাম কিউপিড। কেউ কেউ ‘এরস’ নামেও চেনে।
আমার বিখ্যাত তীরের কথা জানে না এমন কেউ কি আছে?
আটা, ময়দা আর সুজীর তীর না কিন্তু। ‘চিকন-লম্বা’ অগ্রভাগ সূঁচালো তীর।
তো যা বলছিলাম, কামানের গোলা হোক, বন্দুকের গুলি হোক- ওসবেও পার পাওয়া যায়, কিন্তু আমার শিকার একবার হলে আর রেহাই নেই, আগেই বলে দিচ্ছি।
আর্মিতে যেরকম মিশনে পাঠানো হয়, আমাকেও তেমন ওরকম যেতে হয় মাঝে মাঝে। তবে জাতিসংঘের শান্তি মিশনের মত আমার মিশনও কতটুক শান্তি বয়ে আনে তা নিয়ে আমার বেশ সন্দেহ আছে।
স্থান- ঢাকা, বাংলাদেশ
সময়- অক্টোবর, ২০১৩
শিকার (I)- রেজওয়ানুল আকাশ
শিকার (II)- শাহরিন প্রিমা
*** *** ***
৭-১০-২০১৩
(প্রিমা)
দুপুরে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম যখন আকাশটা মোটামুটি গা ঢেকেঢুকেই ছিলো। একটু পর কি হলো জানিনা, লাজলজ্জা ফেলে সমানে রূপের গরম দেখাতে শুরু করলো।
এনাটমির একটা বই কেনার জন্য নিউ মার্কেটে গিয়েছি। টেম্পো থেকে নেমে একটা লাচ্ছি খেলাম। মাথাটা একটু ঠাণ্ডা হলো তাও। এরপর ফুটপাথ থেকে মাথার একটা ক্লিপ পছন্দ করলাম। কিন্তু এইটুক একটা ক্লিপের দাম চেয়ে বসেছে আশি টাকা। আমি বিশ বলবো নাকি পঁচিশ বলবো এটা ভাবতে ভাবতেই কি জানি হলো। হঠাৎ একমুহূর্তে মনটা খুব ভালো হয়ে গেলো।
কিসের ক্লিপ, কিসের এনাটমি বই; মনের আনন্দে কড়া রোদে গুণগুণ করতে করতে ঘুরলাম কিছুক্ষণ। তারপর একটা বই কিনলাম বটে, মহাদেব সাহার কবিতার বই- ও বর্ষা ও বসন্ত।।
মাথার ঘাম তখন আমার কাছে শ্রাবণের ঘোর বর্ষাধারা।
*** *** ***
অন্যদের জন্য একটা তীরই যথেষ্ট, কিন্তু এইসব ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার মেয়েগুলার জন্য দুইটা করে তীর লাগে।
কোথায় এই বয়সে আরেকজনের হাত ধরে বসে থাকবে, তা না। খাতা-কলম ধরেই জীবন পার করে দিচ্ছে। কিভাবে পারে এরা?
যাই হোক, অপারেশন সাকসেসফুল। যেই ছেলেটাকে ঠিক করেছিলাম মেয়েটার জন্য; তাকেও বিদ্ধ করা হয়েছে। এমনিতেই বেচারা পাগলাটে ছিলো। এখন না জানি কি অবস্থা। দেখে আসি যাই-
*** *** ***
৭-১০-২০১৩
(আকাশ)
মেরিলিন মনরোকে মনে আছে নাকি ভুলে গেছেন? আপু অবশ্য আমাদের এদিকের না। উনি আমেরিকার নায়িকা। আমাদের নায়িকাদের যখন এলোমেলো বাতাসে শাড়ির আঁচল উড়তো, উনার তখন ঊর্ধ্ব পানে স্কার্ট উড়তো। আমেরিকান ‘দুষ্ট’ বাতাস, বুঝেনই তো।
তো যাই হোক, একবার আইনস্টাইনকে প্রোপোজ করলো সে, দুইজনই ততদিনে সেলিব্রিটি। বিজ্ঞানী আর হার্টথ্রব সুন্দরী। এদের প্রোডাক্ট কি হতো ভাবতে পারেন একবার?
কিন্তু ঐ যে, বেরসিক বিজ্ঞানী হলে যা হয়, এই অফারও মুখের উপর না করে দিলো। বললো, বাচ্চার যদি আমার মত চেহারা আর তোমার মত বুদ্ধি হয়?
সুন্দরীর সে কি নিদারুণ অপমান!!
আর সেই মেরিলিন মনরো উপরে এসে কার ঘর করছে জানেন? সে আরেক আঁতেল, নিউটন। একে তো ২০০ বছরের ব্যবধান, তার উপর উনি আবার ইহকালে কখনো কোনও মেয়েকে ছুঁয়েই দেখেন নাই!! শরীর-মনের ইন্টিগ্রেশন তো আরো বহুদূরের ব্যাপার।
যাক, তবুও প্রতিশোধ তো হলো আইনস্টাইনের উপর। আর বাচ্চাকাচ্চার ঝামেলা তো এদিকে নেই, বুঝুক সে এবার কত ধানে কত আপেক্ষিকতা।
এমনি আরো কত কিছু হচ্ছে আর এতদিন কিছুই জানতাম না আমরা কেউ!! তাজ্জব ব্যাপার।
আমি এখানে কিভাবে এলাম তাও বুঝতে পারছি না।
তবে হিসাবে কোথাও একটা ভুল হয়েছে তা বুঝতে পারছি। রেজিস্ট্রি খাতায় এখনও নাম আসেনি। তাই আপাতত কোন সিটও বরাদ্দ নেই আমার। এদিক সেদিক ঘুরে নিউটন-আইনস্টাইন দেখে বেড়াচ্ছি, আমাদের জীবন নষ্ট করার জন্য গালি দিচ্ছি মনে মনে।
*** *** ***
এটা কি হলো।।
সবচেয়ে হালকা ডোজ দিয়েছিলাম এই ছেলের জন্য। তাতেই এত এফেক্ট হবে কে জানতো।।
রাস্তা পার হওয়ার সময়ও কি এর মনে প্রেম-প্রেম ভাব চলে আসছিলো নাকি? এখন সামলাও প্যারা, মাথার পিছনে যেভাবে ধাক্কা খেয়েছে, সোজা কোমায় চলে গেছে।
পুরাপুরি মরে নাই অবশ্য, কিন্তু ঘটনা কি বুঝতে পারছি না। সে উপরের দুনিয়াতে চলে এসে বেমালুম ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তবে যেভাবে ধাক্কা খেয়েছে, কোমা না হয়ে ‘ফুলস্টপ’ হয়েই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু . . .
*** *** ***
পৃথিবী থেকে বহুদূরে কোনও একটা জায়গা। না না, অনেক দূরে ঠিক না, তবে বাস্তব পৃথিবীর সীমার অনেক অনেক বাইরে এই জগৎ। পৃথিবী যাদেরকে বিদায় দেয়, তাদের অনেকেই এখানটায় থেকে যায়। হিটলারও আত্মহত্যা করার পর থেকে এখানেই থাকে, তাকে এজন্য যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে যদিও। নিজের হাতে একটা বিরাট বড় গ্যাস চেম্বার বানিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে। আর এই গ্যাস চেম্বারের বৈশিষ্ট্য হলো, দিনে চারবার করে ফুলের গন্ধ বের হয় এখান থেকে।
সবকিছু নিয়ে ভালোই চলছিলো প্রায়। তবে প্রায় বছর দশেক হলো, এখানে কিউপিডকে একটা খাঁচায় আটকে রাখা হচ্ছে। এইটুকু একটা ছেলে পুরা দুনিয়াটাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে, আর এখানে যারা আসে তাদের প্রায় সবাই অন্তত একবার করে কিউপিডের শিকার। তাই নতুন করে কারও যেন ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’ টাইপ অবস্থা না হয় তাই এই ব্যবস্থা।
কিন্তু… এভাবে কয়দিন? ওপর থেকে মানুষগুলোকে দেখে কবিরের নিজের চোখেই পানি চলে আসতো। খায়-দায় ঘুমায়, স্কুল-কলেজ অফিস-আদালতে যায়। মাঝে মাঝে আরও কি কি জানি করে, তারপর যথাসময়ে কিছু কিছু মেয়ের কেমন বিশ্রীভাবে ভুড়ি বেড়ে যায়। সবই রুটিন।
কিন্তু কেউ কারো চোখের দিকে তাকায় না, কেউ অকারণে গালে হাত দিয়ে বসে আকাশ দেখে না। সাইন কার্ভের মত হঠাৎ করে কারো মন ভালো-খারাপ হয়ে যায় না।
এভাবে তো আর কিউপিড-ক্রান্তি চলতে দেয়া যায় না, তাই কেউ যখন আশেপাশে না থাকে, প্রায়ই কবির বেয়াদব কিউপিডটাকে ছেড়ে দেয়। যাক, আরো কিছু সর্বনাশ করে আসুক।
কিন্তু এবার হয়েছে ঝামেলা। গাধাটাকে ও বলেছিল একটু বুঝেশুনে শিকার করতে। তা না, সে এমন এক ছেলেকে মারলো যার মাথা আগে থেকেই আউলা-ঝাউলা। প্রেম বেশি হয়ে যাওয়ায় ছুটে আসা বাসটার সাথেই কিছু করতে গিয়েছিলো কিনা কে জানে।
মরলে মরতো, এদিকে কিছুই যায় আসে না। কিন্তু সমস্যা হলো, মেয়েটার সাথে ছেলেটার তখনো দেখাই হয় নাই। তাই ওর শরীর ভর্তি এখনও ঐ নীল গোলাপের ভাইরাস। আর এই জিনিস একমাত্র কিউপিডই তৈরি করতে পারে।
এই সময়ে যদি ও কোনওভাবে মারা যায়, উপরে রেজিস্ট্রি করলেই সবাই বুঝে ফেলবে ব্যাপারটা। বিরাট ঝামেলা হয়ে যাবে। আর কবির ফেঁসে গেলে তো সর্বনাশ।
তাই আপাতত ছেলেটাকে বিশেষ ব্যবস্থায় পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রেখেছে কবির।
কোনও ভাবেই গাধাটাকে এখানে থাকতে দেয়া যাবে না। উফ, আবার হাঁটাহাঁটি করছে ছেলেটা এদিকে।
*** *** ***
১০-১০-২০১৩
(আকাশ)
- শরীরের ছিদ্র কিন্তু বেশি বড় না, ঢুকতে পারবা নাকি বলো?
কেউ কারো সাথে প্রথম দেখায় এমন অশ্লীল প্রশ্ন করে?? ছি ছি, কি ভয়াবহ।
ভুরু কুঁচকে তাকালাম লোকটার দিকে। গালে চাপদাড়ি, সুন্দর চেহারা। কিন্তু কথাবার্তা এত বিশ্রী কেন? মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।
- কথা কানে যায়না? পারবা নাকি বলো।
আশ্চর্য, এত বিরক্ত কেন আমার উপর সে? রাস্তা পার হওয়ার সময় কাকে যেন খুঁজছিলাম। তারপর কিসের সাথে ধাক্কা নাহলে ঘষা খাওয়ার পর থেকেই সব এলোমেলো। কোত্থেকে কই এসে পড়লাম কে জানে। তার উপর এই প্রথম কেউ কথা বললো, কিন্তু কথা তো না আসলে, বজ্রধমক দিচ্ছে রীতিমত।
- নাক-কান হলে পারবো। কিন্তু... ইয়ে, অন্যদিকে গন্ধ করবে যে। আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে তাও নাহয় চেষ্টা করে দেখা যাবে।
কাচুমাচু করে বললাম।
অতঃপর, বজ্রধমকের পর বজ্রপাত-গালি খেলাম এবার। কি দোষ করলাম এখনো কিছুই জানলাম না। সবাই এত খারাপ কেন?
*** *** ***
সীমাহীন বিরক্ত নিয়ে বসে আছে কবির আপাতত। এই ছেলেকে নিয়ে মহা বিপদে পড়া গেলো। রাস্তা চিনিয়ে দিলেও এই ছেলে ফিরতে পারবে বলে মনে হয়না।
রওনা দেয়া লাগবে ওকে নিয়ে খুব দ্রুতই। ইচ্ছা করেই পৃথিবীর ওদিকে কখনও পা মাড়ায় না কবির। কিন্তু এবার মনে হয় যেতেই হবে। এখান থেকে বের হতে হলে আবার পারমিশনও লাগে। কিন্তু ওসব তো চিন্তাই করা যাবেনা এবার।
কি আর করা। অগত্যা রওনা দিলো দুজন।
সারাটা রাস্তা দুনিয়ার ফালতু সব কথা বললো ছেলেটা। রাস্তা এমনিতে এত লম্বা না, কিন্তু ছেলেটা তো আসলে ঠিক কবিরদের মত মারা যায় নাই। তাই চিপাচুপা বাদ দিয়ে, বহু পথ পার হয়ে আসলো ওরা অবশেষে একটা হসপিটালের সামনে। খাড়া একটা বিল্ডিং অথচ স্কয়ার না ট্রায়াঙ্গেল কি জানি একটা নাম।
চারতলায় একটা কেবিনে লাইফ সাপোর্টে শুয়ে আছে আকাশ।
নিজেকে নিজের সামনে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখার পর থেকে ওর মুখে আর কথা নাই। আর কবিরের অদ্ভুত হিংসা হচ্ছে এখন এই আলাভোলা ছেলেটার প্রতি। কিউপিডের নীল গোলাপের বিষ নিয়েই কয়দিন পর সুস্থ হয়ে যাবে ছেলেটা। তারপর প্রিমা নামক মেয়েটার সাথে দেখা হবে একদিন। তবে হ্যাঁ, এই অপার্থিব জগতের স্মৃতিগুলো মুছে ফেলতে হবে আগে ওর মাথা থেকে।
- এবার তোমাকে নাকের ফুটা দিয়ে ঢুকে যেতে হবে হুশ করে। আমি খুব বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না এখানে।
- না মানে, কিন্তু ওদিকে তো কিসব নল লাগানো, পরে আবার ছিলেটিলে যাবে, কান দিয়ে ঢুকি?
- যা ইচ্ছা করো।
- কিন্তু বেশি ছোট তো ওদিকটা। কেমনে যাবো?
- উফ, তো আমি কি এখন উপুড় করে শোয়াবো তোমার শরীরটা? তাহলে ভালো পথ পাবা যাওয়ার। যত্তসব ফাইজলামি।।
- আচ্ছা থাক্ লাগবে না, নাক দিয়েই যাই তাহলে। রাগটা কমান একটু প্লিজ।
কিছু কাকতালীয় ব্যাপার ঘটে দুনিয়াতে। এইমাত্র আরেকটা হলো। প্রায় ২০ বছর আগে একটা মেয়ে এভাবে কবিরকে বলেছিল।
রাগটা একটু কমান প্লিজ।
কিন্তু বিশ্বাস করেন, ওটা আসলে কোনও কথা ছিলো না। ওটা কিউপিডের তূণের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তীর ছিলো। কবিরের জন্য কিউপিড আলাদা করে রেখেছিলো।
ও ভীষণ রগচটা ছিল। এইজন্য খুব বেশি বন্ধুবান্ধবও ছিলো না। আর মেয়েরা? নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতো সবসময়। মা ছিলো না ওর। তাই বাইনারি ছাড়া ওর জীবনে ‘নারী’ বলতেই কিছু ছিল না তার আগ পর্যন্ত।
অনেকদিন ঘুরে ঘুরে কিউপিড বাগে পেয়েছিলো সেদিন ওকে।
*** *** ***
সুস্থ হতে অনেকদিন সময় লাগে আকাশের। প্রায় তিন মাসের মত বিছানায় থাকতে হয় ওকে। উপর থেকে মায়াই লাগতো কবিরের ওকে দেখে। তবে ওর দিকে বিশেষ নজর রাখত সে।
এভাবেই নতুন বছর চলে আসলো দেখতে দেখতে। বাণিজ্য মেলা শুরু হয়ে শেষও হয়ে গেলো। এরপর বইমেলার অষ্টম দিনে আকাশ আর থাকতে পারলো না, বের হলো বাসা থেকে। শরীর ভর্তি তখনও নীল-গোলাপের ভাইরাস।
আর তারপর?
গল্পটা এখানেই শেষ, প্রিয় পাঠক। আকাশ কিভাবে মাটিকে ছুঁয়ে ফেললো নাকি প্রিমাকে ছুঁয়ে ফেললো, কিংবা পৃথিবী থেকে কবির নামক রগচটা ছেলেটা অল্প বয়সেই ভিন্ন জগতে কিভাবে পা দিলো সেই বর্ণনা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় এখানে।
ওপরে খাঁচার ভেতর থেকে কিউপিড দাঁত বের করে হাসে, আর কবির দাঁত কিড়মিড় করে। তবে মনে মনে সেও নিশ্চয়ই হাসে।
কারণ ঐ যে, পরীক্ষায় একলা ফেল করলে মন খারাপ হয়, কিন্তু অনেকে মিলে ফেল করলে তো আর সেই দুঃখ থাকেনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫১