প্রেমের মড়া জিনিসটা কিরে ভাই?
বছর দশেক আগে এই প্রশ্নের উত্তরে মানুষজন একটু হয়তো ক্লাসিক টাইপ উত্তর দিতো।
কেউ আবার হয়তো Titanic (1997) এর লিয়নার্দো ভাইকে টেনে এনে উত্তর করতো-
যে নাকি নায়িকারে বাঁচানোর জন্য ‘জলে ডোবে না’ …
সর্বনাশা উত্তর যারে বলে!!
তবে যাই হোক, আমরা আধুনিক পোলাপাইন আধুনিক উত্তর দেই ।
”প্রেম যারে বাঁশ দিছে সেই হইলো হইলো প্রেমের মড়া ...”
এই কথাটাকেই মানুষজন বেচারার প্রতি সহানুভূতিতে একটু সুইট করে বলে আর কি ।
এইসব কেন বললাম তা পরিস্কার হবে একটু পরই ।
আগে দুইটা ছোট্ট গল্প বলি-
১. একটা হরলিক্সের নতুন বোতল কিনে এনেছে লায়লা । প্রত্যেকদিন সে তিন চামচ হরলিক্স পানিতে মিশিয়ে খায় । তারপর একদিন হরলিক্স শেষ হয়ে গেলো । আর লায়লা হরলিক্সের খালি বোতল ওদের বাসার পাশের নদীতে ফেলে দিলো । কিন্তু খালি বোতলটা ভেসে রইলো …
২. লাইলীর নতুন বয়ফ্রেন্ড শাকিব খান । প্রত্যেকদিন ওরা ডেটিং এ যায় । শাকিব লাইলীকে দামী পারফিউম, লিপস্টিক, কানের দুল কিনে দেয়, পারসোনাতে SPA করাতে নিয়ে যায় । দিনশেষে ওরা Radisson এ ডিনার করে বাসায় ফেরে ।
এভাবে চললে দেশের মন্ত্রীর ছেলেপুলে হলেও বড়জোর দুই মাস ...
তবে ‘শাকিব খান’ এর জন্য নাহয় এক বছরই ধরলাম ।। তারপর পকেটে শুরু হলো মরুর হাহাকার ।
আর এমন অবস্থায় লাইলী বললো-
”দেখো শাকিব, ড্যাড আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে । ছেলে NASA তে জব করে...”
গল্প শেষ । প্রিয় পাঠক, লায়লা আর লাইলী যে একই নায়িকার প্রতীক আশা করি বুঝেছেন । আর হরলিক্সের বোতল আর শাকিব খানও যে একই ‘প্রেমের মড়া’ তাও নিশ্চই ধরতে পেরেছেন ।
(নারীবাদীরা এখানে আমার গুষ্টি উদ্ধার করতে পারেন ।
তাদের জন্য বলি, ইহা উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । আবার যে ছ্যাঁক খায় নাই, তার জন্যও প্রযোজ্য, কারণ প্রেম অনেকভাবেই ‘সর্বগ্রাসী’ টাইপ হতে পারে !!)
তবে যাই হোক, সূত্র অনুযায়ী: শাকিব খানও যদি এখন বুড়িগঙ্গার পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সুইসাইড ‘খায়’- সে ভেসে থাকবে !!
এইবার একটু Postmortem করা যাক ‘প্রেমের মড়া’র ।
’প্রেমের মড়া জলে ডোবে না’-
প্রবাদটার উৎপত্তি বাংলার কোন আনাচে কানাচে বা চিপায় চুপায় এইটা ঠিক খুঁজে কুল কিনারা করতে পারলাম না । এর জন্ম অবশ্যই অনেক আগে ।
তবে একটা ব্যাপার সিউর, যে-ই এটা বানিয়েছে, মাথায় ‘মাল’ আছে ।
শুধু তাই না, আর্কিমিডিস ভাইয়ের সাথেও সম্পর্ক ভালো ।।
(আর্কিমিডিসরে চিনছেন তো? ঐ যে, খোলা রাস্তায় ন্যাংটা-দৌড় মারলো... )
যাই হোক, back to হরলিক্স !!
বোতলটার যদি পানিতে ডুবতে হয়, তাহলে তারে পানিকে ‘ঠেইলা সরায়’ ঢুকতে হবে পানির মধ্যে । আর কাহিনী এইখানেই -
আর্কিমিডিস ভাই এর কথা অনুযায়ী, লায়লার ফেলে দেওয়া হরলিক্সের খালি বোতলটা ডুবার জন্য যতটুকু পানিকে ‘ঠেলা মাইরা’ তার জায়গা থেকে সরাবে ততটুকু পানির ওজন খালি বোতল এর ওজন এর থেকে বেশি ।
কিন্তু যদি ভরা বোতলটার কথা ভাবি, সেইটা যদিও লায়লা আপা ফেলবে না, তবুও সেটা পানিতে পড়লেই ডুবে যাবে । কারণ Just উল্টা ।
বোতলের সাইজ যেহেতু এক, তাই ‘ঠেলা মাইরা সরানো’ পানির ওজন একই থাকবে ।
কিন্তু বোতলের ওজন তার থেকে বেশি হওয়ায়, বোতলের সলিল সমাধি ...
চোখটা বন্ধ কইরা শাকিব খানরে এইবার হরলিক্সের বোতল ভাবেন ।
আর ভাবেন, লাইলী আপা চামচে নিয়ে ভেতর থেকে হরলিক্স বের করে শেষ করছে ।
অবশেষে খালি ‘শরীল’টারে ছুইড়া মারলো বুড়িগঙ্গায় …
আশা করি, প্রবাদটার প্রতিকী রূপের পুরা ব্যাখ্যাটা এবার বুঝতে পেরেছেন ।
হুম, ব্যাখ্যা অবশ্যই প্রতিকী ।
কারণ, আমরা সবাই জানি, আসলে কোনও ‘মড়া’ই জলে ডোবে না । সেটা আমার গল্পের প্রেমের মড়া শাকিব খানই হোক, আর জর্জ ডব্লিউ বুশই হোক!! এটাও সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক কারণে ।।
মৃত্যুর পর যেকোন প্রাণীর দেহ পচে যাওয়া পর্যন্ত একটা বড়সড় প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যায় ...
জীবিত অবস্থায় আমাদের শরীরে অক্সিজেন প্রতিমুহূর্তে রক্তের সাথে মিশতে থাকে, কিন্তু মৃত্যুর পর যেহেতু অক্সিজেন প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়, তাই শরীরে শুরু হয় এক ভিন্ন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় শরীরের শর্করা, প্রোটিন, স্নেহ এসব বিভিন্ন গ্যাসে পরিণত হয় ।
আর এইজন্যই মৃত প্রাণীর শরীর একসময় ফুলে উঠতে থাকে । এটি ঘটে পচন ধাপের প্রথম দিকে –
এইখানে তারপর আবার সেই আগের আর্কিমিডিস-থিওরী লাগালেই ভাসার আসল কারণ বোঝা যাবে ... এখানে মৃতদেহকে ফুলে ওঠা বেলুন হিসেবে ভাবতে পারেন চাইলে।
এক্ষেত্রে জেনে রাখুন :
অনেকের ধারণা, কেউ ডুবে মারা যাওয়ার পর ভেসে ওঠে, তার নাক-মুখ দিয়ে পানি ঢুকে পেট ফুলে ওঠে এইজন্য । কিন্তু এটা সঠিক না । আর এর ব্যাখ্যাটাও সোজা- তবে না পারলে কমেন্টে জানাবেন ।।
যাই হোক, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে রেগুলার ডেট করে ‘প্রেমের-মড়া’ হবার দুর্ভাগ্য এখনো হয় নাই। So প্রেমিক-প্রেমিকা ভাই ও বোনেরা সাবধান ...
আর যারা আমার মত brand Single তাদের বলি :
”আসেন ভাই, কোমর দুলায়া নাচি”
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:০১