পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। জ্ঞান পিপাসুদের তৃষ্ণা মেটাতে বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও লাইব্রেরিগুলো ইন্টারনেট ভিত্তিক কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান- নিয়েছে। যেকোনো দেশের মানুষ স্বনামধন্য এই লাইব্রেরিগুলো ব্যবহার করতে পারবে, দেখতে পারবে লাইব্রেরির ক্যাটালগ, স্থাপনা, ছবি, স্ট্যাম্প সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও দুর্লভ বই, জার্নাল।
কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে লাইব্রেরির কার্যক্রম পরিচালনা ও সবার জন্য নির্দিষ্ট ওয়েব ঠিকানায় উন্মুক্ত করে দেওয়াকে ডিজিটাল লাইব্রেরি বলা হয়। সর্বপ্রথম নাসা ১৯৯৪ সালে ই-লাইব্রেরি শব্দটি ব্যবহার করে এবং তাদের নিজস্ব তথ্যগুলো স্ক্যান করে কম্পিউটারে ঢুকিয়ে ডিজিটাল লাইব্রেরি চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর শুধু এগিয়ে চলা সামনের দিকে, বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় লাইব্রেরিগুলো এই আদর্শ পন'াটি গ্রহণ করে। লাখ লাখ বই কম্পিউটারে বসে ঘেঁটে দেখার মজাই আলাদা। তাছাড়া কষ্ট করে ক্যাটালগও খুঁজতে হয় না। মানুষ তার কাঙ্খিত বইটি পড়তে পারে ঘরে বসেই। শুধু তাই নয় বই কেনা, সদস্য হওয়া, একাউন্ট খোলা, ফাইন পরিশোধ করা, অভিযোগ করা ইত্যাদি কাজও ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যায়। এমন কিছু ডিজিটাল লাইব্রেরি নিয়েই এবারের আয়োজন।
ইউনিভার্সাল ডিজিটাল লাইব্রেরি
যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগিমেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে ২০০২ সালে এই লাইব্রেরি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে তাদের বই সংখ্যা ছিল মাত্র এক হাজার, এখন মোট বইয়ের সংখ্যা ১৫ লাখ, যে সব বইয়ের কপিরাইট স্বত্ব মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে সে সব বইও বিখ্যাত লেখকদের ব্যক্তিগত অনুমতি সাপেক্ষে স্ক্যানিং করে এই লাইব্রেরি গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় নতুন করে ১ হাজার বই স্ক্যানিং করে রাখা হচ্ছে এই লাইব্রেরিতে। ২০টি ভিন্ন ভাষায় রচিত বইয়ের সমাহার আছে এই লাইব্রেরিতে। ৯ লাখ ৭০ হাজার চীনা, ৩ লাখ ৬০ হাজার ইংরেজি, ৫০ হাজার তেলেগুতে, ৪০ হাজার আরবি ভাষার বই রয়েছে এখানে। প্রাথমিকভাবে আমেরিকাতে শুরু হলেও এই কার্যক্রম দ্রুত চীন, ভারত ও মিশরে ছড়িয়ে পড়ে। চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এই কাজের উন্নয়নের জন্য এক কোটি ডলার করে সাহায্য দিয়েছে। এগিয়ে এসেছে সার্চ ইঞ্জিন গুগল, ইয়াহু ও সফটওয়্যার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট তবে এ কাজটি সম্পূর্ণ অবাণিজ্যিক। বিষয় ভিত্তিক বই খুঁজে নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। খালি ঘরে বইয়ের নাম অথবা লেখকের নাম লিখে এন্টার দিলেই চলে আসবে কাঙ্খিত বই। বিন্দুর ভিতর এই সিন্দুটিতে ঘুরে আসতে সার্চ করুন http://www.ulib.org এই ঠিকানায়।
উইকিপিডিয়া
উইকিপিডিয়া হল অন-লাইন ভিত্তিক এনসাইক্লোপিডিয়া। এর যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালে। বর্তমানে এটি ওয়েব সাইট ভিত্তিক সবচেয়ে বড় রেফারেন্স ভান্ডার। প্রায় ২৬০টি ভাষায় ১ কোটি প্রবন্ধ রয়েছে এখানে। প্রতি বছর প্রায় ৬৮ কোটি ৪০ লাখ লোক এটি সার্চ করে। ১৫ জানুয়ারি ২০০১ সালে উইকিপিডিয়া যাত্রা শুরু করে বলে দিনটি উইকি দিবস হিসেবে খ্যাত। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন জাপান, চীন, মিশর, ভারত, রাশিয়া তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সেরা নিদর্শনের বিবরণ দিয়ে প্রবন্ধ পাঠাতে থাকে। এটি উইকিপিডিয়া ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে জেমি ওয়েলস-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। নিজ দেশের সর্বশেষ তথ্য জানা থাকলে আপনি নিজেই এডিট করে দিতে পারেন সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধটি। উইকির দুনিয়া ঘুরে আসতে সার্চ করুন http://www.wikipedia.org এই ঠিকানায়।
ব্রিটিশ লাইব্রেরি
১৯৭৩ সালে লন্ডনে দু’টি শাখা নিয়ে এই লাইব্রেরি যাত্রা শুরু করে। ১৯৭২ সালের ব্রিটিশ লাইব্রেরি অ্যাক্ট অনুসারে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৪০টি দেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বই, জার্নাল, ছবি, ডাকটিকেট, রিপোর্ট সংগ্রহ করে এই লাইব্রেরি গড়ে উঠে। বর্তমানে এখানে ২ কোটি ৪০ লাখ বইসহ মোট ১৫ কোটি আইটেম রয়েছে। এতে রয়েছে প্রায় ১ কোটি পত্রিকা, ২ লাখ ভিডিও ও অডিও ক্যাসেট এবং ৭২ হাজার ডাকটিকেট ও পোষ্ট কার্ড।
১৯৯৮ সাল থেকে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ নেট ভিত্তিক বই আদান প্রদান কার্যক্রম চালু করে। বর্তমানে এর ওয়েব সাইটে রয়েছে ২ কোটি বই ও ৩০ হাজার অন্যান্য আইটেম। জ্ঞানের সাগরে ডুব দিতে চাইলে সার্চ করুন http://www.bl.uk এই ঠিকানায়
ওয়ার্ল্ড ডিজিটাল লাইব্রেরি
যে বইগুলো হারিয়ে যাচ্ছে এবং যে বইগুলো পাঠক নন্দিত সে বইগুলো নিয়ে ইউনেস্কো ২০০৩ সালে গড়ে তোলে ওয়ার্ল্ড ডিজিটাল লাইব্রেরি। ৪৫টি সদস্য রাষ্ট্রের জাতীয় লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহ করে এই লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউনেস্কো পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ইউরোপীয় দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে। ২০০৫ সালে সার্চ ইঞ্জিন গুগল এর উন্নয়নে ৩০ লাখ ডলার দান করে। প্রায় সবদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, অর্থনীতি নিয়ে এখানে বই রয়েছে। ২৩ লাখ ডিজিটাল বই ও জার্নালের সমাহার এই লাইব্রেরি ঘুরে আসতে সার্চ করুন http://www.worlddigital library.org এই ঠিকানায়।
ইউরোপিয়ান লাইব্রেরি
ইউরোপীয়রা শুরু থেকেই কপিরাইট ভঙ্গ করে এই ডিজিটাল লাইব্রেরি গড়ে তোলার বিপক্ষে ছিল কিন্তু ২০০০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিক্ষা ও প্রযুক্তি কমিশন একবিংশ শতাব্দীর নতুন এজেন্ডা ঠিক করে যে মেয়াদোর্ত্তীণ বইগুলো কম্পিউটারাইজড করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। প্রথম পর্যায়ে ফিনল্যান্ড, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, পর্তুগালসহ ৯টি দেশ এতে অংশগ্রহণ করে। অবশেষে ২০০৫ সালের ১৭ মার্চ গঠিত হয় ইউরোপীয় লাইব্রেরি। বর্তমানে প্রায় ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের জাতীয় লাইব্রেরি থেকে দুর্লভ বই ও প্রবন্ধ সংগ্রহে কাজ করে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। প্রতি বছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫ লাখ জন এই লাইব্রেরি ভিজিট করে। ১১ লাখ বইয়ের মাঝে হারিয়ে যেতে চাইলে আজই ক্লিক করুন http://www.theeuropeanlibrary.org-তে।
ডিজিটাল লাইব্রেরি অব ইন্ডিয়া
ভারতের প্রযুক্তি নগরী ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনষ্টিটিউট অব সায়েন্স এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে ২০০০ সালে। মানুষকে প্রযুক্তি জ্ঞানে উন্নত করাই এর মূল লক্ষ্য। এই লাইব্রেরিতে ১ কোটি বই রয়েছে। প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য সম্পন্ন বইগুলো ধরে রাখতে এটি সর্বোত্তম পদ্ধতি। লাইব্রেরিটিতে ঘুরে আসতে সার্চ করুন http://www.dlibindia.org-এ।
লাইব্রেরি অব কংগ্রেস
এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় লাইব্রেরি। ওয়াশিংটন ডিসিতে অবসি'ত এই লাইব্রেরিতে ৩ কোটি ১১ হাজার বইসহ মোট ১৩ কোটি ৮৩ লাখ আইটেম রয়েছে। প্রতি বছর এটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ৬শ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয় যার ৬০ শতাংশই ব্যয় হয় কর্মচারীদের বেতনের পেছনে। তাই ১৮০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরির পেছনে ব্যয় রোধ করতে তাকে কম্পিউটারাইজড করার চিন্তা করা হয়। এতে এখন ২৮ লাখ ডিজিটাল বই রয়েছে। আপনার পছন্দের বইটি খুঁজতে লগ ইন করুন http://www.loc.gov.us-এ।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব স্কটল্যান্ড
এটি স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি। ৪৯০টি ভাষায় সমৃদ্ধ ও দুর্লভ বইগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে এই লাইব্রেরি। এতে প্রায় ১৪ লাখ স্ক্যান করা বই ও প্রবন্ধ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ১ লাখের মত দলিলপত্র। তাছাড়া ২০ লাখ ম্যাপ, ২৫ হাজার পত্রিকা রয়েছে এখানে। প্রতি বছর নতুন করে এর সাথে যুক্ত হচ্ছে ৩২ হাজার স্ক্যান করা বই। স্কটল্যান্ডের ১০০ বছরের ইতিহাসের উপর রয়েছে ডকুমেন্টারি ও ১ হাজার ভিডিও ক্লিপ। এই লাইব্রেরি ঘুরে আসতে সার্চ করুন http://www.nls.uk.com -এ।
ইন্টারন্যাশনাল চিল্ড্রেন ডিজিটাল লাইব্রেরি
http://www.en.childrenlibrary.org-এ সার্চ করে শিশুরা চলে যেতে পারে অন্য দুনিয়ায়। প্রায় ৪৯টি ভিন্ন ভাষায় রচিত শিশুদের মজার মজার বই নিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। ১৬৬টি দেশে এই লাইব্রেরির স্টাফরা তথ্য সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছে। এতে প্রায় ৩ হাজার ১১৯টি বই রয়েছে। চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা এর সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
আনুগ্রহপূবক মন্তব্য করুন এবং ভোট করুন।