গড়িচুরি ঠেকাত প্রতিটি যানবাহনে গ্নোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে পুলিশ প্রশাসন। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে আগামীতে দ্রুততম সময়ে চোরাই গাড়ি উদ্ধার থেকে শুরু করে দূর থেকেই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে পরিবহণ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো সুদৃঢ় করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এ প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনাও অনেকাংশেই কমে আসবে।জানা গেছে, গ্নোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহারে গত দু’মাসে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি হওয়া ২৮টি গাড়ি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এরমধ্যে গুলশান-বনানী এলাকা থেকে চুরি হওয়া ১৮টি এবং অন্যান্য স্থান থেকে চুরি হওয়া ১০টি গাড়ি উদ্ধার করা হয়।আর এই সফলতা বিবেচনায় যানবাহনের অবস্থান জানার জন্য ব্যবহৃত জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আলোচনার পাশাপাশি পুলিশি সেবা নিতে যাওয়া লোকজনকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার কাজ শুরু করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পুলিশের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় গাড়ি চুরি বন্ধের ব্যাপারে করণীয় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গাড়িতে জিপিএস স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছেন। সভায় পুলিশ নিজস্ব উপায়ে জিপিএস ব্যবহারে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, রাজধানীতে প্রতি মাসে অর্ধ শতাধিক গাড়ি চুরি হয়। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে গড়ে এর অর্ধেকসংখ্যক গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অটোমেটিক ভেহিকল ট্র্যাকিং ইউনিট চুরি যাওয়া এসব গাড়ি উদ্ধারে কাজ করে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চুরি হওয়া গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং নম্বর প্লেট পরিবর্তন করার কারণে এসব গাড়ি উদ্ধার করতে যেমনটা বেগ পেতে হয়, তেমনি সময়ও বেশি লাগে।কিন্তু গাড়িগুলোতে জিপিএস ব্যবহার করা হলে গাড়ি চুরির সংখ্যা বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিসের প্রধান উপ-কমিশনার। আর চুরি হলেও তা অল্প সময়ের মধ্যেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ভেহিকল ট্র্যাকিং সিস্টেম বা যানবাহনের অবস্থান বের করার ক্ষেত্রে জিপিএস, জিপিআরএস ও জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) একসঙ্গে কাজ করে। এই প্রযুক্তিগুলো আলাদা হলেও তাদের সমন্বিত ফল হিসেবে যানবাহনের সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানা যায়।জানা গেছে, গাড়ির ট্রাকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এর গোপন স্থানে একটি জিপিএস সমর্থক যন্ত্র বসাতে হয়। এই যন্ত্রটি মূলত জিপিআরএসের মাধ্যমে ওয়েবে এবং সংশ্লিষ্ট সার্ভারে বার্তা পাঠায়। জিপিএস প্রযুক্তি জিপিআরএসের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য জিআইএস মানচিত্রে যানবাহনটি কোথায় রয়েছে তা দেখা যায়।এ ছাড়াও যন্ত্রটি গাড়িতে সংযক্ত থাকলে ঘরে বসে গাড়ির গতিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকলে মালিক তা স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনতে পারেন। প্রয়োজনে দূর থেকে গাড়ির ইঞ্জিনও বন্ধ করে দিতে পারেন তিনি। পাশাপাশি গাড়ি চলার সময় ব্যবহৃত তেলের পরিমাণ, তেলের বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য দেয় জিপিএস।
একইভাবে ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোনে এসএমএস ও নির্দিষ্ট কল সেন্টারের মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান জানতে পারেন জিএসএম প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র নয় হাজার টাকা দিয়েই গাড়িতে জিপিএস প্রযুক্তির ডিভাইসটি স্থাপন করা যায়। আর মাসিক ৬শ’ টাকার বিনিময়ে গাড়ির অবস্থান থেকে শুরু করে ঘরে বসেই এর নিয়ন্ত্রণ করার মতো সুবিধা উপোভোগ করতে পারবেন গাড়ি মালিকরা।