নিউজ প্রিন্টের কাগজে লিখা একটা প্রেমের কবিতা বুক পকেটে নিয়ে
হেটে যাচ্ছিলাম শহরের ধার ঘেসে চলে যাওয়া ব্যাস্ত রাস্তার ফুটপাথ ধরে,
সংবাদ পত্রের অফিসগুলো এ মাসে আর কোন লেখা ছাপাবেনা
তাই কবিতাটাকে মানিব্যাগে না চেপে ঘুমন্ত কিশোরীর মত রেখে দিলাম বুক পকেটে।
মধ্যবিত্ত কফি শপের নন এসি কেবিনের ক্লাসিক প্রেমের কবিতা কেউ এখন আর শুনেনা,
পেনিনসুলার ডার্ক রুমে প্রেমিকার বক্ষে রাজটীকা আঁকার গল্পে উৎসুক এখনকার জনতা।
এক রাশ ক্ষোভ নিয়ে ঠোটে সোনালী পাতা চেপে ধরে দু চোখে বন্দী করছিলাম ল্যাম্পপোস্টের দীপন তীব্রতা,
হঠাৎ কেউ যেন পিছন থেকে ডেকে বলল "কোথায় যাচ্ছ খোকা?"
সিনেমাতে যেরকম দেখি পতিতাদের বেশ-ভূশা, ঠিক সেরকমই একটি বালিকা
অথচ তার চোখে মুখে আমি শুধু দেখলাম বয়স বাড়ানোর একটা মিথ্যে প্রচেষ্টা।
বাইশ বছর বয়সের এক দশক যৌবনে এবারই প্রথম চোখের সামনে দেখলাম এক সত্য পতিতা,
আমি বিব্রত, দ্বিধাগ্রস্থ, আর সে তো শুধু নিজের বয়স বাড়ানোর চেষ্টায় ব্যাস্ত।
সোনালী পাতা খসে পড়ল ঠোট থেকে, ভূলে গেলাম বুক পকেটে আমার নিউজ প্রিন্টে লিখা প্রেমের কবিতা।
রিকশা, সাইকেল, গাড়ি সর্বত্র মানুষে ঘেড়া, যেন আমি এক আদিম চিড়িয়া,
লজ্জায় আমার মাথা হেট হবার আগেই জিজ্ঞাসা করে নিল "ভয় কিসের ছোকরা?"
"না ভয় কিসের আর আপনি এতরাতে করছেনই বা কি?"
আমি মুহূর্তেই ভূলে গেলাম মানুষ পাড়ার এই শ্রেনীর কথা,
অনুভব করলাম আমার শার্ট ভিজে গেল ঘামে।
আমার আপাদ মস্তক বারবার দেখে নিল সে, আর মুচকি হাসিতে ফুটপাথের রাস্তা ছিল জেগে,
কেন যেন মনে হচ্ছিল হঠাৎ, আমার সব গোপনিয়তা জেনে গেল নাকি সে?
চলে যাচ্ছিলাম আমি, দেখলাম চেয়ে অনেক মধ্যবয়স্ক লোকেরা ব্যাস্ত রাতের রাণী কিনতে ।
হঠাৎ পিছন থেকে হাত টেনে ধড়ল কে যেন আমার,
আমি পিছন ফিরতেই দেখি অন্ধকার,
রাস্তার সব ল্যাম্পপোস্টের ক্যান্ডেলা পাওয়ার শূন্য,
আমার সোনালী পাতার শিখাও নিশ্চিহ্ন,
আর আমার নিউজপ্রিন্টে লিখা সে প্রেমের কবিতা?
অন্ধকারে কেউ একজন পড়ছে আমার সে কবিতা,
আমার বুক পকেটটা খালি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৫