somewhere in... blog

অবকাঠামো খাতের দুর্নীতি এবং তা প্রতিরোধে করণীয়

০৫ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার এন্টি-করাপশন সেন্টার (জিআইএসিসি) বিশ্বজুড়ে অবকাঠামো খাতে কী করে দুর্নীতি হয় এবং কী করে সেই দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে কাজ করছে| সংস্থাটির ওয়েবসাইটে (http://www.giaccentre.org) এ সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে|

অবকাঠামো খাতে ৬টি পর্যায়ে দুর্নীতি ঘটে থাকে| এগুলো হলো:
•প্রকল্প নির্বাচনের সময়
•প্রকল্পের অর্থায়নের সময়
•পরিকল্পনা এবং ডিজাইন প্রস্তুতের সময়
•প্রাকযোগ্যতা এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময়
•প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়
•পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষনের সময়|

এই ৬টি পর্যায়ের ক্ষেত্রেই দুর্নীতি সংঘটিত হওয়ার বিভিন্ন ধাপের বর্ণনা পাওয়া যায় ওয়েবসাইটটিতে| আর এই দুর্নীতি ঘটনাগুলো কি করে ধামাচাপা দেয়া হয়, সে সবেরও বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে ওয়েবসাইটটিতে|

এছাড়া অবকাঠামো খাতে সার্বিকভাবে ঘুষ, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতির ৪৭টি উদাহরণ দেয়া হয়েছে|

যারা অবকাঠামো খাতের দুর্নীতিতে যুক্ত তারা দু’কারণে দুর্নীতির ঘটনা ধামাচাপা দেয়| প্রথমত: যেন ধরা না পড়ে এবং শাস্তি কি করে এড়ানো যায়| দ্বিতীয়ত: যে কারণে দুর্নীতি করা হয়েছে সেই অভিষ্ট লক্ষ্য যেন অর্জিত হয়| যেমন:
•কাজ পাওয়ার জন্য যে ঘুষ দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই গোপন রাখতে হবে, নয়তো কার্যাদেশ বাতিল হবে|
•দাম বাড়িয়ে কাজ বাগাতে যে ঘুষ দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই গোপন রাখতে হবে, নইলে চুক্তি বাতিল হবে|
•পরিকল্পনার অনুমোদন নিতে যে ঘুষ দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই গোপন রাখতে হবে নইলে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে|

সাধারণত, বেশ কয়েকটি কৌশল ব্যবহার করে দুর্নীতির ঘটনা লুকানো হয়| অবকাঠামো খাতের ঘুষের লেনদেন হয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যেন ঘুষের ঘটনা অনুদঘাটিত থাকে| এই পন্থায় কাজগুলো করা হয় এভাবে:

যে কোম্পানী ঘুষের বিনিময়ে কাজ পেতে চায় সে একজন এজেন্ট নিয়োগ করে এবং সেই এজেন্ট প্রকল্পের মূল মালিকের সাথে যোগাযোগ করে| কাজটি সরকারি পর্যায়ে হলে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে| মূল কোম্পানী উক্ত এজেন্টের সাথে বৈধ সার্ভিস গ্রহণে এক চুক্তি করে| তবে এই বৈধ সার্ভিস বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ভূয়া বা অতিরঞ্জিত হয়ে থাকে এবং এই ধরণের কাজে যে পরিমাণে বাজারমূল্য থাকে, তারচেয়ে উচ্চহারে অর্থ দেয়া হয়| কোম্পানীটি কাজ পাবে এই শর্তে এজেন্টকে অর্থ প্রদান করে| এই টাকার পুরোটা বা আংশিক অর্থ তখন প্রকল্প মালিকের প্রতিনিধি বা সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যিনি কাজ পাইয়ে দেবেন বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন তার হাতে তুলে দেয়া হয়| সাধারণত: অফ-শোর ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় এ ধরণের লেনদেন হয়|

এছাড়া জয়েন্ট ভেঞ্চার, সাবসিডিয়ারী, সাব-কন্ট্রাকটিংয়ের মাধ্যমেও ঘুষের লেনদেন হয় সকল পক্ষের পূর্ণসম্মতিতে| তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষের অগোচরেও ঘুষের লেনদেন হতে পারে| এছাড়া ঘুষ বা প্রতারণার ক্ষেত্রে জাল দলিলের এবং মিথ্যা বিবৃতির ব্যবহার খুবই সাধারণ ঘটনা|

অবকাঠামো প্রকল্পের দুর্নীতি ঠেকাতে প্রজেক্ট এন্টি করাপশন সিস্টেম (PACS) নামে একটি টুলকিট রয়েছে যেখানে ১২টি করণীয় এবং ১০টি টেমপ্লেট পাওয়া যাবে| এছাড়া অবকাঠামো খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের করণীয় ১৫টি কাজের তালিকা রয়েছে| এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
১.দুর্নীতির সঠিক ও নির্ভুল তথ্য দেয়া
২.মানহানির ব্যাপারে সতর্ক থাকা
৩.কাউকে বিপদগ্রস্ত না করা
৪.প্রমাণাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা
৫.বিষয়টি প্রচার করা
৬.প্রকল্পের স্বতন্ত্র মনিটরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের তথ্য জানানো
৭.থানা এবং স্থানীয়/জাতীয় কর্তৃপক্ষকে (দুদক) জানানো
৮.বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে জানানো
৯.দুর্নীতিবিরোধী এনজিওকে জানানো এবং
১০.নির্মাণ কাজ বন্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া|

পদ্মাসেতুকে ঘিরে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে তা থেকে আমাদের সবারই কিছু না কিছু শেখার আছে| তার সূত্র ধরেই এই লেখার প্রয়াস|
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

"মিস্টার মাওলা"

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:০৯


বিটিভিতে খুব সম্ভবত আগে একটি বাংলা ছবি প্রচার করা হতো , নাম 'মিস্টার মাওলা'। নায়ক রাজ রাজ্জাক, অভিনিত ছবির সার-সংক্ষেপ কিছুটা এমন: গ্রামের বোকাসোকা, নির্বোধ ছেলে মাওলা‌। মাকে হারিয়ে শহরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখন বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ কেন উন্নত দেশ হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও (সম্ভবত) হতে পারবে না…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:২২


১. সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে গুটিকয়েক যে কয়েকটি দেশ বিশ্বে স্বাধীনতা লাভ করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭১ সালে এত রক্তের বিনিময়ে যে দেশ তৈরি হয়েছিল, তার সরকারে যারা ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সুনিতা উইলিয়ামস: মহাকাশ অনুসন্ধানে অনুপ্রেরণার যাত্রা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:২৪





সুনিতা উইলিয়ামস কে? যদিও তুমি তোমার পাঠ্যপুস্তকে সুনিতা উইলিয়ামসের কথা শুনেছো, তবুও তুমি হয়তো ভাবছো যে সে কে ?

বিখ্যাত নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামসের ক্যারিয়ার ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেরা, এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ইলন মাস্ক , এসময়ের নায়ক

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:১০




সুনিতা উইলিয়ামদের ফিরিয়ে আনার আসল নায়ক!

৯ মাস! হ্যাঁ, পুরো ৯ মাস ধরে মহাকাশে আটকে ছিলেন নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়াম। একটি কারিগরি ত্রুটির কারণে তিনি পৃথিবীতে ফিরে আসতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পরিপক্কতা বনাম আবেগ: হাসনাত ও সারজিস বিতর্কের বিশ্লেষণ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৪


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্ট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। এই দুই নেতার প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, তারা একই ঘটনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×