somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাদ্য নয় প্রতিদিন বিষ খাই

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে যে ওষুধ বেশি ব্যবহার করা হয়, সেটা হল ভায়াগ্রা… যদিও এর সাইড ইফেক্ট বেশি, কিন্তু কিছু কিছু পুরুষের জন্য এটি বলতে গেলে আশীর্বাদ সরুপ।
গরমের সময় রসালো তরমুজের কোন বিকল্প নেই… বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি গবেষণায় বের করেছেন, এই তরমুজই হল প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা…
কিন্তু আমাদের কপাল সত্যি খারাপ… বাজারে যে তরমুজ পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই ক্ষতিকর… ভোরবেলা তমুজের ভেতর সিরিঞ্জে করে ক্ষতিকর এরিথ্রোসিন বি ও স্যাকারিন পুশ করে লাল ও মিষ্টি বানিয়ে সেই তরমুজ রাস্তাঘাটে বিক্রি করা হয়!
সবচেয়ে পুষ্টিকর খাদ্য হল দুধ… কিন্তু এখানেও ভেজাল।
প্রথমেশ্যাম্পুরসাথে খানিকটা ছানা পানি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ফেনা। এরপর এতে গুঁড়ো দুধ, সয়াবিন, চিনিসহ আরও কিছু রাসায়নিক যোগ করা হয়। আর এই জিনিসটিই বাজারে বিক্রি করা হয় তরল দুধ হিসেবে। এই দুধ গরম করলে যাতে ফেনা হয় সেজন্য মেশানো হয় আরেক ধরনের কেমিকেল। মেশিনেও ভেজাল ধরা পরে না।
মুরগীর মাংশ বিশেষ করে ভুনা, ফ্রাই, রোস্ট বা গ্রিল আমাদের সবারই প্রিয়... কিন্তু এসব মুরগীকে কি খাওয়ানো হয়?
আগে মুরগির প্রোটিন খাবার হিসেবে বিদেশ থেকে আমদানি করা হত মিট এবং বোন মিল। আর এখন?
বিভিন্ন ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়জাত করা হয় বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে। প্রক্রিয়াজাত করার পর যে বিষাক্ত বর্জ্যগুলো বের হয়, সেগুলোই কম মুল্যে বিক্রি করে তৈরি করা হয় মাছ ও মুরগির খাদ্য! নামীদামী সকল পোল্ট্রি খামারই এগুলো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে।
এরফলে শুধু মুরগির মাংশেই নয়, ডিমেও এখন বিষাক্ত ক্রোমিয়াম ও শিশা পাওয়া যাচ্ছে। আর হোটেলে সাপ্লাই করা রোগে মরা মুরগির গ্রিল এর কথা আর নাই বা বললাম... এজন্য আমার যেকজন বন্ধু পশু চিকিৎসক আছে, তারা কখনই পোল্ট্রি মুরগি খায় না।
চিনি দেওয়া সাবান পানির ভেতর সেভলন দিয়ে ঝাজ এনে তৈরি হচ্ছে নকল কোক... সেটা আবার পুরাতন ব্যবহৃত কোকের বোতলে ভরে নতুন সিল মেরে অনেক দোকানে বিক্রিও হচ্ছে।
বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ডের কসমেটিকসগুলো এখন তৈরি হচ্ছে ঢাকার চকবাজারে..... ল্যাকমি, ইউনিলিভার থেকে শুরু করে দেশি বেদেশি সকল কসমেটিকসের হুবুহু নকল সব... এমনকি এসব নকল প্রোডাক্ট দোকানদাররাও চিনতে পারেনা... অনেক নামীদামী দোকানেও তা আসল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে... আর এতে বাড়ছে ত্বকের ক্ষতির পাশাপাশি নানারকম চর্ম রোগ... এমনকি স্কিন ক্যান্সারও!
সামনেই আসছে মধু মাস… আম, জাম, কলা, আনারস ও অন্যান্য ফল দিয়ে বাজার ভরে যাবে… কিন্তু এই ফলগুলোর বেশিরভাগই পাকানো হয় বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে!
টোস্টসহ বেকারি সামগ্রি তৈরি করা হয় বিষাক্ত সাইক্লোমেট দিয়ে। বিভিন্ন শিশুখাদ্য, চকোলেট কিংবা ক্যান্ডিতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রঙ ও ট্যালকম পাউডার। দই তৈরি হচ্ছে টিস্যু পেপার দিয়ে।
বেশি দামে বিক্রি করার জন্য মোটা চাল মেশিনে চিকন করে ইউরিয়া মিশিয়ে সাদা করা হচ্ছে। মুড়িতেও ইউরিয়া মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে অহরহ।
নামীদামী সকল কোম্পানি বিভিন্ন জুস তৈরিতে ব্যবহার করছে মিস্টি কুমড়া, পানি, রঙ আর নানা রকম কেমিক্যাল... এরপর বিভিন্ন ফলের কৃত্রিম ফ্লেভার যোগ করে বাজারে ছাড়ছে।
মাছ ফল সংরক্ষণ করতে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর ফরমালিন। বরফ পানিতে ফরমালিন মিশিয়ে মাছ হিমায়িত করা হচ্ছে। ফলে কিট দিয়ে পরিক্ষা করেও তাতে ফরমালিন ধরা পড়ছে না।
আগে আসল চেরি ফল পাওয়া যেত। আর এখন করমচা ফল ক্ষতিকর রঙ লাল রঙ মিশ্রিত চিনি পানির ভেতর ডুবিয়ে রেখে সেটাকে চেরি ফল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
রাস্তাঘাটের ধারে যেসব ভাজাপোড়া দোকান আছে, তারা কোনদিন কড়াইয়ের তেল পাল্টায় না… বিষাক্ত পোড়া তেলের মধ্যেই আবার নতুন তেল যোগ করে ভাজাপোড়া জিনিস বানায়… অনেক জায়গায় তো পোড়া মোবিল দিয়ে ভাজা হয় চানাচুরসহ বিভিন্ন খাবার…
সারাদেশেই এই অবস্থা... জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরীক্ষাগারে পাঠানো বিভিন্ন ভোগপণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ ভাগই ভেজাল পাওয়া গেছে।
এগুলো খেয়েও যে বেঁচে আছি আমরা, সেটাই একটি বিস্ময়!! সৃষ্টিকর্তা সত্যি যে আছেন, সেটা আমাদের দেশে থেকেই কেবল বুঝা যায়। মাঝে মাঝে মনে হয় দেশ ছেড়ে চলে যাই!
অবস্থা এমন যে স্লো পয়জনে গণহত্যার জন্য যেন সবাই নতুন নতুন পদ্ধতি আবিস্কারে ব্যস্ত…
এটি দুর্নীতির চেয়েও ভয়াবহ, খুন ডাকাতির চেয়েও মারাত্মক... অথচ এই বিষয়গুলো কখনোই সিরিয়াসলি দেখা হয় না। মিডিয়াতে আসলে হয়তো কিছুদিন একশন চলে, কিন্তু কয়দিন পর আবার একই কাহিনী।
এখন উপায় একটাই, এর বিরুদ্ধে স্পেশাল ও স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠন করে নিয়মিত অভিযান ও মনিটরিং করতে হবে... আর শাস্তি হতে হবে মৃত্যুদণ্ড... কারন যারা খাদ্যে বিষ মেশায়, তারা খুনি... তবে খুন করেে ধীরে ধীরে... হার্ট এটাক, ক্যান্সার, স্ট্রোক নাম দিয়ে।
আমরাই মনে হয় একমাত্র জাতি যারা বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন খাদ্য নয়, বিষ খাই... এখনই যদি এগুলো না বন্ধ করা হয়, খুব বেশিদিন আর নেই, সমগ্র জাতি হঠাৎ করে একদিন পঙ্গু জাতিতে পরিনত হবে।


Ctd.: Taraki Hasan Mehedi
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৪৫
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দীপনের দীপ নেভে না

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯


ছবিঃ সংগৃহীত
আজকে সামুর অন্ধকার ব্লগার নামে খ্যাত ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃত্যু দিবস। ২০১৫ সালে আজকের এই দিনে জঙ্গি হামলায় দীপন মারা যান নিজ প্রকাশনীর কার্যালয়ে । যে ছেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×