ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমাকে যদি একটি বইয়ের কথা জানাতে হয় তাহলে তা হবে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম লিখিত একাত্তরের দিনগুলি।“
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লেখা ডায়রি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল। ১৯৮৬ সালে ডায়রিটি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালের ০১ মার্চ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত লেখা এই ডায়রিটিতে মুক্তিযুদ্ধে অবরুদ্ধ ঢাকার অবস্থা, পাকহানাদার ও রাজাকারদের গনহত্যা আর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতার কথা কথা উঠে এসেছে একেবারে বাস্তবতার জায়গা থেকে। সাথে যুদ্ধের মধ্যে বসবাস করা একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সত্য গল্প। যুদ্ধের মধ্যে তাদের জীবন যাপনের গল্প।
বিজয়ের মাস উপলক্ষ্যে জাহানারা ইমামের ডায়রির ০১ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে প্রিয়.কম-এ।
(প্রিয়.কম-এ প্রকাশিত লেখায় একটা ‘মজার’ ব্যাপার আছে। প্রেম বিষয়ে একটি লেখায় যেখানে ৫০০ টি বা তার বেশি লাইক-শেয়ার পায়, সেখানে জাহানারা ইমামের ডাইরি লাইক-শেয়ার পায় ৫ টা বা তারও কম। চেতনারে চেতনা ... মুক্তিযোদ্ধাদের গিলায় গিলায় রক্তদান শুকনা বালিতে শুকায়া যায় ... )
তারপরও লিংক দিলাম, কারও ইচ্ছা হইলে যাইয়েন, দেইখেন, পইড়েন ...
০১ ডিসেম্বর ১৯৭১, বুধবার - http://www.priyo.com/2013/11/30/43231.html
এখন শীত এসে গেছে। গরম কাপড় দরকার। শরীফ বলেছে খুব ছোট ছোট প্যাকেট করতে। যাতে ছেলেদের নিতে সুবিধে হয়। যাতে কেউ সন্দেহ না করে। তাই আমি খুব ছোট ছোট প্যাকেট করি– একটা সোয়েটার, একটা মাফলার, একজোড়া মোজা। অবশ্য মোজা যে খুব কাজে লাগে, তা নয়। বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধার জুতোই নেই। তবুও মোজা দিই। অন্তত নিজেকে তো ভোলানো যায়– আমার ছেলেরা এই শীতে জুতো-মোজা পরে যুদ্ধ করছে।
০২ ডিসেম্বর ১৯৭১, বৃহস্পতিবার - http://www.priyo.com/2013/12/02/43456.html
আতিকুল ইসলামের সাথে ফোনে কথা হল দুপুরে। ওর কিছু ওষুধের প্যাকেট নিয়ে যাবার কথা ছিল। ও-ও জানাল বেশ কিছুদিন হয় ওর কাছেও কেউ আসছে না। আমি বললাম, ‘অন্তত আমার কাছ থেকে প্যাকেটগুলো নিয়ে তোমার বাসায় রাখ। হঠাৎ এসে পড়লে যাতে দিতে পার।
০৩ ডিসেম্বর ১৯৭১, শুক্রবার - http://www.priyo.com/2013/12/02/43519.html
দেশের আবহাওয়া বড়ই উত্তপ্ত। চারধারে বর্ডার ঘিরে যুদ্ধও বেশ জোরেশোরে লেগেছে। সবগুলো খবর কাগজে মোটা হেডলাইন দিয়ে পূর্ব পাকিস্থানের বিভিন্ন সীমান্তে ‘ভারতের আক্রমণের’ নিন্দাসূচক খবর ফলাও করে বেরোচ্ছে। আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার, আকাশবাণী, বিবিসি’র খবর শুনে সব খবর চালাচালি করে বুঝে নেই মুক্তিবাহিনী কোথায় কতটা এগোচ্ছে, পাকবাহিনী কোথায় কতটা মার খাচ্ছে।
০৪ ডিসেম্বর ১৯৭১, শনিবার – http://www.priyo.com/2013/12/02/43578.html
গতকাল বিকেল সাড়ে চারটেয় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পশ্চিম পাকিস্থানের শিয়ালকোট,চাম্ব, লাহোর, রহিমইয়ারখান,পুঞ্জ,উরি সেক্টর– এসব জায়গায় স্থল ও বিমান আক্রমণ শুরু করেছে। অল ইন্ডিয়া রেডিও অবশ্য বলেছে, পাকিস্থানই প্রথম আক্রমণ করেছে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায়। কে কার বিরুদ্ধে ‘প্রথম’ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তা নিয়ে মতদ্বৈধতা থাকলেও ‘যুদ্ধ’ যে লেগেছে তাতে কোনই সন্দেহ নেই। জলজ্যান্ত প্রমাণঃ ঢাকার আকাশে ভারতীয় বিমানের কর্ণবিদারী আনাগোনা।
০৫ ডিসেম্বর ১৯৭১, রবিবার - http://www.priyo.com/2013/12/05/43952.html
গতকালই দু’দিনের মত বাজার করে বুড়া মিয়া সব রেঁধে রেখেছে। গত তিন চার মাস থেকে এরকমই করা হয়। ফ্রিজে প্রচুর রান্না করা খাবার থাকে। কারণ, প্রায় প্রায়ই ‘অনাহূত’(কিন্তু অতি-বাঞ্ছিত)অতিথি এসে পড়ে। আমরা জানি, তারা দিনে রাতের যে কোন সময় এসে পড়তে পারে। এসে পড়লে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তাদেরকে পেট ভরে খাইয়ে দেওয়াটা আমাদের কর্তব্য। তাই ফ্রিজে সব সময় রান্না করা খাবার মজুত,মিটসেফে বিস্কুট,রুটি,মাখন,পনির।
০৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, সোমবার - http://www.priyo.com/2013/12/05/44095.html
জামীর উত্তেজিত গলা একটু চড়ে গেল, পরিষ্কার শুনতে পেলাম, ‘তাতো বুঝলাম, কিন্তু আর্মস আসবে কোত্থেকে?’
আমি কাজ ফেলে ওদিকে চলে গেলাম। ‘কিসের আর্মস? কি জন্য? আমাকে একটু বল না।’
‘তোমাকে তো বলতেই হবে। জামী আর আমি হিসাব করছিলাম আর ক’দিন আন্দাজ লাগতে পারে ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর এসে পৌঁছাতে। তখন কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তখনকার জন্য তৈরি হতে হবে এখন থেকেই।’
০৭ ডিসেম্বর ১৯৭১, মঙ্গলবার - http://www.priyo.com/2013/12/07/44123.html
"ভারত আজ বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।-দৈনিক ইত্তেফাকের খবরটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম। বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশ। একটি স্বাধীন জাতি। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। রুমী এখন কোথায়? তাকে পাক আর্মি বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে, এটা সমর্থিত খবর। কিন্তু তাকে মেরে ফেলেছে কিনা এটার কোন সমর্থিত খবর তো আজো পাই নি।"
০৮ ডিসেম্বর ১৯৭১, বুধবার - http://www.priyo.com/2013/12/08/44124.html
আজ আবার রেডিওতে বলল, সন্ধ্যা পাঁচটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কারফিউ এবং ব্ল্যাক আউট – পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। ছিলই তো বাপু সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত কারফিউ, আবার নতুন করে এত ঘোষণা দেয়ার কি আছে? সন্ধ্যাও আজকাল পাঁচটাতেই হয়। এদের দেখছি মাথার ঘায়ে কুকুর পাগলের মতো হয়েছে।
০৯ ডিসেম্বর ১৯৭১, বৃহস্পতিবার - http://www.priyo.com/2013/12/06/44125.html
আমাদের চেনাজানা সবাই ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে রাখছে। আর ন্যাশনাল ডিফেন্স সার্টিফিকেট ব্যাংকে জমা রেখে তার বদলে টাকা ‘ধার’ নিচ্ছে। সবাই বলছে, কখন কি হয়, শেষে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারি কিনা। ব্যাটাদের দিন তো ঘনিয়ে এল। হয়তো বা যাবার আগে ব্যাংকের সব টাকাও জ্বালিয়ে দিতে পারে, প্লেনে করে ওদিকে নিয়েও যেতে পারে। তার চেয়ে যতটা পারা যায় নগদ টাকা কাছে থাকুক। কিন্তু এত টাকা ঘরে রাখাও তো খুব সহজ নয়। যে কোন সময় পাক আর্মি বাসায় ঢুকে সার্চ করে নিয়ে যেতে পারে।
১০ ডিসেম্বর ১৯৭১, শুক্রবার - http://www.priyo.com/2013/12/09/44651.html
আমি বললাম, ‘রাস্তায় দেখলাম লোকজন সব ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।’
এ. কে. খান বললেন, ‘ঢাকায় জোর গুজব, মুক্তিযোদ্ধারা নাকি ঢাকার সিভিলিয়ানদের শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছে – এখানে নাকি খুব ফাইট হবে?’
হোসেন সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কিছু বলেছে এ বিষয়ে?’
‘সে রকম ঘোষণার মত করে বলে নি। তবে কথিকায়, চরমপত্রে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেছে।’
১১ ডিসেম্বর ১৯৭১, শনিবার - http://www.priyo.com/2013/12/10/44667.html
আজ হঠাৎ বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে কারফিউ! না জেনে নিশ্চিন্তে বাজার করে পৌনে চারটেয় বাসায় ফেরার পথে দেখি লোকজন, রিকশা উর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে...আজকের দৈনিক পূর্বদেশে একটা খবর পড়লামঃ লাকসাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, সিলেট, হালুয়াঘাট, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও খুলনায় প্রচন্ড লড়াই। এর চেয়ে ডবল মোটা হেডিং দিয়ে তার নিচেই আবার লেখাঃ স্থলে-জলে অন্তরীক্ষে হানাদার বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।